দুপুর গড়াতে না গড়াতেই তেজ হারাচ্ছে সূর্য
প্রকাশিতঃ 12:09 am | December 02, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
অগ্রহায়ণের মাঝ পেরিয়ে পৌষ, তথা ঋতুচক্রের হিসাবে শীতকালের দিকে ছুটছে বাংলা বর্ষপঞ্জি। তবে এরই মধ্যে শীতের আমেজ কমবেশি দেখা দিয়েছে সারা দেশেই। কমে গেছে দিনের আলো, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই তেজ হারাচ্ছে সূর্য। এখন পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ না এলেও দেশের সর্বউত্তরের জেলাগুলো রীতিমতো শীতে কাঁপতেও শুরু করেছে। দেশের বাকি অঞ্চলে এখনো দৃশ্যমান নয় শীত।
ডিসেম্বরে দিন যত গড়াবে, ততই অবশ্য শীতের আনাগোনা বাড়বে। উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোতে একাধিক শৈত্যপ্রবাহও দেখা দিতে পারে। তবে ডিসেম্বর মাসের জন্য আবহাওয়ার দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাস বলছে, এ মাসে মাত্রাতিরিক্ত শীতের দেখা মিলবে না। স্বাভাবিক তাপমাত্রার সঙ্গে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের দেখাও মিলতে পারে।
রোববার (১ ডিসেম্বর) আবহাওয়া অধিদপ্তর এক মাসের দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির পরিচালক ও চেয়ারম্যান মো. মমিনুল ইসলামের সই করা পূ্র্বাভাসে সদ্যগত নভেম্বর মাসের আবহাওয়ার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর মাসে বিভাগভেদে ৮ থেকে ১১ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে স্বাভাবিক ধরা হয়। আগামী এক মাসেও এমন স্বাভাবিক পরিমাণের বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে ময়মনসিংহ বিভাগে এক থেকে দুই দিন ও বরিশাল বিভাগে দুই থেকে চার দিন হতে পারে বৃষ্টি। বাকি বিভাগগুলোতে এক থেকে তিন দিন বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে।
এ মাসে স্বাভাবিক তাপমাত্রারও পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। তবে এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। আর নদী অববাহিকায় মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়লেও দেশের অন্য এলাকাগুলোতে এ মাসে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পুরনো তথ্যগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে এসময় সারা দেশে তাপমাত্রা সাড়ে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে থাকে। শীতপ্রবণ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা থাকে কমের দিকে। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ঠান্ডা বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার কারণেই এসব এলাকায় শীতের প্রভাব বেশি পড়ে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ডিসেম্বর মাসের জন্য সারা দেশে রাতের গড় তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সাার দেশে দিনের গড় তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন মডেল থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এ মাসে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একাধিক শৈত্যপ্রবাহের আভাসও রয়েছে ডিসেম্বরের জন্য। তা দেখা যেতে পারে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে। সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব না-ও পড়তে পারে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মাসের দ্বিতীয়ার্ধে দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়ারসে নামলে সেটিকে বলা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটি মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে বলা হয় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
দেশে অবশ্য অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহের নজির খুব কম। ২০১৮ সালে সবশেষ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা দেশের ইতিহাসেরই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। একই দিনে সৈয়দপুর, নীলফামারীর ডিমলা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও দিনাজপুরেও তাপমাত্রা নেমেছিল ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। এ রকম তীব্র তাপমাত্রা সাধারণত দেখা জানুয়ারিতে। ডিসেম্বরে শীতের তীব্রতা তেমন নাও হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল শীতপ্রধান এলাকা। এই অঞ্চলে শীতের দিনে গড় তাপমাত্রাও অন্য এলাকার তুলনায় কম। ডিসেম্বরে সাধারণত এসব অঞ্চলের ওপর দিয়ে দুয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এ বছরও একই রকম দুটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
ডিসেম্বরের শীতের মধ্যেই লঘুচাপের আভাসও রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি লঘুচাপ নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শীতের দেখা নেই
অগ্রহায়ণের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও পঞ্চগড় ছাড়া দেশের বাকি জেলাগুলোতে এখনো শীতের দেখা নেই। গত কয়েক দিন ধরেই জেলার তপামাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। রোববার সকালে সেই তাপমাত্রা নেমেছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখন পর্যন্ত এ মৌসুমে এটি পঞ্চগড় তো বটেই, সারা দেশেরই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, উত্তরের বাকি এলাকাগুলোর মধ্যে দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বদলগাছীতে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজারহাটে ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ডিমলায় ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সৈয়দপুরে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেশের আর কোনো এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। চট্টগ্রাম অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেশির ভাগ এলাকায় ছিল ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ