নতুন দেশে নবজাগরণের বিজয় দিবস
প্রকাশিতঃ 9:29 am | December 16, 2024
মো.দেলোয়ার হোসাইন/আব্দুল্লাহ আল নোমান/আব্দুল হামিদ:
আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম এবং বহু প্রাণের বিনিময়ে বীর বাঙালি ছিনিয়ে এনেছে বিজয়ের লাল সূর্য। ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর বাঙালি পেয়েছে এক নতুন দেশ। নতুন দেশে তাই এবারের বিজয় দিবসের আনন্দে নতুন যোগ করেছে। এবারের বিজয় দিবস নিয়ে নিজেদের ভাবনার কথা বলেছেন দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা প্রশাসনিক ও কর্মক্ষেত্রগুলোকে যথাসম্ভব দুর্নীতিমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের আলোয় আলোকিত একটি সমাজ চান তাঁরা। তাদের কাছে, জুলাই আন্দোলনের পর এবারের বিজয় মানেই একটি নবজাগরণ।
চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী হুমাইরা খানম জেরীন মনে করেন বিজয়ের এই ৫৩ বছরে নজর দিতে হবে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সামগ্রিক ক্ষেত্রে।’ তিনি চান এবারের বিজয় দিবসে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে একটি সম্প্রীতির ও সম্ভাবনার সোনার বাংলাদেশ। এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ডিসেম্বর মানে বাঙালির মুক্তি, চেতনা ও অজস্র শহীদের রক্তে রঞ্জিত ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির এই বিজয়কে ঘিরে আমাদের বুকে জেগে ওঠে নতুন স্বপ্ন, আশা ও বিশ্বাস। যে সামাজিক সংহতির ভাবমূর্তিকে সামনে রেখে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই সংহতিকে সমুন্নত রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক প্রাঙ্গণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রশাসনিক ও কর্মক্ষেত্রগুলোকে যথাসম্ভব দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। আনতে হবে জবাবদিহির আওতায়।’
বিজয় দিবস আমাদের জাতির ত্যাগ, সংগ্রাম ও গৌরবের প্রতীক-বলছিলেন আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার। তিনি বলেন, ‘বিজয়ের দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দেশের স্বাধীনতার জন্য আমাদের লাখো শহীদের অমূল্য আত্মত্যাগের কথা। তবে ৫৩ বছর পরও প্রশ্ন ওঠে—আমরা কি সেই চেতনা ধারণ করতে পেরেছি? আমি চাই এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে বৈষম্য থাকবে না। সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে। প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়বিচার। বিজয় দিবস হোক নতুন শপথ নেওয়ার দিন, মানবিক ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হোক। আনুষ্ঠানিকতার বাইরে গিয়ে সকলে মিলে কাজ করলে, তবেই বিজয়ের সম্মান সত্যিকার অর্থে রক্ষা পাবে। স্বাধীনতা আমাদের অহংকার, তাই এর মর্যাদা রক্ষা করাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস’র শিক্ষার্থী জাহিন বলেন, ‘এই বিজয় দিবসে আমার চাওয়া হলো, আমরা যেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই অদম্য, দৃঢ়তা, সাহস ও সংকল্প নিয়ে বর্তমানের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি। আমি এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে যোগাযোগ, নেতৃত্ব এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার মতো মূল্যবান দক্ষতাগুলো জাতীয় উন্নয়ন ও প্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই দিনটি আমাদের অনুপ্রাণিত করুক। যে অনুপ্রেরণার মাধ্যমে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। যেখানে সব মানুষ সমান সুযোগ ও অধিকার নিয়ে এগিয়ে যাবে। এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে, যে দেশ আমাদের শহীদদের গর্বিত করবে।’
‘বৈষম্যহীন স্বাধীন দেশের আকাক্সক্ষায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে অর্জিত বিজয়ের তাৎপর্য মিশে আছে এই জাতির অস্তিত্বে’- এমন ভাষ্য পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই বিজয় অর্জিত হয়েছে। তবে অর্জিত বিজয়ের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এবার আমাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সব ধরনের অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সামরিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে। দেশের বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে কাজে লাগিয়ে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। আমরা সুশিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও দেশপ্রেমিক প্রজন্ম চাই।’
‘বিজয় দিবস আমাদের দিয়েছে আত্মপরিচয়ের ঠিকানা’-বলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোতালেব হোসেন। এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘৫৩ বছর আগে লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের। বিজয় দিবস আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতার প্রতীক। বিজয় দিবসে আমার প্রত্যাশা, সোনার বাংলা হবে এমন এক দেশ, যেখানে দারিদ্র্য ও শোষণের কোনো স্থান থাকবে না। প্রতিটি মানুষ তার প্রাপ্য অধিকার নিয়ে শান্তি ও সম্মানের সঙ্গে বাঁচবে। আমাদের মেধাবী ও উদ্ভাবনী তরুণেরা তাদের প্রতিভা দিয়ে দেশকে বিশ্বদরবারে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের আলোয় আলোকিত হবে আমাদের সমাজ।’
জুলাই আন্দোলনের পর এবারের বিজয় বাংলাদেশিদের জন্য একটি নবজাগরণ-এমন অভিমত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহান ইবতেশাম জয়’র। তিনি বলেন, ‘মহান বিজয় দিবস নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য একটি গৌরবের দিন। দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। জুলাই আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ, নতুন স্বপ্ন, সবকিছু নিয়েই আমাদের নতুন করে পথচলা শুরু। বিজয় দিবসে আমি শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। পাবলিক-প্রাইভেট-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেদাভেদের অবসান চাই। যোগ্যতার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন চাই। আমি চাই বেকারত্বের সমাধান, আমি চাই মানুষের অর্থনৈতিক-সামাজিক মুক্তি।’
কালের আলো/ডিএইচ/এমকে