ঢাকা সেনানিবাসে জাতির সূর্য সন্তানদের মিলনমেলা, সঙ্কট উত্তরণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের তাগিদ সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 10:20 pm | December 01, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের মাস ডিসেম্বরের প্রথম দিন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানে ধরা দিয়েছিল হাজার বছরের স্বপ্নের স্বাধীনতা। বাঙালির আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা ও স্বাধীন পতাকা অর্জনের এই মাসটিকেই এবার বেছে নেওয়া হয়েছে চলতি বছরের সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধে সেনাবাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত এবং অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য ও তাঁদের নিকটাত্মীয়দের সংবর্ধনা প্রদানে। রবিবার (০১ ডিসেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসের ‘আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে’ যেন হয়ে ওঠেছিল একাত্তরের চেতনায় রঙিন!

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সেনাবাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত এবং অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের নানা উপমায় বরণ করে নেয়া শব্দমালায় প্রকারান্তরে কঠিন লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ঔপনিবেশিক অপশক্তির শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মর্মবাণীই যেন উচ্চারিত হয়েছিল পরতে পরতে। স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেদের বীরত্ব, ত্যাগ আর সংগ্রামের চিহ্নে মহিমান্বিত চিত্রপটে জ্বলজ্বল আজও ৫ বীরশ্রেষ্ঠসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের নাম। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর সেনাসদর এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। বরাবরের মতো এবারো এই আয়োজনটি কার্যত স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে নিয়ে আসা জাতির বীর সন্তানদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞচিত্তে উচ্চারণ সেনাপ্রধানের
এই মিলন মোহনায় মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আলোকিত, সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সঙ্কট উত্তরণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের তাগিদ দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি দেশ ও জাতিকে ভালো ও নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়দীপ্ত উচ্চারণও করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনিতে প্রজ্বলিত হয়ে সেনাপ্রধান শত্রু সেনাদের খতম করতে মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় আলিঙ্গণ করা জাতির সূর্য সন্তানদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাসের সার কথা তুলে ধরেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞচিত্তে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আপনাদের ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। আপনারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, আমাদের পথিকৃৎ। শুধু মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেননি, পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী যখন নতুন ছিল, সৃষ্টি সময় থেকে সেনাবাহিনীতে আপনারা (মুক্তিযোদ্ধা) অবদান রেখেছেন। আপনাদের অবদানের ফলে আমরা সেনাবাহিনী এখানে দাঁড়িয়ে আছি।’

  • মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞচিত্ত উচ্চারণ সেনাপ্রধানের
  • যুদ্ধ দিনের স্মৃতিমাখা দিনগুলোর মতোই একসুতোয় তাঁরা
  • সামনে কঠিন সময় পার করে দেশ ও জাতিকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে চান সেনাপ্রধান

যুদ্ধ দিনের স্মৃতিমাখা দিনগুলোর মতোই একসুতোয় তাঁরা
‘মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সেনাবাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য এবং শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সেনাসদস্যগণকে সেনাবাহিনী প্রধান কর্তৃক সংবর্ধনা ও পদক প্রদান’ শীর্ষক আত্মগৌরব অর্জনের বিজয়গাঁথার এমন বাক্য প্রত্যেকের ভেতরেই জাগিয়ে তুলেছিল প্রাণের স্পন্দন। আবেগ-আপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য এবং তাঁদের নিকটাত্মীয়রাও। একাত্তরের সুমহান চেতনায় বাঙালির বীরত্ব, ত্যাগ আর সংগ্রামের চিহ্ন নিয়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নিমন্ত্রণেই তাঁরা ছুটে এসেছিলেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়েই। যুদ্ধ দিনের স্মৃতিমাখা দিনগুলোর মতোই একসুতোয় গেঁথেছিলেন নিজেদের।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এই সময় খেতাবপ্রাপ্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য এবং তাঁদের নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে শান্তিকালীন সময়ে বিভিন্ন বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫ জন সেনাবাহিনী পদক (এসবিপি), ৫ জন অসামান্য সেবা পদক (ওএসপি) ও ১৮ জন বিশিষ্ট সেবা পদক (বিএসপি) প্রাপ্ত সর্বমোট ২৮ জন সেনাসদস্যকে পদক পরিয়ে দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই খেতাবপ্রাপ্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন বীরত্বগাঁথা এবং শান্তিকালীন পদক প্রাপ্ত সেনাসদস্যদের প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ডের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়।

সামনে কঠিন সময় পার করে দেশ ও জাতিকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে চান সেনাপ্রধান
দেশের ক্রান্তিকালে দিন-রাত সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পরিশ্রম করে যাচ্ছে জানিয়ে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘সামনে ডিফিকাল্ট (কঠিন) সময় পার করে দেশ ও জাতিকে নিরাপদ জায়গায় আমরা নিতে যেতে চাই।’ দেশের চলমান পরিস্থিতি সামলাতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বাহিনীটির সদস্যরা এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের ক্রান্তিকালে অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছে। দেশ ও জাতি এই সেনাবাহিনীর কাছে কৃতজ্ঞ। দিন-রাত সেনাসদস্যরা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এছাড়া দেশ ও জাতি গঠনের বিভিন্ন কাজে আমরা নিয়োজিত আছি। ইউএন মিশনে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণেও কাজ করছি এবং আমরা পারদর্শিতা অর্জন করেছি।’

সঙ্কট উত্তরণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের তাগিদ দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সামনে একটু ডিফিকাল্ট সময় পার করতে হবে। আমরা যেন দেশ ও জাতিকে একটা ভালো জায়গায় এবং নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে পারি সেজন্য আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে ইনশাআল্লাহ দেশের ক্রান্তিলগ্ন থেকে দেশকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবো। একটা শান্তি-সুশৃঙ্খল ভবিষ্যতের দিকে যেতে সক্ষম হবো।’

অনুষ্ঠানে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব:) আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. শাহীনুল হক, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে