সেনাবাহিনীতে উচ্চাসনে নারীরা, অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনে প্রশংসিত সেনাপ্রধান

প্রকাশিতঃ 5:04 pm | March 08, 2019

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো :

স্বাধীনতার ৪৮ বছরের মাথায় প্রথম নারী মেজর জেনারেল পেয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ডা: সুসানে গীতি হয়েছেন সেই সৌভাগ্যবান নারী। এরপর সেনাবাহিনীর আর্টিলারী ও ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবেও প্রথমবারের মতো অভিষেক হয়েছে চার নারী সেনা কর্মকর্তার।

আর এসবের মধ্যে দিয়েই সেনাবাহিনীতে নারীদের অগ্রযাত্রা ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সেনাবাহিনীর উচ্চাসনে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে নারীদের আবির্ভাব। নিজেদের দক্ষতা ও যোগ্যতায় এসব নারীরা পুরুষের পাশাপাশি দুর্বার সাহস নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন।

আরো পড়ুন:
নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকায় ‘প্রশংসা’ প্রধানমন্ত্রী’র, ‘তুষ্ট’ সেনাপ্রধানও

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে সুযোগ বৃদ্ধির ফলেই সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর অগ্রযাত্রা-অর্জন উৎসাহব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন সবাই। সরকারের যুগান্তকারী নানা পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের হাত ধরেই দেশপ্রেমিক এই বাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়নে এমন মাইলফলক তৈরি হয়েছে।

গর্ব করার মতো এই অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ প্রশংসিত হয়েছেন।

নারী উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বনন্দিত। বিপুল রায় নিয়ে টানা তিনবার বঙ্গবন্ধু কন্যা, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী’র দায়িত্ব পালন করছেন। ভোটে শোচনীয় ভরাডুবির মুখে পড়ে সংসদের বাইরে থাকা একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতাও ছিলেন নারী।

জাতীয় সংসদের উপনেতা, স্পিকার, একাধিক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, বিচারক, রাষ্ট্রদূত, জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ পদই অলংকৃত করেছেন নারীরা।

বাংলাদেশের নারীরা আকাশ জয় করেছে। খেলার মাঠেও তাদের সদর্প বিচরণের পর সামরিক বাহিনীতেও তাদের নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা ছিলো অনস্বীকার্য। অবশেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও তাদের অগ্রযাত্রা সাধিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের নারীবান্ধব নানা উদ্যোগের সুফল হিসেবে।

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসের শহীদ বীর উত্তম সিপাহী নুরুল হক প্যারেড মাঠে প্রথম মহিলা সৈনিক ব্যাচ শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছিলেন। সেদিন প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, আর্মি মেডিকেল কোরে নারী কর্মকর্তার নিয়োগের পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে তাঁর সরকার অন্যান্যও কোরেও নারী কর্মকর্তা নিয়োগ করছে।’

এরপরেও আক্ষেপ ছিলো সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে নারীদের দৃপ্ত পদচারণা না থাকায়। কিন্তু বঙ্গকন্যার নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদেই গুচে যায় সেই আক্ষেপ। বাংলাদেশ সেনবাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়নের বিরল ইতিহাস রচিত হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে।

ওইদিন মেজর জেনারেল পদে ডা. সুসানে গীতিকে র‌্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সামসুল হক।

সেই সময় আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে ডা: সুসানে গীতিই প্রথম নারী মেজর জেনারেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন সেনাবাহিনীতে মহিলা অফিসারকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি প্রদানের মাধ্যমে সেই পদক্ষেপের আরও একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হল।”

সেনাবাহিনীতে নারীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি নারীর ক্ষমতায়নে আরো একটি মাইলফলক তৈরি করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। মেজর সানজিদা হোসেন, মেজর সৈয়দা নাজিয়া রায়হান, মেজর ফারহানা আফরীন ও মেজর সারাহ আমিরকে ফাইটিং ফোর্সের প্রথম ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক করেন তিনি।

ওই সময় মেজর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদোন্নতিপ্রাপ্ত এসব অগ্রগামী নারী কর্মকর্তাদের র‌্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সামসুল হক। পরে সেনাপ্রধান ২৭ জানুয়ারি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদোন্নতিপ্রাপ্ত চার নারী সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

এই চার নারী সেনা কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রীর একটি উক্তিকে নিজেদের মস্তিষ্কে ধারণ করেছেন। একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাতকারে লে: কর্নেল সৈয়দা নাজিয়া রায়হান সেদিন বলেন, ‘ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর একটি কথা সারাজীবন মনে রাখব। প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন, ‘নারীদের যেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেখানে তারা ভালো করে।’

এটা ঠিক, আমরাও সব পারি। প্রমাণ হয়েছে এটা।’ ‘নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে রোল মডেল। সেনাবাহিনীতে নারীকে তাঁর যথাযথ সম্মান দেওয়া হয় বলেও মনে করেন তাঁরা। তাদের বিশ্বাস, একদিন হয়তো সেনাপ্রধান পদেও একজন নারী দায়িত্ব পালন করতে পারেন’ এভাবেই অনুভূতি জানাচ্ছিলেন নাজিয়া।

জানা যায়, এসব নারী সেনা কর্মকর্তাদের যোগ্যতার প্রতি আশ্বস্ত হয়েই সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীর আর্টিলারী এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ওই নারীরা এখন স্বমহিমায় উদ্ভাসিত।

নিজেদের মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে তাঁরা কঠিন জায়গায় সুনামের সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিলেন একমাত্র চার তারকা জেনারেল আজিজ আহমেদ।

কালের আলো/ওএইচ/এএ