ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু 

প্রকাশিতঃ 10:18 pm | November 22, 2024

রাইসুল ইসলাম খান, কালের আলো:

প্রতিনিয়ত ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু। মশাবাহিত এই রোগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে। এই রোগে মৃত্যু এখন আর স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। ক্রমশ চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন দুইজন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪৩৮ জন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাসের চরিত্র বদলের কারণে ডেঙ্গু রোগ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। আক্রান্তদের অনেকেই খুব দ্রুত শঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে চলে যাচ্ছে।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৫৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৪ হাজার ৮২৬ জন ডেঙ্গুরোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া দুইজনের মধ্যে একজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার। অন্যজন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। আলোচ্য সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ১৮১ জন রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশন বাদে) ৫৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ জন, বরিশাল বিভাগে ২০ জন, খুলনা বিভাগে ৬৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন, রাজশাহীতে ৪৭ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন এবং সিলেট বিভাগে একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৮৪ হাজার ৮২৬ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত ৪৩৮ জনের মধ্যে ৫০ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী এবং ৪৯ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত বছর দেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়।

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জন মারা যান। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৮১ জন।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: মাহমুদুল হক চৌধুরী দাবি করেন, রোগী বাড়ার হার এখনও নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, আক্রান্তদের অনেকেই খুব দ্রুত শঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে চলে যাচ্ছে। সারা শরীরে ব্যাথা, ফুসফুস ও পেটে পানি জমার মতো নানা রকম উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

ডেঙ্গুর অন্যতম হটস্পট পুরনো ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে অক্টোবর জুড়ে দৈনিক রোগী ভর্তি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ জন। এটিও আগের বছরের তুলনায় অনেকটা কম। তবে রোগীদের এবার রোগীদের পেটে ব্যাথা ও পেটে পানি জমার লক্ষণকে ঝুকিপূর্ণ বলছেন চিকিৎসকরা। এবার অনেক রোগীই হাসপাতালে না এসে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জটিল পরিস্থিতি তৈরী হবার আগেই এসব রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেবার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

কালের আলো/আরআই/এমকে