ইতিহাসের বুকে দীপ্ত জাজ্বল্যমান, কর্মে মহীয়ান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান
প্রকাশিতঃ 12:25 am | December 16, 2024
এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:
কোন কোন ঘটনা বা নাম সময়কে ছাপিয়ে হয়ে ওঠে, হয়ে যায় চিরন্তন। তাঁর নামটি স্মরণ করা মাত্র যুগের পর যুগ ধরে মানুষ তাকে চিনতে ও মনে করতে পারবেন সহজেই। গণমানুষের স্মৃতিতে যিনি থাকেন উদ্ভাসিত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিপুল রক্তক্ষয়কে আর দীর্ঘায়িত না করতে নিপীড়িত ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ান। দেশ ও জনগণের স্বার্থে অসীম সাহস ও দূরদৃষ্টিতে কালজয়ী এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাঁর পরিশুদ্ধ বিবেক ও নীতিনৈতিকতার মহিমায় স্বার্থক রূপান্তর ঘটে জুলাই-আগস্টের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থানের। ঐতিহাসিক এই বাঁকবদলে ইতিহাসের বুকে স্বর্ণাক্ষরে লেখা এমনই একটি নাম জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৮তম সেনাপ্রধান। ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে ন্যায়বিচার, সুশাসন ও গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে জুলাই বিপ্লবকে স্বার্থক উপসংহারে পৌঁছে দিতে আদিগন্ত সূর্যের মতোই তিনি সত্যের কাঠিন্যে হয়েছিলেন অত্যুজ্জ্বল।
- জুলাই বিপ্লবকে স্বার্থক উপসংহারে পৌঁছে দিতে আদিগন্ত সূর্যের মতোই সত্যের কাঠিন্যে হয়েছিলেন অত্যুজ্জ্বল
- তাঁর নেতৃত্বের গভীরে প্রোথিত মানুষের কল্যাণমুখী চিন্তা-চেতনার নিরঞ্জন বিচয়ন
- দৃঢ়, সাহসী ও কুশলী নেতৃত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন অগ্নিপরীক্ষায়
- জনজীবনে শান্তি-স্বস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে অগ্রগতির মিছিলে শামিল করেছেন দেশকে
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় ফলত ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান প্রকৃত অর্থেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জনগণের লড়াই ও প্রত্যাশারই ধারাবাহিকতা। আর এই প্রত্যাশা পূরণে বিশ্ববরেণ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে সাফল্য আর সমৃদ্ধির মহাসোপানমুখী করতে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নিয়ামকের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। সকল ষড়যন্ত্র-বেড়াজাল ছিন্ন করে দেশকে স্থিতিশীল করে জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে অগ্রদূত হিসেবে প্রতিভাত করেছেন দেশপ্রেমিক বাহিনীটিকে। শান্তি ও সম্প্রীতির সম্মিলনে দৃঢ়, সাহসী ও কুশলী নেতৃত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে শুধু তিনি অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণই হননি, জনজীবনে শান্তি-স্বস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে অগ্রগতির মিছিলে দেশকে শামিল করতেও সক্ষম হয়েছেন।
তাঁর নেতৃত্বের গভীরে প্রোথিত মানুষের কল্যাণমুখী চিন্তা-চেতনার নিরঞ্জন বিচয়ন। বিচক্ষণ ও লড়াকু এমন সেনাপ্রধানের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুনরায় সমগ্র জাতির আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। অবিচল নিষ্ঠা-আন্তরিকতায় দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের সঙ্গে একাত্ম করেছেন নিজেদের। কোন অবস্থাতেই তিনি এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দিবেন না, এমন গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দিয়েছেন একাধিকবার। জানান দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থনের কথাও। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘আমি তাঁর পাশে থাকব। যা-ই হোক না কেন। যাতে তিনি তাঁর মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।’
প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসও ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপুল রক্তক্ষয়ী আন্দোলন সফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি বরাবরই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বিশ্বজুড়ে খ্যাতিমান এই সরকারপ্রধান মনে করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্রবাহিনী দেশের মানুষের কাছে ‘আস্থার প্রতীক’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তিনি বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এবং তৎপরিবর্তিত সময়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বরাবরের মত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের ছাত্র জনতা ও সাধারণের পক্ষে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী আবারও দেশের মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।’
যেকোনো রাজনৈতিক বিজ্ঞানের সংজ্ঞাই বলবে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান স্বতঃস্ফূর্ত একটি গণঅভ্যুত্থান। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল সৌন্দর্য। একটি বিপ্লব, একটি অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গাটিই হলো মানুষে মানুষে সংহতিবোধ। কার কী দল, কার কী মত, কার কী পরিচয় সেটিকে পেছনে রেখে ছাত্র-নাগরিক জুলাই-আগস্টে পথে নেমেছিল। সেই পথেই তৈরি হয়েছিল নিজেদের মধ্যকার অভূতপূর্ব সংহতি। এই ঐক্য ও সংহতির শক্তিতেই দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের বিপুল এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হয়। ছাত্র-জনতার হৃদস্পন্দন অনুভব করেই অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি আগস্ট বিপ্লবে দু:সাহসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে হয়তো ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো বলেও মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।
তাঁরা বলছেন, সেনাপ্রধান ইচ্ছা করলেই ক্ষমতার মঞ্চে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে পারতেন। ওয়ান ইলেভেন ফরমেটে দেশ পরিচালনা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি প্রমাণ করেছেন সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষা নেই। ক্ষমতার মোহও তাকে টানে না কখনও। ক্ষমতার প্রশ্নে নির্মোহ থেকে জাতির কাছ থেকে তিনি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। অন্ধকার তাড়িয়ে আলোর পথে দেশকে এগিয়ে নিতে সামষ্টিক জন-অভিপ্রায়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও বহুত্ববাদী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যাত্রায় ঈর্ষণীয় উদাহরণ তৈরি করেছেন। অবিচলভাবে মাতৃভূমির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দিন-রাত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। যার মাধ্যমে সূচিত হয়েছে সম্ভাবনার নতুন পথ। সমাজ ও ইতিহাসে দীর্ঘদিন এর প্রভাব থাকবে। দুই বাহু প্রসারিত রংপুরের আবু সাঈদ ওঠে এসেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে। বীর আবু সাঈদ জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের প্রধান প্রতীক। যেকোনো পরিবর্তন যেমন সম্ভাবনা তৈরি করে, তেমনি তৈরি করে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ। ইতিহাসে যেসব বড় পরিবর্তন বা বিপ্লব সফল হয়েছে, সবগুলোকেই প্রতিবিপ্লবের চাপ সহ্য করতে হয়েছে। প্রতিবিপ্লবের ঢেউ সামলাতে দীর্ঘ সময় লাগার নজিরও রয়েছে। বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজবিজ্ঞানী সি রিট মিল বলেছিলেন- ‘প্রতিবিপ্লব প্রমাণ করে যে বিপ্লব দরকারি হয়ে পড়েছিল এবং সমাজে যে আসলেই বিপ্লব ঘটেছে, তা-ও নিশ্চিত করে।’
বিপ্লব পরবর্তী উর্বর ভূমিতে আন্দোলনের ‘শত ফুল’ ফুটতে দেখা যায়। অন্তর্বর্তী সরকারকে অচল করতে আনসার বিদ্রোহ, দাবি-দাওয়ার অজুহাতে নানা আন্দোলন, গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মাঝে অহেতুক আতঙ্ক তৈরির অপচেষ্টা, বন্যার ধকল মোকাবিলাসহ ইত্যাকার নানা ঘটনাপ্রবাহ দৃষ্টি এড়ায়নি কারও। জনরোষে মনোবল হারানো পুলিশকে সক্রিয় করে থানাগুলোকে সচল করা ছিল বড় এক চ্যালেঞ্জ। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে, ঠেকিয়ে দেয় নানামুখী ষড়যন্ত্র। নিরাপত্তা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতে সব শঙ্কা-ভয় কাটিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা পালন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সেনাবাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পুলিশ।
একটি বিবেকবান জাতি গঠন ও বাংলাদেশ স্বপ্নের প্রজ্বালনে শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, চড়াই-উতরাই ভেঙে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর নেতৃত্বে গভীর দেশপ্রেমের নির্যাসে, রঙিন আলোর মহিমান্বিত পরশে বাঙালি জাতির জীবনে নতুন প্রভাতে উজ্জ্বল বাতিঘরের মতো জাজ্বল্যমান আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। রণনে-অনুরণনে উদ্দীপ্ত করেছে নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে। আলোকবর্তিকার মতো বারবার জানান দিয়েছে সাফল্যমণ্ডিত অস্তিত্ব। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে গত ৩৭ বছর ধরে ব্লু-হেলমেটের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে দেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নিজ দেশেও সঙ্কটময় মুহুর্তে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নি:স্বার্থ মানসিকতায় দেশ ও জনগণের পাশে থেকে দায়িত্বশীলতা, সততা ও নিষ্ঠার অনন্য দৃষ্টান্ত রচনা করেছেন। কত রক্ত ঘামের বিনিময়ে মিলেছে এমন ইপ্সিত গন্তব্য।
কালের আলো/এমএএএমকে