রাজধানীবাসী সারা দিন কাশিতে ভুগছে কেন
প্রকাশিতঃ 10:43 am | December 11, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মিনহাজ আবেদীন বেশ কিছু দিন ধরে শুকনো কাশিতে ভুগছেন। দিনের বেলা কাশি হঠাৎ হঠাৎ হলেও রাতে বেশ ঘন ঘন কাশি আসে বলে জানান তিনি। তবে তার জ্বর, সর্দি কিংবা অন্য কোনও ঠান্ডাজনিত রোগের লক্ষণ নেই। তিনি বলেন, ঢাকার বাতাসের কারণে এমন হতে পারে। এত ধুলা চারদিকে… আবার শীত মৌসুমের শুরুতেও ঠান্ডা-কাশি লেগে যায়। কিন্তু ঠান্ডা কাশির তো একটা লক্ষণ থাকে। এই কাশি কোনোভাবেই কমছে না।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এই প্রতিবেদন যখন লেখা হয়, তখন বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রথম অবস্থানে ছিল ভিয়েতনামের হ্যানয়, তৃতীয় অবস্থানে তেহরান এবং চতুর্থ অবস্থানে ছিল কলকাতা। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং, কল্যাণপুর, হেমায়েতপুর, বেচারাম দেউরি এলাকা সবচেয়ে বেশি দূষিত।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের তথ্য বলছে, ঢাকায় সন্ধ্যার পর থেকে বায়ুদূষণের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করে। ইনডেক্সে যাকে বলা হয় খুবই অস্বাস্থ্যকর। বেসরকারি বায়ু গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপস বলছে, গত ৯ বছরের হিসাবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির এই সময়ের বায়ু সবচেয়ে বেশি অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে।
আইকিউএয়ারের ২০২৩ সালের বছরভিত্তিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ বেশি বাংলাদেশে। এ তালিকায় এক নম্বরে বাংলাদেশ। এরপর রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, তাজিকিস্তান ও বুরকিনা ফাসো। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় এক নম্বরে ছিল ভারতের দিল্লি। এরপর রয়েছে ঢাকা, বুরকিনা ফাসোর ওয়াগাডুগু, তাজিকিস্তানের দুশানবে ও ইরাকের বাগদাদ।
ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কার কাজ, মেগা প্রকল্প, আশপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প-কারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো—এসব শহর দূষণের অন্যতম কারণ।’
ঢাকার দূষিত বায়ু থেকে বাঁচতে বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণ মানুষের শুষ্ক মৌসুমে কাশি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে দূষণ। এছাড়া শুষ্ক মৌসুম ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেও কাশি হতে পারে।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম আসার পর বাতাসে দূষণ অনেক বেড়ে গেছে। ঢাকার বাতাসের দূষণমাত্রা অস্বাস্থ্যকর। যে সীমা এখানে থাকছে, তাতে মাঝে মাঝে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে ঢাকা। ফলে মানুষের শ্বাসতন্ত্রজনিত সমস্যা হাঁচি-কাশি বাড়ছেই।’
তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া গরম পানির মধ্যে লবণ মিশিয়ে গারগেল করতে হবে। গুরুতর সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
চিকিৎসকদের মতে, সাধারণ সর্দি ও জ্বর ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। একসময় ধারণা করা হতো—একটি বিশেষ ক্যাটাগরির ভাইরাসের মাধ্যমেই শুধু সর্দি হয়। তবে আশির দশকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে মোট সাতটি ক্যাটাগরির ভাইরাসের কারণে সর্দি জ্বর হয়ে থাকে। ঠান্ডার মৌসুমে বা শীতের সময় এই ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মতো পরিবেশ পায় বলে সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। ফলে এ সময় মানুষের বেশি সর্দি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
রাজধানীর শ্যামলীর ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘এখন সবারই কাশি হচ্ছে। শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে মানবদেহের সামঞ্জস্য হতে একটু সময় লাগে। মানুষের খুস খুস কাশি হয় এই সময়ে। কারণ এখন ধুলোবালি অনেক বেশি। মানুষ বাইরে বের হচ্ছে—বাতাসের দূষিত পদার্থগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে তাদের শরীরে প্রবেশ করে। তাতে কাশি শুরু হয়। সেই দূষিত পদার্থ বের করে দেওয়ার জন্যই কিন্তু কাশি আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাইরাসের কারণে সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা হয়। এখন মোটামুটি সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। বাসার একজনের হলে সবাই আক্রান্ত হয়। ঋতু পরিবর্তনের সময় এটি একটু বেশি হয়। শীত জেঁকে বসলে তখন অনেকটা কমে আসে।
কালের আলো/এমএএইচইউএস