নির্বাচন ইস্যুতে হার্ডলাইনে যাচ্ছে বিএনপি

প্রকাশিতঃ 11:15 am | December 22, 2024

মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার টাইমফ্রেম নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারছে না দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ নিয়ে নিজের হতাশার কথাও জানিয়েছিলেন। দলটি চায় নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ। ইতোমধ্যেই দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হার্ডলাইনে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যেই এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকেই কর্মসূচি শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতারা। ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ১২ দলীয় জোটের নেতারাও। তারা মনে করেন, ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন আদায় করতে না পারলে সেটা নানা কারণে আরও বিলম্বিত হতে পারে। তাই নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে হবে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে এমন মতামত দিয়েছেন ১২ দলীয় জোটের নেতারা।

জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আন্দোলন ইস্যুতে নতুন কর্মকৌশল ঠিক করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে চলমান পরিস্থিতি, নির্বাচন ও মাঠের কর্মসূচির বিষয়ে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে শুরু করেছে তাঁরা। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করার কথা রয়েছে। সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার এই মুহূর্তে মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্য ‘অস্পষ্ট’। তারা স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ চান। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত। নেতারা এও মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করে তুলতে বহু আয়োজন চলছে, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও নানা অশুভ চক্র। এসব বিবেচনায় রেখেই সরকারকে প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে। সরকারের কাজের গতি ও দক্ষতা থাকলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। তারা আশা করেন, প্রধান উপদেষ্টা, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করবেন। যেন কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি না হয়।

২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে, কোনোভাবে ২০২৬ সালে নেওয়া যাবে না
এদিন সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে জোট নেতাদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে তাদের জানানো হয়, নির্বাচন নিয়ে তাদের মতামত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হবে। নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরা হবে।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১২ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। সমমনা জোটসহ আরও যারা আছে তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারপর আমরা আপনাদের সিদ্ধান্ত জানাব।

জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ১২ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক হয়েছে। আগামী দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচি কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। আজ আমরা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি।

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। ঐক্যবদ্ধই আছি। আমাদের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা এখনও ফুরিয়ে যায়নি। বিএনপির সঙ্গে আরও যারা রাজনৈতিক দল আছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বৈঠক শেষে ১২ দলীয় জোটের নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আগামী নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের মতামত বিএনপিকে দিয়ে এসেছি।

১২ দলীয় জোটের শরিক একটি দলের শীর্ষ একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের জোটের সবার মতামত ছিল আগামী নির্বাচন ২০২৫ সালের মধ্যে করতে হবে। সেটাকে কোনোভাবে ২০২৬ সালে নেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, বিএনপি মনে করে দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পরিকল্পিতভাবে কিছু ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। সেটা তারা পর্যবেক্ষণ করছে। নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ নানা ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়ার প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সেটা বিএনপি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ। আর ১২ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে ছিলেনÑজোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, শাহাদাত হোসেন সেলিম, সৈয়দ এহসানুল হুদা, ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, রাশেদ প্রধান, লায়ন মোহাম্মদ ফারুক রহমান, শামসুদ্দিন পারভেজ, মাওলানা আব্দুল করিম, অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম, মো. লিটন মিয়া, ইমরুল কায়েস প্রমুখ।

কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে