আমরাও বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা দাবি করবো: রিজভী
প্রকাশিতঃ 1:02 am | December 05, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে দিল্লির দাসত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি এও বলেছেন, এ দুই ধর্মের লোকেরা একসঙ্গে লড়াই করে দিল্লির দাসত্বকে খান খান করে দেবে।
ভারত যদি কোনো আগ্রাসী ভূমিকা পালন করে তাহলে দেশের মানুষও বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা দাবি করবে বলেও উল্লেখ করেন রিজভী।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পদযাত্রার আগে এ কথা বলেন রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ জাগরিত। এ জাগরণ দেশ মাতৃকা রক্ষার জন্য। হিন্দু-মুসলমান এই মাতৃকায় যাদের জন্ম, এই মাটির সন্তান তারা। এখানে আমাদের সবার জন্ম। তারা এই দেশকে অন্যের গোলামির কাছে বিক্রি করবে কেন? এখানে যদি সিরাজ উদ দৌলা, মোহনলাল একসঙ্গে লড়াই করতে পারে দেশের মুক্তির জন্য, দেশ রক্ষার জন্য; ঠিক একইভাবে আমরা হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে লড়াই করব। দিল্লির দাসত্বকে খান খান করে দেব।
রিজভী বলেন, বিজেপি সরকার গোঁড়া হিন্দুত্ববাদকে পুঁজি করে ক্ষমতায় এসেছে। এদের আর কোনো পুঁজি নেই। সুতরাং ক্ষমতায় থাকতে হলে হিংসা এবং ঘৃণা ছড়াতে হবে। এছাড়া নরেন্দ্র মোদী বাবুর ক্ষমতায় থাকা অনেক মুশকিল হবে। কারণ, ভারতের স্বাধীনতায় তাদের উত্তরসূরিদের কোনো অবদান নেই। এটি আমার নিজের ইতিহাস পাঠ নয়, একজন বিখ্যাত লেখক অন্নদা শংকর রায় তিনি তার এক লেখায় এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, আমার কাছে অবাক লাগে, যে ভদ্র মহিলার (কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ছিল। অসাম্প্রদায়িক, সেকুলার হিসেবে যে রাজনীতিবিদকে চিনতাম তাকেও মনে হলো রাজনীতির জন্য মুখে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলতেন, ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলতেন। কিন্তু তার গভীরে ছিল কট্টর হিন্দুত্ববাদ। যে কোনো আদর্শের কট্টরবাদ মানবতার পরিপন্থী। যে কোনো ধর্ম সম্প্রদায়ের কট্টরবাদ মানবতার বিরুদ্ধে যায়।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের হার ২৫ শতাংশ। অথচ সরকারি চাকরিতে সুযোগ পায় মাত্র ১ শতাংশ। তাহলে মমতা তো কখনোই ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী ছিলেন না। আমরা জোর গলায় বলতে পারি, শেখ হাসিনা ছাড়া অন্যের ধর্মের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ কখনোই ছড়ায়নি। এই দেশে যারা ইসলামী রাজনীতি করেন তারাও কিন্তু সাম্প্রদায়িক কথা বলেন না। অন্য ধর্মের প্রতি আক্রমণ করে কোনো কথা বলেন না। এটাই আমাদের ঐতিহ্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে যারা আছি তারা তো সিরাজ উদ দৌলা, মোহনলাল, মীর বদনের উত্তরসূরি। তাই ভারতীয় আগ্রাসনের জন্য আমরা লড়বো। এটা আমাদের ঐতিহ্যের মধ্যে আছে। আপনারা আগরতলা সহকারী হাইকমিশনে আমাদের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়েছেন। এটা তো প্রচণ্ড আঘাত। এটা আমরা কোনোদিনও ভুলে যাব না।
ভারতীয় গণমাধ্যমের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনাদের মিডিয়ার এক শোভন ভদ্রলোক মিথ্যা অপপ্রচার করে যাচ্ছেন। আমি তাকে ভদ্রলোকই মনে করতাম, দেখতেও সুন্দর। কিন্তু মনটা এতো অসুন্দর। গোপালগঞ্জ আগুন লাগিয়ে ৫ জনকে মেরে ফেলেছে ঢালাওভাবে প্রচার করেছেন। গোপালগঞ্জে কাউকে আগুন লাগিয়ে মারা হয়েছে? এত বড় মিথ্যা, অপপ্রচার! ভারত নাকি সেকুলার দেশ, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আজকে তাদের মিডিয়া খেয়ে না খেয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। সুভেন্দু বাবুদের তল্পিবাহক হয়েছে বলেও যোগ করেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, শ্বেতপত্রে জানা গেছে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ থেকে কত পেয়েছেন সুভেন্দু বাবুরা এটাও আপনারা বলুন, না হলে কেউ কিন্তু বলে দিবে। পৃথিবীর কোন কোন নেতা পেয়েছেন শেখ হাসিনার ২৮ লাখ কোটি টাকার ভাগ। এটা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জেনে গেছে এবং হয়তো একদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বলে দেবে।
রিজভী আরও বলেন, আমরা আমাদের স্বাধীনতা রক্ষায় অঙ্গিকারবদ্ধ। আমরা ভারতসহ যত বড়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র আছে প্রত্যেকটা দেশের স্বাধীনতার মর্যাদা দিই। কিন্তু ভারতের শাসকগোষ্ঠী যদি মনে করে সম্প্রসারণ চালিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও অন্যান্য দেশ আমরা (ভারত) কব্জা করে নেব- তাহলে আপনারা আপনারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষের দেশরক্ষার অন্তর্নিহিত শক্তি, প্রাণের উন্মাদনা। এটা কখনোই ভারত টের পায়নি৷ আপনাদের যদি অশুভ ইচ্ছা থাকে তাহলে আমরাও বলবো, যদি আপনারা একের পর এক আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেন- আমাদের নবাবের এলাকা বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা আমরা দাবি করবো।
সংগঠনের সভাপতি অপূর্ণা রায় দাসের সভাপতিত্বে, সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বসুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অন্যদের মধ্যে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদ খান, ছাত্রদলের সহ সভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ