আকাশে রঙিন আভা ছড়িয়ে নতুন অফিসারদের অভিবাদন, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে বিমান বাহিনীর কক্সবাজার ঘাঁটি

প্রকাশিতঃ 11:23 pm | December 12, 2024

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে যশোরে বিমান বাহিনী একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডের আকাশে নানা বিমানের ওড়াউড়ি। লাল-সবুজের রঙিন আভা ছড়িয়ে চলেছে বৈমানিকদের প্রদর্শনী। মুক্ত আকাশ থেকে অভিবাদন জানানো হচ্ছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নতুন অফিসারদের। দীর্ঘ তিন বছরের কঠোর প্রশিক্ষণের পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৮৫তম বাফা কোর্স এবং শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ১২ জন মহিলা অফিসার ক্যাডেটসহ মোট ৭৪ জন অফিসার যুক্ত হয়েছেন বাহিনীটিতে। বিমান বাহিনী একাডেমির বিভিন্ন ধরনের বিমানের সমন্বয়ে মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট, আকর্ষণীয় এ্যারোবেটিক ডিসপ্লে কিংবা বিমান বাহিনীর চৌকস প্যারাট্রুপারদের হেলিকপ্টার থেকে দৃষ্টিনন্দন প্যারা জাম্পিং-কী ছিল না সেখানে? দৃষ্টি জুড়িয়ে যায় এসব কিছুই অবলোকনে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রথমে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। তিনি গ্র্যাজুয়েটিং অফিসারদের মাঝে পদক এবং ফ্লাইং ব্যাজও বিতরণ করেন। শুরুতে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন নতুন ক্যাডেট কমিশনপ্রাপ্তরা। এ সময় জাতীয় কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতায় তাদেরকে আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। যেখানে দেশের প্রয়োজনে জল, স্থল ও আকাশ পথে যেকোন প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রতিজ্ঞা করেন তাঁরা। বিমান বাহিনী প্রধান মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নবীনদের আকাশসীমা রক্ষায় সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালনের তাগিদ দেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র তিনটি বিমান নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে এখন রয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের আকাশ যান। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে এখনও প্রয়োজন আরও একাধিক উন্নতমানের যুদ্ধ বিমান ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম। এদিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন বিমান বাহিনীতে মাল্টিরোল কম্ব্যাট এয়ারক্রাফট ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দ্রুত অন্তর্ভূক্তির জন্য নিজেদের জোরদার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকার কথা। বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারকে একটি পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটিতে উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে এবং অচিরেই সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, অফিসার ক্যাডেট জান্নাতুল ফেরদৌস মোহনা ৮৫তম বাফা কোর্সের প্রশিক্ষণে সার্বিক কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’, অফিসার ক্যাডেট মোঃ রহমত উল্লাহ শিশির উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে সেরা কৃতিত্বের জন্য ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি’ ও অফিসার ক্যাডেট মোঃ ফাহিম মোর্শেদ রাতুল জেনারেল সার্ভিস প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের জন্য ‘কমান্ড্যান্টস্ ট্রফি’ লাভ করেন। এছাড়াও ৮৫তম বাফা কোর্সে (গ্রাউন্ড ব্রাঞ্চ) সেরা কৃতিত্বের জন্য অফিসার ক্যাডেট মোঃ ফাহিম মোর্শেদ রাতুল ‘বিমান বাহিনী প্রধানের ট্রফি’ প্রাপ্তির গৌরব অর্জন করেন। এই শীতকালীন সেমিস্টারে বীর উত্তম বদরুল আলম স্কোয়াড্রন চ্যাম্পিয়ন বিবেচিত হয়ে একাডেমি পতাকা লাভ করেছেন। বর্ণিল এই কুচকাওয়াজ এর মাধ্যমে ১২ জন মহিলা অফিসার ক্যাডেটসহ মোট ৭৪ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। অফিসার ক্যাডেট একাডেমি সিনিয়র আন্ডার অফিসার আসিফ মাহমুদ আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব প্রদান করেন।

  • বিনম্র চিত্তে জাতির সূর্য সন্তান শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ
  • কিলো ফ্লাইটের দু:সাহসিক সদস্যদের অটল মনোবল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথকে করেছিল সুগম
  • বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধ বিমান

বিনম্র চিত্তে জাতির সূর্য সন্তান শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৮৫তম বাফা কোর্স এবং শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির ঐতিহ্যবাহী ও গৌরবময় শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আজ এই একাডেমি থেকে যেসব অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করতে যাচ্ছে তাদের সকলের প্রতি আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভ কামনা।’

তিনি বক্তব্যের শুরুতেই বিনম্র চিত্তে স্মরণ করেন জাতির সূর্য সন্তান শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যারা দেশমাতৃকার জন্য অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দিয়ে গেছেন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ ও লাল-সবুজের পতাকা। আমি আরও স্মরণ করছি কিলো ফ্লাইটের অকুতোভয় সদস্যদের, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। আমি বিশেষভাবে স্মরণ করছি, গত জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্য দূরীকরণ ও সর্বস্তরে সাম্য ফিরিয়ে আনতে প্রাণ হারানো সকল শহীদ ছাত্র ও অন্যান্য সাধারণ ব্যক্তিবর্গকে। আমি আন্দোলনে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং একই সঙ্গে আহত সকলের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’

কিলো ফ্লাইটের দু:সাহসিক সদস্যদের অটল মনোবল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথকে করেছিল সুগম
বিমান বাহিনী প্রধান ফিরে যান প্রায় ৫৩ বছর আগের ইতিহাসে। ইতিহাস-ঐতিহ্যের গৌরবগাঁথা নিজের কণ্ঠে তুলে এনে বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২৮ সেপ্টেম্বর মাত্র তিনটি পুরনো বিমান নিয়ে কিলো ফ্লাইট নামে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। কিলো ফ্লাইটের দু:সাহসিক সদস্যদের অটল মনোবল, দৃপ্ত প্রত্যয় ও সফল বিমান অভিযান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথকে করেছিল সুগম ও প্রশস্ত। নবগঠিত বিমান বাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর ওপর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে ৫০টি সফল আক্রমণ পরিচালনা করতে সক্ষম হয়, যা আমাদের চূড়ান্ত বিজয়কে করেছিল ত্বরান্বিত। শুধুমাত্র দেশমাতৃকার টানে এবং অকৃত্রিম দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে তৎকালীন বিমান বাহিনীর সদস্যরা তিনটি বেসামরিক বিমানকে বিভিন্ন ধরনের সংযোজন ও পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে যুদ্ধ বিমানে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছিল। আকাশ যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি বিমান বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বপালনসহ স্থলযুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।’

বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধ বিমান
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আজ একটি সুসংগঠিত ও পেশাদার বাহিনীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধ বিমান, সুপরিসর পরিবহন বিমান, আধুনিক হেলিকপ্টার, আনম্যান্ড এয়ার ভেহিকেল, বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা র‌্যাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম। বৈমানিকদের প্রশিক্ষণে উৎকর্ষ আনয়নের লক্ষ্যে সংযোজন করা হয়েছে আধুনিক কমব্যাট ট্রেইনার, জেট ট্রেইনার, হেলিকপ্টার ট্রেইনার, বেসিক ট্রেইনার, হেলিকপ্টার ট্রেইনারসহ বিভিন্ন ধরনের সিমুলেটর। বিমান বাহিনীকে একটি স্বনির্ভরশীল ও উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন বাহিনীতে রূপান্তরিত করতে আমরা রক্ষণাবেক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে আমরা গুরুত্বারোপ করছি। বিভিন্ন বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রাংশ তৈরির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নতুন নতুন রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহোলিং ইউনিট।

  • কক্সবাজারকে একটি পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটিতে উন্নীত করার কাজ চলমান
  • দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির নাম আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিতি
  • দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাই হবে জীবনের প্রধান ব্রত

ইতোমধ্যেই বিমান বাহিনীর নিজস্ব জনবল, কারিগরি দক্ষতা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেসিক ট্রেইনার বিমান তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে এবং একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমান বাহিনী তথা এয়ার পাওয়ার অপরিহার্য। তাই ‘বাংলার আকাশ রাখিবো মুক্ত’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের আকাশসীমার ওপর আগত যেকোন হুমকি বা আক্রমণ মোকাবিলা করতে পরিপূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত আছে। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের অপারেশনাল সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করে মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সর্বক্ষেত্রে স্বনির্ভরশীলতা অর্জনের মাধ্যমে বিমান বাহিনীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এরই ধারাবাহিকতায় বিমান বাহিনীতে মাল্টিরোল কম্ব্যাট এয়ারক্রাফট ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দ্রুত অন্তর্ভূক্তির জন্য আমাদের জোরদার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

কক্সবাজারকে একটি পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটিতে উন্নীত করার কাজ চলমান
সুখবর জানিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারকে একটি পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটিতে উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে এবং অচিরেই সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এয়ার রেজিমেন্ট এবং ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আকাশসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি দেশ গঠন ও আর্তমানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আপনারা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার অভিযান, ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের মানবিক সহায়তামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যরা অসাধারণ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। গত আগস্টে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিমান বাহিনীর সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরসমূহে নির্বিঘ্নে ফ্লাইট উঠা-নামাসহ নিরাপত্তার পরিবেশ ও সেবা কার্যক্রমের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যরা ভবিষ্যতে দেশের যেকোন ক্রান্তিলগ্নে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। দেশের আকাশসীমা ছাড়িয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যরা অসাধারণ পেশাদারিত্ব ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও ভাবমূর্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির নাম আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিতি
বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘দেশপ্রেমে উজ্জীবিত, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা একটি পেশাদার বাহিনীর প্রাণস্বরূপ। বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি থেকে মৌলিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সূচনা করে তাঁর সামরিক জীবন। এখান থেকে তৈরি হয় বিমান বাহিনীর একেকজন দক্ষ কর্মকর্তা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির নাম আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিতি লাভ করেছে। বন্ধুপ্রতীম বিভিন্ন দেশের অফিসার ক্যাডেটগণ এই একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতে এই একাডেমির নাম বিশ্ব দরবারে আরও ব্যপ্তি লাভ করবে বলে আমি মনে করি।’

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাই হবে জীবনের প্রধান ব্রত
প্রিয় নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি তোমাদের জীবনে অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের। আজ থেকে তোমাদের ওপর অর্পিত হচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাই হবে তোমাদের জীবনের প্রধান ব্রত। বিমান বাহিনীর একাডেমি থেকে তোমরা যে প্রশিক্ষণ তোমরা গ্রহণ করেছো তার যথাযথ অনুশীলন ও প্রয়োগের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা অর্জনে তোমাদেরকে সদা সচেষ্ট হতে হবে। মনে রাখবে, সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আকাশ প্রতিরক্ষার ভবিষ্যত কর্ণধার হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলাই হবে তোমাদের জীবনের সর্বোচ্চ সফলতা।

প্রযুক্তিনির্ভর আকাশ যুদ্ধ এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদেরকে সর্বদা প্রস্তুত রাখতে হবে। এজন্য তোমাদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে যোগ্য হতে হবে এবং অবশ্যই উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। আত্মপ্রত্যয়, দৃঢ় মনোবল ও উন্নত পেশাদারিত্বের মাধ্যমে প্রতিটি কাজে উদ্যমী মনোভাব ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দেশ ও বিমান বাহিনীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং একটি সমৃদ্ধ বিমান বাহিনী বিনির্মাণে তোমাদের কর্ম ও পথচলা হবে সাহসী ও বলিষ্ঠ। উদীয়মান, সৎ ও তেজোদীপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে প্রিয় বিমান বাহিনীকে তোমরাই নিয়ে যাবে সফলতার স্বর্ণশিখরে। আজকের দিনে তোমাদের কাছে এটিই আমার প্রত্যাশা। এই আনন্দঘন মুহুর্তে আমি তোমাদের সকলের ভবিষ্যত কর্মজীবনের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও অব্যাহত সাফল্য কামনা করছি।’

কালের আলো/এমএএএমকে