গর্ব আর অহঙ্কারের মহান বিজয় দিবস আজ
প্রকাশিতঃ 12:06 am | December 16, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
বাঙালি জাতির ইতিহাসে আজ অবিস্মরণীয় দিন। চির অম্লান দিনটি গর্ব আর অহঙ্কারেরও। আজ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের গৌরবের-বাঁধভাঙা আনন্দের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এটিই প্রথম বিজয় দিবস।
দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল যে বাংলাদেশ, এদিন তার ৫৩ বছর পূর্তি উদযাপন করবে জাতি। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেটির উদয় ঘটে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে। বহু শতাব্দীর স্বপ্ন-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। অবর্ণনীয় দুর্যোগে লণ্ডভণ্ড হওয়া বাংলাদেশের বঞ্চিত ও শোষিত মানুষ রুখে দাঁড়ায় সর্বশক্তি দিয়ে। আত্মবিস্মৃত বাঙালি আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে উৎসর্গ করে নিজ ও স্বজনকে। ছিনিয়ে আনে বিজয়, লাল-সবুজ পতাকাসংবলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। পূর্বাচলে আজ উদিত যে-সূর্য, প্রতিদিনের হয়েও সে প্রতিদিনের নয়; তার রক্তিমতায় ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আমাদের মনে পড়বে; আকাশ যে-কোমলতায় আজ উদ্ভাসিত, একাত্তরের সম্ভ্রমহারা দশ লাখ মা-বোন-জায়ার ক্রন্দনধোয়া সে-উদ্ভাস। ভোরের যে-রাঙা আলোটি আজ স্পর্শ করেছে ভূমি, স্বদেশের সেই পবিত্র ভূমি ভিজে আছে শহীদের রক্তে।
স্বাধীনতার উত্তাল তরঙ্গে আন্দোলিত এই জাতির ওপর ২৫ মার্চ কালরাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত মানুষের ওপর বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠলে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিরা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান, বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ও বিজয়ের এই দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ উৎসবের রঙে সেজেছে। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ সর্বত্র লাল-সবুজ আলোকসজ্জা চোখে পড়ছে। সারা দেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ নয় মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। এলো হাজার বছরের চির আরাধ্য স্বাধীনতা। পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অর্জন করে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি, লাল-সবুজের অহঙ্কৃত পতাকা, বিশ্বমানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে নিজেদের গর্বিত পরিচয়। বিজয়ের মুক্তির নিশান ওড়ে বাংলার সর্বত্র। রক্ত লাল পতাকায় সিঞ্জিত হয় বাঙালির চেতনা।
আজ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনৈতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
১৬ ডিসেম্বর সরকারি ছুটির দিন। যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সেদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। টেলিভিশনে প্রচার করা হবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রান্তের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ