বিমান বাহিনীতে প্রথমবারের মতো ফ্লাইং অফিসার পদবীতে কমিশন, সমৃদ্ধ করবে বিমান সেনাদের পেশাদারিত্বকে
প্রকাশিতঃ 9:37 pm | December 16, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
চিরগৌরবের মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশ নামে নতুন একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের আত্মপ্রকাশের দিনটিতেই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে প্রবর্তন হয়েছে অনারারি কমিশন। ১১ দিন আগে বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৫২তম নব বিমানসেনা দলের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে এমন সুসংবাদ দিয়েছিলেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। ৫৩ পেরিয়ে ৫৪ তে পা দেওয়া দেশটির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার বর্ণিল আনন্দের দিনটিতে নিজের প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করলেন বিমান বাহিনী প্রধান।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বিমান বাহিনী সদর দপ্তরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে প্রথমবারের মত মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার পদবির জেসিওদেরকে অনারারি কমিশন প্রদান করা হয়। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনারারি কমিশন প্রাপ্ত অফিসারদেরকে ফ্লাইং অফিসার পদবির র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। অসাধারণ পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আনুগত্যের সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ে এবং স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে বিশেষভাবে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বিজয় দিবসে বিমান বাহিনীর ১৫ জন মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার পদবির জেসিওকে সম্মানসূচক এই অনারারি ফ্লাইং অফিসার পদবিতে অনারারি কমিশন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন দেশ মাতৃকার জন্য অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করা জাতির সূর্য সন্তান শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও কিলো ফ্লাইটের অকুতোভয় সদস্যদের বিনম্র চিত্তে স্মরণ করেন। গত জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্য দূরীকরণ ও সর্বস্তরে সাম্য ফিরিয়ে আনতে প্রাণ হারানো সকল শহীদ ছাত্র ও অন্যান্য সাধারণের প্রতি হৃদয়ের মর্মমূল থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানান। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অনারারি কমিশন প্রবর্তনের মাধ্যমে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিমান বাহিনী প্রধান। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই কমিশন প্রদান বিমান সেনাদের পেশাদারিত্বকে সমৃদ্ধশালী করতে উৎসাহিত প্রদান করবে।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বিমান বাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার থেকে অনারারি ফ্লাইং অফিসার পদে কমিশনপ্রাপ্তরা হলেন- মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার এসএম রবিউল হাসান, বিপিপি, রেডিও ফিটার, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুল আউয়াল, জেনারেল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার মো: নূরে আলম সিদ্দিকী, আর্মামেন্ট ফিটার, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার মো: আবুল হোসেন, এয়ারফ্রেম ফিটার, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার মো: মাসুদ উজ্জামান, বিপিপি, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইন্সট্রুমেন্ট ফিটার, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার মো: রবিউল ইসলাম, সেক্রেটারিয়াল এসিস্ট্যান্ট (জেনারেল ডিউটিস), মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার ইব্রাহীম সরদার, ইঞ্জিন ফিটার, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার মো: নজিমুল হক, বিপিপি, রেডিও ফিটার, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার এস এম হাফিজুর রহমান, প্রশাসনিক সহকারী, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ বাহারুল ইসলাম, প্রভোস্ট, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার এস এম আতিকুল রহমান, চিকিৎসা সহকারী, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার খোন্দকার বদিউল আলম, ইঞ্জিন ফিটার, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার মো: শহীদুল ইসলাম, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, মাস্টার ওয়ারেন্ট গোলাম মোস্তফা, রেডিও ফিটার, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ ওবায়দুল হক, ফিজিক্যাল ফিটনেস এন্ড ড্রিল ইন্সট্রাক্টর। এই অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধানরা, ঘাঁটি ও ইউনিটের এয়ার অধিনায়ক, বিমান সদরের পরিচালকরাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ‘বাংলার আকাশ রাখিবো মুক্ত’ এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছে। একটি স্বনির্ভর, শক্তিশালী ও গৌরবোজ্জ্বল বিমান বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যেই বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধ বিমান, সুপরিসর পরিবহন বিমান, সামরিক সক্ষমতা সম্পন্ন আর্মড হেলিকপ্টার, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা র্যাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও যুগোপযোগী সামরিক সরঞ্জাম। দেশের আকাশসীমার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার অভিযান, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, সেনা ও নৌবাহিনী এবং অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে দেশ গঠন ও আর্তমানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে দেশপ্রেমিক এই বাহিনীটি। একই সঙ্গে দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরসমূহের সকল ফ্লাইটে নির্বিঘ্নে উঠা-নামাসহ নিরাপত্তা পরিবেশ ও সার্বিক কার্যক্রম স্থিতিশীল রাখতেও তাদের উজ্জ্বল ভূমিকা নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
কালের আলো/এমএএএমকে