কাটছাঁট হতে যাচ্ছে বাজেট
প্রকাশিতঃ 12:32 am | December 07, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট কাটছাঁট হতে যাচ্ছে। এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এবার বাজেটের আকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি কমে যেতে পারে।
জানা যায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য একটি কঠোর বাজেট প্রণয়ন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগ বাড়াতে এই বাজেটে উন্নয়ন ও রাজস্ব ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য কাটছাঁট করার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন বাজেট দর্শনের বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক গতানুগতিক উন্নয়ন মডেল থেকে সরে এসে সামাজিক অগ্রগতির দিকে মনোনিবেশ করা হতে পারে। এজন্য আয়বর্ধক উদ্যোগ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বাড়তি তহবিলের দরকার হবে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল প্রায় দুই লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। তবে বর্তমান সরকার এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করছে। আগামী অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির সমান বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। জারি করা পরিপত্রে অর্থ বিভাগ বলেছে, কোনও মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। ইতোমধ্যে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এদের অধীন বিভিন্ন দপ্তর স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাকে সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রণয়ন করা হয়েছিল। এরপর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর অর্থবছরের এক মাস আট দিনের মাথায় ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশিরভাগ উন্নয়ন প্রকল্প কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ঠিকাদারেরা কাজ বন্ধ করে দেন এবং বিদেশি অনেক ঠিকাদার দেশ ছেড়ে চলে যান। সেপ্টেম্বরে কিছু প্রকল্প পুনরায় শুরু হলেও অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে চার বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার আশা করছে। যার মধ্যে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সরকার ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরের উৎস- যেমন সঞ্চয়পত্র ও ট্রেজারি বিলকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নির্দেশে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখা, মূল সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীন কোনও প্রকল্প না রাখা, সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে অগ্রাধিকার বাছাই করে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়ার নির্দেশনা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৭.৯ শতাংশ, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এবার নতুন করে কোনো মেগা প্রকল্প নেওয়া হবে না। তবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
সূত্র আরও জানায়, চলতি বাজেটে যেসব প্রকল্পের তহবিল নেই বা ন্যূনতম বরাদ্দ রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী বাজেট থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। বিশেষত সংসদ সদস্যদের অভিপ্রায় অনুযায়ী এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হবে বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আসন্ন বাজেটে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিশেষত ব্যাংক খাতের জন্য কিছু নীতি-উদ্যোগ থাকতে পারে। ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। সরকার বাজার থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ধার নেওয়া কমাবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করে। এর মধ্যে এডিপি ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটেই ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা অব্যবহৃত ছিল। এ বছর বড় ধরনের কাটছাঁট করে চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে অন্তত দেড় থেকে ২ লাখ কোটি টাকা সহজেই সাশ্রয় করা সম্ভব।
কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে