বিএনসিসির কর্মযজ্ঞে অভিভূত সেনাপ্রধান, আরও সুসংগঠিত হওয়ার উপদেশ
প্রকাশিতঃ 9:53 pm | December 05, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
দেশের যুব সমাজের নৈতিক উন্নতি সাধন এবং তাদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)। ‘জ্ঞান, শৃঙ্খলা ও একতা’ এই মূলমন্ত্রকে ধারন করে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহায়ক শক্তি হিসেবে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে তৈরি করছে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। সেনা, নৌ ও বিমান-এই তিনটি শাখার ক্যাডেটদের চারিত্রিক, সামরিক ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলছে নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবী। দেশের যেকোন দুর্যোগে-দুর্বিপাকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন সহায়তার হাত। জনসচেতনতা তৈরি ও উন্নয়ন কাজে নিজেদের যুক্ত করায় বিএনসিসি’র সামগ্রিক কর্মযজ্ঞে অভিভূত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে বিএনসিসি একটি বিশাল শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে।
বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) সাভারের বাইপাইলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর নবনির্মিত একাডেমিক ভবন উদ্বোধনকালে এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে বিএনসিসি ক্যাডারদের অগ্রণী ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘বিএনসিসির সদস্যরা সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা ও দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণসহ শৃঙ্খলা রক্ষার বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেছে। এছাড়া বন্যার সময়ও তারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে। তাদের কর্মকাণ্ডে আমি অভিভূত।’
জানা যায়, ১৯২৩ সালে প্রণীত ইন্ডিয়ান টেরিটোরিয়াল ফোর্সেস অ্যাক্ট এর অধীনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত বিএনসিসি’র কার্যক্রমের গোড়াপত্তন ঘটে। সেই থেকেই তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণ দান, বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য দ্বিতীয় সারির প্রতিরোধ বাহিনী গঠন এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য স্বেচ্ছাসেবী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর তাঁর কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনসিসি সেনা, নৌ ও বিমান শাখার একটি চৌকস ক্যাডেট দল সেনাবাহিনী প্রধানকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেন। গার্ড অব অনার গ্রহণ ও উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন শেষে সেনাবাহিনী প্রধান বিএনসিসি ট্রেনিং একাডেমিতে বৃক্ষরোপণ করেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিএনসিসিতে কর্মরত সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার, বিএনসিসি অফিসার, প্রফেসর আন্ডার অফিসার, টিচার আন্ডার অফিসার ও বিএনসিসি ক্যাডেটদের মাঝে তাঁর স্বাগত ভাষণ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি স্মরণ করেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বিএনসিসি ক্যাডেটসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং গত জুলাই-আগস্ট এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল ছাত্র জনতার আত্মত্যাগকে।
বিএনসিসি’র সদস্যদের প্রশিক্ষণে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা সুন্দরভাবে সেনা প্রশিক্ষণ গ্রহন করছো। আমি আশা করবো তোমরা ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিবে। দেশ এবং জাতির ক্রান্তিকালে তোমরা একটি বিশাল শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। এখন পর্যন্ত ২৩ হাজারের মতো সদস্য, এটিকে আরও বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের ছাত্র সমাজের শৃঙ্খলা, কর্তব্যবোধ, ন্যায়-নিষ্ঠা ইত্যাদি উন্নতি করা সম্ভব হবে।’
বিএনসিসি’র স্পিরিটে মুগ্ধ সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘বিগত সময় যে সমস্যা হয়েছে তোমরা ওতপ্রোতভাবে আমাদের সঙ্গে কাজ করেছো। তোমাদের এই স্পিরিট দেখে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমি আশা করবো তোমরা উত্তরোত্তর তোমাদের সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করবে, আরও ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিবে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে আত্মনিয়োগ করবে। বিভিন্ন জায়গায় যখন ক্যাম্পেইন হয়, আমরা যখন এক্সারসাইজ করি তোমরা তোমাদের স্পিরিট বজায় রাখবে। বন্যার সময় তোমরা অনেক কাজ করেছো। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে অনেক ভালো কাজ করেছো। আমরা সর্বদা তোমাদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।’
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সাভারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মঈন খান, সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মাসুদুর রহমান, বিএনসিসির ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.মিজানুর রহমানসহ সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, বিএনসিসির অফিসার ও ক্যাডেটরা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে