মুশকিলে স্বর্ণের ক্রেতা-বিক্রেতারা 

প্রকাশিতঃ 12:34 pm | November 17, 2024

রাইসুল ইসলাম খান, কালের আলো:

উপমহাদেশে বিয়ের গহনা হিসেবে প্রাচুর্যের প্রতীক স্বর্ণ। স্বর্ণের গহনা ছাড়া বর্তমান সময়ে বিয়ের অনুষ্ঠান কল্পনাই করা যায় না! মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্তের বিয়েতেও কনের অলঙ্কার হিসেবে ন্যূনতম দুয়েক ভরি গহনা কেনার রেওয়াজ আছে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এমনিতেই নিত্যপণ্যের দামে দৈনন্দিন বাজেট মেলাতে হিমশিম অবস্থা সাধারণ মানুষের। তারওপর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এ অবস্থায় গহনা কেনার বিলাসিতায় কতজন করতে পরবেন সেটা নিয়ে মাথাব্যথা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের।

অনেকেই বলছেন, স্বর্ণের বাড়তি দাম চলে যাচ্ছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ফলে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বিয়ের বাজেটে। যদিও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জানায়, সবশেষ টানা ৪ দফায় ভরিতে মোট দাম কমানো হয়েছে ৯ হাজার ১৭ টাকা। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০৯ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৬২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯০ হাজার ২৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে স্বর্ণ কেনা অনেকটাই গরিবের ঘোড়া রোগ হিসেবে রূপ নিয়েছে।

রাজধানীর তাঁতিবাজার এলাকায় একটি স্বর্ণের দোকানে কথা হয় জুলহাস ইসলাম নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। গজর গজর ভঙ্গিতে তিনি বলেন, ‘মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পর্যায়ে বর্তমান সময়ে এসে বিয়ের ক্ষেত্রে কনেকে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ ভরি স্বর্ণ দেয়া লাগে।’ আগামী ফেব্রুয়ারিতে মেয়ের বিয়ে। বর্তমানে স্বর্ণের ভরি ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এতে মজুরিসহ এক ভরি স্বর্ণের গহনার দাম পড়ে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো। এতো টাকা গহনার পেছনে খরচ করলে বাকি অনুষ্ঠান কীভাবে করবেন তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।

স্বর্ণের আকাশছোঁয়া দামে মাথায় হাত পড়েছে সমাপ্তি সাহার (২৮)। তাঁর বিয়ে আগামী ডিসেম্বরে। কিন্তু কেনাকাটা করতে গিয়ে স্বর্ণের দাম শুনে মাথায় হাত পুরান ঢাকার এই বাসিন্দার। তিনি স্বর্ণের বদলে মাটির গহনায় বিয়ের পিড়িতে বসতে চান। তাঁর মতে, এটি ফ্যাশনের দিক থেকেও বৈচিত্র্যময়।’

জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা বছরের বিক্রির একটি বড় অংশ হয় নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসে, মানে বিয়ের মৌসুমে। কিন্তু এবার বেচাবিক্রি প্রত্যাশার অর্ধেকও পূরণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

পুরান ঢাকার আরেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিন্টু দাস (৫৫) জানান, বর্তমানে বাজারে স্বর্ণের দাম বেশ চড়া। ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে সীতাহারজাতীয় গহনার দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকায় শুরু হয়। বিয়ের জন্য সীতাহারের পাশাপাশি হাতের কাঁকন, গলার চেইন, মাথার টিকলি-টোপর, আঙুলের আংটি কেনেন গ্রাহকরা। সব মিলিয়ে স্বর্ণের গহনা বাবদ অন্তত ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাজুস জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে। এর আগে, সবশেষ গত ১২ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় ভরিতে ২ হাজার ৫১৯ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১১ হাজার ৪২৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯১ হাজার ৪১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে ১৩ নভেম্বর থেকে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৪৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ২৮ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২১ বার। আর ২০২৩ সালে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ২৯ বার। স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকায়।

কালের আলো/আরআই/এমকে