অন্তর্বর্তী সরকারে অটুট জনআস্থা  

প্রকাশিতঃ 10:51 pm | November 16, 2024

মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড.ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরপর শুরু হয় নতুন এক বাংলাদেশের যাত্রা। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে ধারন করে ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার ১০০ দিন পূর্ণ করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পাশে ঠিকমতো দাঁড়াতে না পারাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা সরকারের প্রধান ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং দৈনন্দিন দরকারি পণ্যের দাম যাতে যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে, সেজন্য বাজার তদারকি করতে জেলায় জেলায় বিশেষ টাস্কফোর্স কার্যকর করেছে সরকার। বাজারে পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখা ও দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার কার্যকর কৌশল না থাকার সুযোগ নিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়াও বাগে আনতে পারেনি। এখনও বিলোপ ঘটাতে পারেনি ফ্যাসিবাদের।

মানুষের অনেক রকমের আকাঙ্ক্ষা আর প্রত্যাশা পূরণে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পাওয়া অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে দশটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে কমিশনগুলো। সেই রিপোর্টগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে সরকার। গত তিন মাসেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে সরকার স্মুথ ট্রানজিশন; ভঙ্গুর অবস্থা থেকে অর্থনীতি উদ্ধার; ব্যাপক বৈশ্বিক সহায়তাপ্রাপ্তি; সংস্কারের পথরেখা দেওয়া এবং সমস্যা থেকে দেশকে উত্তরণের দিকে নিয়ে যেতে সফলতার পরিচয় দিয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান প্রশংসা কুড়িয়েছে। সরকারের কোন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। সবমিলিয়ে সরকারের প্রতি জনআস্থা অটুট রয়েছে।

যেসব ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার
গত ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনে সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সফল হয়েছি। সরকারের সময়োপযোগী ও বিচক্ষণ পদক্ষেপের ফলে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ রয়েছে।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পুলিশের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে এই পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার ৪২ জন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে এবং গত তিন মাসে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক থেকে কনস্টেবল পদে ১ হাজার ৩৩০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন।

  • বাজার তদারকি করতে জেলায় জেলায় বিশেষ টাস্কফোর্স কার্যকর
  • দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান প্রশংসা কুড়িয়েছে
  • অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ সংশোধনের উদ্যোগ
  • সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রোধ করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত
  • পলিথিনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি
  • শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন

এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, স্বল্পতম সময়ে সারাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলোকে সফলভাবে পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর হতাশ হয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের মানসিকভাবে শক্তিশালী ও সক্রিয় করেছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করছে। এছাড়া দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তার জন্য সেনা, নৌ ও বিমান এই তিন বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.  আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ কালো আইন খ্যাত আইনগুলো বাতিলে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ আইনের খসড়া প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে গত ৩ অক্টোবর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অধঃস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। বিগত আওয়ামী সরকারের দায়ের সন্ত্রাস দমন আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সরকারের ১০ দিনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো.নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে ইতিবাচক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রোধ করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল, সাংবাদিকদের বেতন কাঠামোতে যৌক্তিক সংস্কার আনার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো পর্যালোচনা এবং আর্থিক সংকটে থাকা সাংবাদিক, গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবার ও আহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয় গত পহেলা জুলাইয়ের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা পর্যালোচনার জন্য ৮ সদস্যের কমিটি গঠনের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদ সাংবাদিকদের তালিকা তৈরি করে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ইতোমধ্যে ৩৫০ সাংবাদিককে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে এবং সাংবাদিকদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।

ক্ষমতা নেওয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দুর্নীতির অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শতাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের প্রায় সবার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সরকার আওয়ামী লীগের দলীয় দিবস বলে পরিচিত আটটি জাতীয় দিবস বাদ দিয়েছে। দিবসগুলো হলো- ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস ও ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস। এর আগে শোক দিবসের সরকারি ছুটিও বাতিল করে সরকার। এদিকে এ দিবসগুলো বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসগুলো জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো জাতীয় দিবস হওয়ার মতো নয়।’

সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সফল হয়েছে
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির দাবির মুখে  আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে গত ২৩ অক্টোবর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িতসহ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ক্ষমতাবলে, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিজের দায়িত্ব পালনে রীতিমতো চমক দেখিয়েছেন। পলিথিনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। গত ১ অক্টোবর থেকে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও ৩ নভেম্বর থেকে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ৩ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন বিক্রি করার দায়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, সদর দপ্তরের তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় ১১টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করে আদায়সহ ৩ হাজার ৯৭৪ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়।

জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হর্ন বন্ধে কাজ করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যানবাহনের হর্ন বন্ধ করতে ১ অক্টোবর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দরের দক্ষিণ দিকে লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে উত্তর দিকে স্কলাসটিকা ক্যাম্পাস পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তায় হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব এলাকা হর্ন মুক্ত এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভ্যন্তরে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধকরণে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ও সব রকম পলিথিন ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

শব্দ দূষণ বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও শাস্তির ব্যবস্থা
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশনায় বন বিভাগ আর ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ রোপণ করবে না। রাস্তার পাশে সামাজিক বনায়নের জন্য লাগানো ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি ছাড়া অন্য গাছ সংরক্ষণ করতে বন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া লাঠি টিলা, চুনতি, সাতছড়ি ও লাউয়াছড়ার জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এসব বনভূমিতে ইকো-ট্যুরিজম ও পিকনিক বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষা, বন সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় শুরু থেকেই উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম পরিচালনা করছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তিনি এ সময়টিতে শুধু পরিবেশ রক্ষায় নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই বাংলাদেশ নির্মাণের ভিত্তি তৈরি করছেন।

আবার, শব্দদূষণের বিরুদ্ধেও লড়াই শুরু করেছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, ‘শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে আমাদেরকে লড়াই করতে হবে। বাংলাদেশ শব্দ দূষণের পৃথিবীতে এক নম্বর অবস্থানে আছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছি কিন্তু এরকম একটি অসভ্য প্র্যাকটিস (অনুশীলন) চালু রাখবো সেটি হতে পারে না। অন্তত শহরগুলোতে শব্দ দূষণ বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ সাবেক সরকারের সুবিধাভোগী দলগুলো বাদে ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠক করেছেন। সরকার প্রথম দিকে একটি বৈঠকে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানালেও পরবর্তীকালে ছাত্র-জনতার বিরোধিতার মুখে দলটিকে দ্বিতীয় দফার সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।  প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে- রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের সংলাপ ধারাবাহিক এবং এই সংলাপ অব্যাহত থাকবে।

মোটাদাগে তিন মাসে সরকার যথেষ্ট অর্জন করেছে
শকিকুল আলম
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

নানাবিধ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সরকারের
ড.ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর থেকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, সেই সঙ্গে আহত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে বড় বড় ঋণখেলাপি ও লুটেরা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দখল থেকে মুক্ত করে পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন, দুর্নীতি ও অর্থপাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেড়শ ব্যক্তির তালিকা তৈরি ও অনুসন্ধান, ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল,  দায়মুক্তি আইন নামে পরিচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন চলমান সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা, গণশুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক উদ্দেশে নেওয়া প্রকল্প কিংবা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে— এমন প্রকল্প পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ‘আ নিউ এরা ইন বাংলাদেশ? দ্য ফার্স্ট হানড্রেড ডেজ অব রিফর্ম’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়— ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুব সহজ নয় বলে উল্লেখ করে ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা আইসিজি। তারা রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি, জনগণের প্রত্যাশা ধরে রাখা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক সমর্থন সংহত করা, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংস্কারসহ জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে নানা সংস্কার বাস্তবায়নে কিছু সুপারিশ করেছে।

জনগণ এখনো সরকারের প্রতি আস্থা রেখেছে
আবু বাকের মজুমদার
সমন্বয়ক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন

এর আগে সরকারের তিনমাস পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শকিকুল আলম বলেছিলেন, মোটাদাগে তিন মাসে সরকার যথেষ্ট অর্জন করেছে। পাঁচটি বড় কাজ হয়েছে। একটি হলো স্মুথ একটি ট্রানজিশন (শান্তিপূর্ণভাবে পরিবর্তন) হয়েছে। দুই. একটি ভঙ্গুর অবস্থা থেকে অর্থনীতি উদ্ধার হয়েছে। তিন. ব্যাপক বৈশ্বিক সহায়তা পাওয়া গেছে। চার. সংস্কারের পথরেখা দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ হবে, তখন সংস্কার কতটুকু করা হবে এবং সেটার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের তারিখ। পাঁচ. এই তিন মাসে বন্যা, গার্মেন্টসে অস্থিরতাসহ অনেকগুলো সমস্যা ছিল। সেসব সমস্যা থেকে দেশকে উত্তরণের দিকে নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি এই সমস্যাগুলো কতটা ভালোভাবে মোকাবিলা করা যায়।’

জনগণ এখনো সরকারের প্রতি আস্থা রেখেছে বলে মনে করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘গত ১০০ দিনে এ সরকারের কাছে মানুষের আশা অনেক বেশি তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী কাঠামো অনেক জায়গায় রয়ে যাওয়ায় সরকারের জন্য কাজ করাও কঠিন ছিল। তবে জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা রাখছে। তারা শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষার শেষ ভরসাস্থল হিসেবে ছাত্রদের ও অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখছে।’

কালের আলো/এমএসএকে/এমএএএমকে