তিমিরে থাকা হকিতে আলোর রোশনাই, যুবাদের ইতিহাসে গর্বিত-উচ্ছ্বসিত হকি ফেডারেশন সভাপতি

প্রকাশিতঃ 10:04 pm | December 04, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খেলা হকি। নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে ফুটবলের পরই জনপ্রিয় ছিল হকি। হালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটের অবস্থান তখন ছিল তৃতীয়। কালের বিবর্তনে নানা কারণে বেশ পিছিয়ে পড়ে হকি। পরিকল্পনা-সাধ্য ও বাস্তবায়ন নানা বিষয় মিলিয়ে এতদিন বিশ্বকাপ পর্যায়ে খেলা স্বপ্নই ছিল। এবার সেই স্বপ্নই বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল। গত মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) ওমানের মাসকাটে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দল থাইল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো যুব হকি বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করেছে। গড়েছে নতুন এক ইতিহাস। দোর্দণ্ড প্রতাপে বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রাখছে যুবারা। এমন অসম্ভবই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে) এর সভাপতি’র দায়িত্বভার গ্রহণের পর। বিনি সুঁতোর মালায় তিনি গেঁথেছেন লাল-সবুজের হকিকে।

আন্তর্জাতিক মানসম্মত কোচ, সঠিক পরিকল্পনা-সিদ্ধান্ত, আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করা ও সর্বোপরি খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক মঞ্চের জন্য প্রস্তুত করতে যোগ্য অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। স্বপ্নবাজ এই ব্যক্তিত্বের সময়োপযোগী উদ্যোগেই অবহেলা আর বঞ্চনায় তিমিরে থাকা হকি ওঠে এসেছে আলোর রোশনাই হয়েই। এতোদিন যে সাফল্য ছিল অধরা এবার মহান বিজয়ের মাসেই সেই সাফল্যে উজ্জ্বল হয়েছে দেশের মুখ। প্রথমবারের মতো যুবারা হকি বিশ^কাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। অবিস্মরণীয় এমন মাইলফলকে গর্বিত বাহফে সভাপতিও।

হকির মাঠের এমন অভূতপূর্ব সাফল্য গোটা দেশকে সামিল করেছে আনন্দে। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে) সভাপতি ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-২১ দলকে। সম্মিলিতভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আনন্দের ক্ষণটিতে যুবাদের সঙ্গে নিয়ে উদযাপন করবেন তিনি। বাংলাদেশ যুব হকি দল বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিমানযোগে ওমান থেকে বাাংলাদেশে আসবে। এরপরই দলের সব সদস্যকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ফ্যালকন হলে নিয়ে আসা হবে। এখানে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে) সভাপতি দলটিকে আনুমানিক দুপুর ১টায় সংবর্ধনা দেবেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত যে কোন ফরম্যাটে বাাংলাদেশ হকি দল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ওমানে অনুষ্ঠিত যুব এশিয়া কাপ এবং যুব বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে গত মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) থাইল্যান্ডকে ৭-২ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। এই জয়ে নিশ্চিত হয় আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপের মূল পর্বে যুবাদের খেলা। ওমানে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-২১ দলে ম্যানেজার ও সাবেক কোচ কাওসার আলী উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, ‘জীবনের প্রায় সায়াহ্নে এসে দারুণ এক মুহূর্তের সাক্ষী হলাম। বাংলাদেশ হকিতে বিশ্বকাপ খেলবে এটা এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। আমাদের ছেলেরা এটা প্রমাণ করেছে তারা খেলতে পারে। এটা সম্ভব হয়েছে হকি ফেডারেশন সভাপতি ও বিমান বাহিনী প্রধানের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায়। তাছাড়া ছেলেদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ও কোচিং স্টাফদের পরিশ্রম তো আছেই।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, দেশের ক্রান্তিকালেও হকি ফেডারেশন এর সভাপতি এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আর্থিক সঙ্কট দূর করে ওমানে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে পুরুষ ও নারী হকি দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন। খেলোয়াড়দের জন্য তিনি উপযুক্ত কোচ, উন্নতমানের সাজ-সরঞ্জাম, ট্রেনিং জার্সি ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। যা তাদের মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও তিনি হকি দলের প্রশিক্ষণের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে যথাসময়ে উন্নত ট্রেনিং ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেছেন এবং সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর হকি দলের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য প্রস্তুতি ম্যাচের আয়োজন করেন। এর ফলে বাংলাদেশ হকি দলের খেলোয়াড়রা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে জুুনিয়র এশিয়া কাপ হকিতে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হন। এছাড়াও হকি ফেডারেশন এর সভাপতি ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান হকি দল ওমানে যাওয়ার আগে খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। হকির উন্নয়নে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও কর্মদক্ষতায় বাংলাদেশ হকি দল আরও এগিয়ে যাবে।

যুব বিশ্বকাপকে বাংলাদেশ হকির টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করছেন হকি সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ২০১৭ সালে যুব অলিম্পিকে বাংলাদেশ ফাইভ এ সাইড হকিতে খেলেছিল। ১৯৭৭ সাল থেকে যুব হকি খেলা বাংলাদেশের কখনও বিশ্বকাপ খেলা হয়নি। ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশের হয়ে প্রথম যুব বিশ্বকাপ বাছাই খেলা দলের অধিনায়ক হাসান ইমাম চৌধুরি সান্টা বলেন, ‘১৯৭৭ সালে মালয়েশিয়ায় আমরা এশিয়ার ১২ দলের মধ্যে পঞ্চম হয়েছিলাম। চতুর্থ হলে পরের বছর প্যারিসে যুব বিশ্বকাপ খেলতে পারতাম। আমরা না পারলেও চার যুগ পর বাংলাদেশ যুব বিশ্বকাপ খেলছে, এটা দেখতে পারছি এটাই বড় প্রাপ্তি।’

কালের আলো/এমএএএমকে