নতুন প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে আর্মি এভিয়েশন, আরও যুগোপযোগী করার অঙ্গীকার সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 10:14 pm | December 11, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

একাধিক ইউনিট ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ফরমেশন। সাধারণত শান্তিকালীন সময়ে আর্মি এভিয়েশন সেনা বৈমানিকদের প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন অনুশীলন ও মহড়ায় অংশহণ, জরুরী চিকিৎসার জন্য রোগী স্থানান্তর, সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে জরুরি প্রয়োজনে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। ফিক্সড উইং বিমান, হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান ও সিমুলেটর আর্মি এভিয়েশনকে করেছে আধুনিক। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এভিয়েশনের আরও সক্ষমতা বাড়াতে নজর দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সুসংবাদ দিয়ে জানিয়েছেন এভিয়েশনে নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের কাজ চলছে, যা বাহিনীকে আরও সমৃদ্ধ করবে। একই সঙ্গে তিনি আর্মি এভিয়েশন গ্রুপকে আধুনিক, যুগোপযোগী, পেশাদার ও শক্তিশালী ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলারও অঙ্গীকার করেছেন।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি এভিয়েশনে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের অধীনস্থ এভিয়েশন স্কুলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এভিয়েশন বেসিক কোর্স-১৩ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। পরে সেনাপ্রধান নবীন বৈমানিকদের সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে ফ্লাইং ব্রেভেট অনুমোদন করেন।

জানা যায়, ‘গতি ও নিপুনতা’ এই মূলমন্ত্র ধারন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র উড্ডয়ন প্রতিষ্ঠান আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ ১৯৭৮ সালের পহেলা জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য সেনাবাহিনীর আভিযানিক কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে বিমান সহায়তা প্রদান করা। যুদ্ধকালীন সময়ে আকাশ পর্যবেক্ষক হিসেবে গোলা নিয়ন্ত্রণ, জরুরি রিইনফোর্সমেন্ট সহায়তা, কমান্ডো অপারেশনে সহায়তা, জরুরি রশদ সরবরাহ ও যুদ্ধক্ষেত্রে রোগী স্থানান্তরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা রয়েছে তাদের। আধুনিক সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিল রেখে আর্মি এভিয়েশনে সংযোজিত হচ্ছে আধুনিক হেলিকপ্টার ও সামরিক বিমান।

২০২১ সালের ১১ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে দু’টি অত্যাধুনিক বেল ফোর জিরো সেভেন জিএক্সআই হেলিকপ্টার। এই দু’টি হেলিকপ্টার নবীন বৈমানিকদের প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। একই সঙ্গে আকাশ থেকে ভূমিতে অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণেও কাজ করছে। জিএক্সআই হেলিকপ্টার সংযোজনের পর ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সংযোজিত হয় দ্বিতীয় কাসা-সি ২৯৫ ডব্লিউ মিডিয়াম ইউটিলিটি সামরিক বিমান। এর আগে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিমান বহরে অন্তর্ভূক্ত হয় ৪ টি ডায়মন্ড ডিএ৪০এনজি প্রশিক্ষণ বিমান। এছাড়া আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের বিমান বহরে রয়েছে সেসনা-১৫২ এ্যারোব্যাট, সেসনা গ্রান্ড ক্যারাভান সিই-২০৮বি বিমান, বেল-২০৬ এল ৪ হেলিকপ্টার, ইউরোকপ্টার ডফিন এএস ৩৬৫ এনথ্রি প্লাস, এমআই ১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার এবং কাসা সি-২৯৫ ডব্লিউ বিমান।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তরুণ সামরিক এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত সেনা, নৌ ও পুলিশ বাহিনীর ১৬২ জন অফিসারকে বৈমানিক হিসেবে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই কোর্সে সেনাবাহিনীর ১৮ জন, নৌবাহিনীর ৪ জন ও বাংলাদেশ পুলিশের ২ জনসহ সর্বমোট ২৪ জন তরুণ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের প্যারাড্রপ ফাস্ট, ড্রপিং ও রেপলিং মিশনেও কাজ করবে প্রশিক্ষণ নেওয়া সবাই। এই কোর্সটিতে সকল প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ফিক্সিড উইং এ পি.নং-৩৫১৬ লেঃ আদনান রাকিব, (এক্স), বিএন; রোটারী উইং এ বিএ-১০১৮৫ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল হাসিব, এসি এবং ইউএভি রেজিমেন্ট এ বিএ-১০০৯৫ ক্যাপ্টেন মোঃ ফাহিম-আল-জামান, ইএমই শ্রেষ্ঠ বৈমানিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন বলে জানিয়েছেন আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

সুশিক্ষিত ও সুনিপুণ সেনা বৈমানিকরা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসে আর্মি এভিয়েশন স্কুলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এভিয়েশন বেসিক কোর্স-১৩ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আর্মি এভিয়েশন গ্রুপকে আধুনিক ও শক্তিশালী ইউনিট হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনীর বৈমানিকরা।’ আর্মি এভিয়েশন গ্রুপকে আধুনিক, যুগোপযোগী, পেশাদার ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সুশিক্ষিত ও সুনিপুণ সেনা বৈমানিকরা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।’

সেনাবাহিনীর বৈমানিকরা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় অভিযান ও প্রশাসনিক সহায়তাও কাজ করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এসব বৈমানিকরা জাতীয় যেকোন দুর্যোগে আর্তমানবতার সেবায় ত্রাণ পরিবহন, বিতরণ, মুমূর্ষু ও সঙ্কটাপন্ন রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর ও আটকে পড়া অসহায় মানুষদের নিরাপদ স্থানে পরিবহন করার জন্য দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে।’ উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিতে আরও আধুনিক হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করার আশ্বাস দেন তিনি। আগামী দিনে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের সক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে বলেও মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের গ্রুপ কমান্ডার মেজর জেনারেল আই কে এম মোস্তাহসেনুল বাকীসহ সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে