সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সাফল্যের মহাকাশ ছোঁয়া বীরকন্যাদের স্মরণীয় দিন, হৃদয়ের উষ্ণতায় আনন্দ নন্দিত অভিবাদন
প্রকাশিতঃ 10:01 pm | December 08, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
মাসখানেক আগেই নেপালে বিজয় কেতন উড়িয়েছে বীরকন্যারা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে তাঁরা। ঐতিহাসিক, অবিস্মরণীয় বিজয় বলে চলেছে ফুটবলে নারীদের শক্তি ও সম্ভাবনার কথা। ফুটবল আকাশে এতোদিন যে শ্রেষ্ঠত্ব ছিল আকাশের চাঁদ- সাবিনা, রুপনা, ঋতুপর্ণা আর মনিকা চাকমারা সেই মহাকাশই ছুঁয়ে দিচ্ছেন বারবার। বিশ্ব পরিমণ্ডলে উড়িয়েছেন লাল-সবুজের পতাকা। বাধার প্রাচীর দুমড়েমুচড়ে এগিয়ে চলা, অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তরিত করা হিমাদ্রির শিখরে ওঠে বাংলার ফুটবলের পুনর্জাগরণের গল্প বলা নারী ফুটবলারদের এবার হৃদয়ের উষ্ণতায় অভিবাদন জানিয়েছে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)।
সমুদ্র নগরী কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের ইনানী এলাকায় সেনাবাহিনী পরিচালিত বে-ওয়াচ হোটেল গ্রাউন্ডে শনিবার (০৭ ডিসেম্বর) রাতে আয়োজিত এই সংবর্ধনায় দেশের জন্য গৌরবময় অধ্যায় তৈরি করা বাংলার বাঘিনীদের অনন্য এক মর্যাদায় করা হয়েছে মহিয়ান। হিমালয়ের কোলে বাংলাদেশের ফুটবলের আশার ফুল ফুটানো সাবিনা-মারিয়া মান্দারা সংবর্ধনার পাশাপাশি এদিন পেয়েছেন এক কোটি টাকা অর্থ পুরস্কার। সাফ সাম্রাজ্য নিজেদের করে নেওয়া নারী ফুটবলারদের প্রত্যেকেই পুরস্কার পেয়েছেন ৪ লাখ করে। পাশাপাশি টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিতে ঋতুপর্ণা চাকমা এবং সেরা গোলকিপার রূপনা চাকমাকে অতিরিক্ত এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা করে পুরস্কৃত করা হয়েছে। দলের কোচ ও কর্মকর্তাদের দেওয়া হয় অর্ধলাখ টাকা করে পুরস্কার। এছাড়া তাদেরকে ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) এমন ভালোবাসায় আপ্লুত সাফজয়ী কন্যারা। দেশের জন্য বিদেশের মাটি থেকে টানা দু’বার ট্রফি এনে দেওয়া, সাফল্যের নতুন পাণ্ডুলিপিতে প্রত্যাশার রেণু উড়ানোর শনিবারের (০৭ ডিসেম্বর) মাহেন্দ্রক্ষণে স্বশরীরে এক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান ও বিওএ সভাপতি জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান ও সাঁতার ফেডারেশনের সভাপতি এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান ও হকি ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জেতা বাংলাদেশের বীরকন্যাদের দক্ষতা প্রদর্শনের নির্মাল্যে আর অভাবনীয় সফল কৃতিত্বের ধারবাহিক নৈপুণ্যে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বাংলার নরম মৃত্তিকার শক্ত খেলোয়াড়দের অনন্য সফলতায় অনবদ্য স্বপ্নের হাতছানিতে তিনি মনে করেন ‘নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা দেশের গর্বের ধন। একাধিকবার সাফ জয়ের মাধ্যমে নারী ফুটবল দল এই স্বীকৃতি অর্জন করেছে। উৎসবের আমেজে সংবর্ধনার এমন আয়োজন নারী ফুটবলারদের প্রেরণা যোগাবে।’
২০২২ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালকে হারিয়েই প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এবারও সেই দশরথ স্টেডিয়ামেই মনিকা ও ঋতুপর্ণার দুই গোলে নেপালের মেয়েদের হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রানির মুকুট বঙ্গললনাদের মাথায়। বাংলাদেশ ধরে রাখলো দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের শিরোপা। হিমালয় কন্যা নেপালের পাদদেশে কঠিন ভূমিতে সদর্প বিচরণে বাংলার বাঘিনীদের দুঃসাহসিক অভিযানে অনন্য জয়মাল্যে গর্বিত বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত ১৬ নভেম্বর এক কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে সাফজয়ীদের সংবর্ধনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।
সশস্ত্র বাহিনী ও বিওএ’র যৌথ আয়োজন মাতিয়ে দিয়েছে বাঘিনীদেরও
পার্বত্য অঞ্চলের নারী ফুটবলারদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া তৈরি করতে ও বীরকন্যাদের নতুন এক মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে কক্সবাজারের ইনানী বিচে আয়োজন করা হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের। এর আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিওএ’র যৌথ উদ্যোগে তাদের সংবর্ধিত করা হলেও এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বিওএ’র যৌথ আয়োজনে পর্বতের চূড়ায় উঠা সাবিনা, মারিয়া আর ঋতুপর্ণা চাকমাদের শিরোপা উপহারে হৃদয়ের মর্মমূল থেকে গভীর ভালোবাসায় সিক্ত করা হয়েছে। জমকালো এমন আয়োজন মাতিয়ে দিয়েছে ওদেরও। ২০২৪ সালের এই সাফল্য নি:সন্দেহে খেলার মাঠে বাংলার নারী যোদ্ধাদের এগিয়ে চলার যাত্রাপথের মাইলফলক হিসেবেই বিবেচিত হবে।
আগামীতেও নারী ফুটবলাররা দেশের সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে বড় অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে
আগামীতেও নারী ফুটবলাররা দেশের সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে বড় অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে শুধুমাত্র দক্ষিণ এশিয়ায় নয় সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে নারী ফুটবলাররা। সেই সঙ্গে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে নারী ফুটবল দলের এই সাফল্য সার্বিকভাবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন প্রেরণার সঞ্চার করবে।’
দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও নারী ফুটবল দল গঠন করা হয়েছে। এরইমধ্যে সেনাবাহিনীর নারী ফুটবল দল বেশ সফলতাও অর্জন করেছে। তাঁরা ২০২৩ সালে লীগ খেলায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। আমরা নারীদেরকে আরও স্পন্সর করবো ও তাদের দেখভাল করলে তাঁরা প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের বিভিন্ন সম্মান এনে দিতে পারবেন। নারী ফুটবল দলের কোচরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আমি তাদেরকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
এ সময় সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি তাবিথ আউয়ালসহ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের সংবর্ধনার আনন্দঘন এই আয়োজন অনুপ্রেরণা যোগাবে। শুধু সাফ নয়, এএফসি কাপ জেতারও স্বপ্ন দেখছে নারী ফুটবলাররা।’ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শেষে দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সংবর্ধনা ঘিরে নারী ফুটবলারদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও অংশ গ্রহণ করেন।
কালের আলো/এমএএএমকে