বাবরসহ ৭ জন খালাস, ছয় জনের ১০ বছর কারাদণ্ড

প্রকাশিতঃ 9:12 pm | December 18, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় (বিশেষ ক্ষমতা আইন) করা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সাত জনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ছাড়া উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অপর ছয় জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

খালাস পাওয়া সাত জন হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুরমজ্জামান বাবর, একেএম এনামুল হক, মহসিন উদ্দিন তালুকদার, সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও মেজর জেনারেল (অবসর) রেজ্জাকুল হায়দার, পলাতক আসামি সাবেক সচিব নুরুল আমিন ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম। তবে মৃত্যুজনিত কারণে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে মামলা অকার্যকর ঘোষণা করে খালাস দিলেও তার ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত।

রায়ে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ছয় জন হলেন-ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন, হাজী এমডি আব্দুস সোবহান, দীন মোহাম্মদ, মেজর অবসরপ্রাপ্ত লিয়াকত হোসেন, হাফিজুর রহমান হাফিজ, উইং কমান্ডার শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। পাঁচজন আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। লুত্ফুজ্জামান বাবরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, এ মামলায় ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। তাদের ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে আজ রায় হয়েছে। এই রায়ে খালাস পেয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে চারজন মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে খালাস পেয়েছেন। পলাতক নুরুল আমিনও খালাস পেয়েছেন।

ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করায় মতিউর রহমান নিজামী ও আব্দুর রহিমের আপিল অ্যাবেটেড (বাদ) হয়ে গেছে। বাকি ছয়জনকে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় ভারত চলে যাওয়া পরেশ বড়ুয়াকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত। ১৪ জনের মধ্যে মোট সাতজন খালাস, ছয়জনের ১০ বছর এবং একজনের যাবজ্জীবন।

লুৎফুজ্জামান বাবরের বিষয়ে শিশির মনির বলেন, দ্বিতীয় তদন্তের ভিত্তিকে তাকে প্রধান আসামি করা হয়। আদালত তাকে আজ খালাস দিয়েছেন এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি (বাবর) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভিকটিম। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারেনি। তকে বাবর সাহেবের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের মামলাটি এখন চলমান থাকায় তিনি কারামুক্তি পাচ্ছেন না।

জামায়াতের সাবেক আমিরের বিষয়ে শিশির মনির বলেন, আমরা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে ছিলাম। তিনি মৃত্যুবরণ করায় মামলাটি অ্যাবেট হয়ে গেছে। কিন্তু যে জরিমানা ছিল, তা থেকে অন মেরিটে খালাস পেয়েছেন। ফলে এ মামলায় তিনি খালাস পেলেন। এর আগে, গত ৬ নভেম্বর এ শুনানি শুরু হয়।

২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাকঅস্ত্র আটক সংক্রান্ত দুটি মামলার মধ্যে চোরাচালান মামলায় (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (ফাঁসির দণ্ড কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমানের আদালত।

অস্ত্র আইনের মামলা:

২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাকঅস্ত্র আটক সংক্রান্ত দুটি মামলার মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (ফাঁসির দণ্ড কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত। এ ছাড়া অস্ত্র আটক মামলার অপর ধারায় সাত বছর কারাদণ্ড দেন বিচারক। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানাও প্রদান করা হয়।

এই মামলাটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অন্য ১১ আসামিরা হলেন- এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম, ডিজিএফআই’র সাবেক পরিচালক (নিরাপত্তা) অবসরপ্রাপ্ত উইং কমাণ্ডার সাহাবুদ্দিন আহমেদ, এনএসআই’র সাবেক উপ-পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, এনএসআই’র সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসিনউদ্দিন তালুকদার, সিইউএফএলর সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এমএনামুল হক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমিন, চোরাচালানি হিসেবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান, অস্ত্রখালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহকারী দীনমোহাম্মদ ও ট্রলার মালিক হাজী আবদুস সোবহান।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ