ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ’র ‘অ্যাকশন’ শুরু
প্রকাশিতঃ 10:49 am | March 07, 2019
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
তিনি বঙ্গবন্ধুর নিজ জেলার সন্তান। বঙ্গকন্যা, বিশ্বনেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গভীর সান্নিধ্যে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি একজন কোরআনের হাফেজ থেকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। দায়িত্ব নিয়েই হজ যাত্রীর কান্না আর দেখতে চান না বলে মত দিয়েছিলেন।
পাশাপাশি নিজে দুর্নীতি করবেন না এবং অন্য কাউকে দুর্নীতি করতে দিবেন না বলেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। শুরুতেই হয়তো অনেকেই ভেবেছিলেন এটা একজন রাজনীতিক হিসেবে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র ‘কথার কথা।’ কিন্তু সময় গড়াতেই এই প্রতিমন্ত্রী মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা কথার বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছেন।
হজ ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের মাধ্যমে পুরোপুরি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন শেখ আব্দুল্লাহ। আর হবেনই বা না কেন? নিজ দলের সাবেক মন্ত্রীর জামানায় বর্তমান প্রতিমন্ত্রী নিজেই হজে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন। ফলে সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও নিষ্কন্টক হজ উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নকেই নিজের প্রথম কাজ হিসেবে আন্তরিকতার সঙ্গেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।
অবশ্য এরচেয়েও বড় কথা হজ যাত্রীদের চোখের পানি আর যেন না পড়ে সেজন্য রীতিমতো ‘অ্যাকশন’ শুরু করে দিয়েছেন এই মন্ত্রণালয়ের পবিত্রতা রক্ষার শপথ করা প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ। আর তাঁর এই প্রশংসিত কর্মযজ্ঞে অবশ্য মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে প্রতারক হজ এজেন্সিগুলোর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পবিত্র হজ পালনের সময় বিভিন্ন এজেন্সি প্রতিশ্রুতি দিয়েও হজযাত্রীদের নির্দিষ্ট মানের ও দূরত্বের বাড়িতে না রাখা, মিনা আরাফায় যানবাহনের ব্যবস্থা না করা এবং পচা বাসি খাবার সরবরাহসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যেই কমপক্ষে পাঁচটি এজেন্সির হজ লাইন্সেস বাতিল, স্থগিত, জামানত বাজেয়াপ্ত, কারণ দর্শানো ও তিরস্কারের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
একই সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর পুরান পল্টনের কেরানীগঞ্জ হজ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরসের (লাইসেন্স নম্বর ৩৬৭) তিন বছরের জন্য লাইসেন্স বাতিল করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। মৌরি এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নং ২৭২) ও আবাবিল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরের (৩৭৮) হজ লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
একই ধরনের অপরাধে সালওয়া ওভারসিজ লিমিটেড (লাইসেন্স নং ২৬৭), সামিট এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নং ৫৫৮) ও ব্লু স্কাই এয়ারওয়েজের (লাইসেন্স নং ৭০৪) লাইসেন্স বাতিল ও জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। পটুয়াখালী ট্রাভেল এয়ার সার্ভিসেসের লাইসেন্স (নম্বর ১০৯৯) সাময়িকভাবে দুই বছরের জন্য বাতিল ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
রাজধানীর পুরানা পল্টনের আফতাব ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনালের লাইসেন্স (নং ০৫৮৪) বাতিল ও জামানতের টাকাও বাজেয়াপ্ত করেছে মন্ত্রণালয়। যশোরের রহমানিয়া এয়ার ট্রাভেলসকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে তিরস্কার ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
রাজধানীর রামপুরার বেসরকারি হজ এজেন্সি এগারসিন্ধুর ট্রাভেলস লিমিটেডের (লাইসেন্স নং ৭৫০) বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি ও এই সময়ের মধ্যে টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত বছর হজ ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণকারী মেরাজ এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে (লাইসেন্স নং ২৫৩) তিরস্কার ও সতর্ক করেছে মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অতীতে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর স্বজনরা হজ এজেন্সি নিয়ন্ত্রণ করতেন। পছন্দের হজ এজেন্সিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতো। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের পুত্র বা পিএস-এপিএসরা এসব করে আঙুল ফুলে বটগাছও হয়েছেন। কিন্তু সব সময় দুর্নাম হয়েছে সরকারের।
ফলে এবার এসব বিষয় মাথায় রেখেই বঙ্গকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজিয়েছেন। একজন কোরআনের হাফেজকে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব নিয়েই আশাবাদী বক্তব্য এবং ইতিবাচক কর্মকান্ডের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের চিড় ধরা ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করার প্রয়াস নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাজিদের দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী এজেন্সির বিষয়ে অনেক কঠোর। এই বিষয়ে তাঁর অবস্থান জিরো টলারেন্স। অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ উঠা এজেন্সিগুলোকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে তিনি সত্যি সত্যিই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিষ্কন্টক হজ উপহার দিতে সক্ষম হবেন।
সূত্র জানায়, শেখ আব্দুল্লাহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জের আসনে উন্নয়নসহ নানা কাজের তদারকি করেন তিনি। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রধান নির্বাচনী পরিচালনাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। রাজনীতিতে হাতেখড়ি খুলনার আজম খান কমার্স কলেজে অধ্যয়নের সময়েই। ওই কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি।
ছাত্রত্ব শেষে শ্রমিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে দায়িত্ব নেন গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রথমে সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। শিক্ষাজীবন শেষে চাকুরিতে যোগ দিতে চাইলেও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় রাজনীতিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দলের কঠিন দু:সময়ে হাল ধরেন। তিনি টানা চার মেয়াদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
শুধু তাই নয়, নির্বাচনের আগেভাগে হেফাজতসহ অন্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে নিজ দল আওয়ামী লীগের দূরত্ব কমিয়ে আনতেও প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেন তিনি। কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়েও তার কাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন আলেম সমাজ।
কালের আলো/ওএইচ/এএ