বিওএ ম্যারাথনে ছন্দ-গতির সকাল, জীবনের জয়গানে দৌড়বিদরা
প্রকাশিতঃ 8:25 pm | December 20, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
শীতের সকাল বৈচিত্র্যময় এক রূপেই ধরা দিলেন দৌড়বিদরা। শীতল হাওয়াকে উবে দিয়ে কুয়াশার চাদর পেরিয়ে ছন্দ আর গতিময়তায় তাঁরা ছুটে চললেন ঢাকার পূর্বাচলের জলসিঁড়িতে। সবশেষে কেউ হন প্রথম, কেউ আবার শেষ। কোন রূপকথার রাজ্য নয়। দেশের সম্মিলিত দৌড়বিদদের জীবন্ত এক ছবি। বিশালতার উপমায় যেখানে সমস্বরে সবাই গেয়ে উঠলেন জীবনের জয়গান। এমন সফল রূপায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) ম্যারাথন।
এলিট, জেনারেল ও ভ্যাটারার্ন এই তিন ক্যাটাগরিতে যেখানে অংশগ্রহণ করেন মোট ৫ হাজার ১১৬ জন ম্যারাথনার। ম্যারাথনটিতে দেশের পেশাদার, অপেশাদার এবং বয়স্ক দৌড়বিদদের জোড়া জোড়ায় পা রাখার দৃশ্য নজর কাড়ে। এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) এই ম্যারাথন আয়োজন ও সম্পন্ন করে সক্ষমতার জ্যোতির্বলয়ে নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
তরুণদের পাশাপাশি সব বয়সীদের স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আত্মার স্পন্দনে স্মৃতিরেখায় তাঁরা নিজেদের উদ্ভাসিত করেছেন আপন আলোয়। এদিন ম্যারাথনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন আয়োজন জনসাধারণকে স্বাস্থ্য সচেতন এবং যুব সমাজকে ক্রীড়ামুখী করে তুলবে বলে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, অনন্য সুন্দর এমন আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন দেশ ও জাতি গঠনে একটি বিশেষ অবদান রাখতে পারে।
- একরাশ সজীব স্বপ্নে দেশের দৌড়বিদদের এ যেন অনবদ্য এক মিলনমেলা
- সক্ষমতার জ্যোতির্বলয়ে নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন
-
বছরে দু’বারের বেশি ম্যারাথন আয়োজনের ঘোষণা সেনাপ্রধানের
পৌষের শীত আর কুয়াশার আড়মোড়া ভেঙে তখনও জেগে ওঠেনি ইট-পাথরের যান্ত্রিক রাজধানী। আলস্যের চাদর অবমুক্ত করে কুয়াশার ধূম্রজাল চিরে এই সময়টিতে জেগে ওঠে ঢাকার জলসিঁড়ির আবাসন প্রকল্প এলাকা। শিশিরমাখা, শিরশিরে বাতাসে শুধুমাত্র দেশের দৌড়বিদদের একরাশ সজীব স্বপ্নে এ যেন এক অনবদ্য মিলনমেলা। যেখানে পুরো উদ্যমে ছুটে চলেন দৌড়বিদরা। আবার দৌড় শেষ করে তাঁরা প্রকাশ করেন উচ্ছ্বাস। অনেকেই তুলে ধরেন নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) নতুন সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার প্রায় দু’মাসের মাথায় তরুণ-যুবাসহ সব বয়সী মানুষের মাঝে শরীর চর্চা ও সুস্থ জীবনযাপন এবং ক্রীড়াবান্ধব মানসিকতা গড়ে তুলতে বিওএ ম্যারাথনের মতো দ্রুত একটি বড় উদ্যোগ গ্রহণ ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। এই ম্যারাথনটিতে ভিন্নতার কারণ হচ্ছে-এখানে বিদেশি কোনো দৌড়বিদ ছিলেন না। শুধু দেশি অ্যাথলেটরা অংশ নিয়েছেন। এই ম্যারাথনে বিজয়ী ৯০ জনকে মোট পৌনে ১ কোটি টাকার অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
বিওএ সূত্র জানায়, বিওএ ম্যারাথনে ১০ কিলোমিটার রেস ও হাফ ম্যারাথন ২১ দশমিক ১০ কিলোমিটার দূরত্বে দুটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিরা ভ্যাটারান ক্যাটাগরিতে দৌঁড়েছেন। যারা পেশাদার এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তাঁরা ছিলেন এলিট বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ১৮ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সাধারণ একটি ক্যাটাগরি ছিল।
চলতি বছরের বিওএ ম্যারাথনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দিয়েছেন নতুন সুসংবাদ। তিনি বলেছেন, আগামী বছর থেকে বছরে দু’বারের বেশি ম্যারাথন আয়োজন করতে পারে বিওএ। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং দেশের বিভিন্ন বিভাগে পর্যায়ক্রমে ম্যারাথন আয়োজন করা হবে।
সেনাপ্রধান প্রতিযোগীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আরও বলেন, ‘অনেক প্রতিযোগী এখানে এসেছেন। আজকে আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বয়সের প্রতিযোগীরা দৌড়েছেন। আমি সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের এখানে ৫ হাজারের বেশি ম্যারাথনাররা ছিলেন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৭৫১ জন পুরুষ ও ৩৬৫ জন মহিলা। আমি আশা করবো ভবিষ্যতে মহিলা প্রতিযোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। জাতির মধ্যে ম্যারাথন ছড়িয়ে দেওয়া ও সবার আগ্রহ সৃষ্টির জন্য তাঁরা কাজ করে যাবেন।’
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. ফয়জুর রহমান, বিওএ’র মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সভাপতি ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে