জনপ্রশাসনের উদ্দেশ্য পুননির্ধারিত হওয়া দরকার: বদিউল আলম মজুমদার
প্রকাশিতঃ 5:09 pm | December 24, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
সুজনের সম্পাদক এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বৃটিশ আমলে সৃষ্টি হওয়া আমাদের জনপ্রশাসনের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও কার্যক্রম পুননির্ধারিত হওয়া দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত গত ৫২-৫৩ বছরে সেটি ঘটেনি।
জনপ্রশাসনকে জনগণের প্রশাসন করা দরকার এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করা দরকার। কিন্তু সেটি হয়ে উঠেনি।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: জনপ্রশাসন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
আলোচনা সভায় ড. বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, সংস্কারের অনেক মূলা আমাদের সামনে ঝুলানো হয়েছে। কিন্তু সেগুলো আমাদের ঘরে উঠেনি। সংস্কারের যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তার সুফল আমরা পাইনি বরং ছিনতাই হয়ে গেছে। সংস্কারের যে মূলা ঝালানো হয়েছিল ২০০৭-২০০৮ সালে, সেটি তখন ছিনতাই হয়ে গেছে। গত সরকার ২০০৮ সালে দিন বদলের সনদ তাদের নির্বাচনের ইশতিহারে ঘোষণা করেছিল। হ্যাঁ, দিন বদল হয়েছে, দিন থেকে রাত হয়েছে, কিন্তু রাত থেকে আর দিন হয়নি। তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কোনো দলীয়করণ হবে না অঙ্গীকার করেছিল। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদির অবসান ঘটবে বলেছিল। সম্পদের হিসাব দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। বরং দিন থেকে রাত হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, তখন যদি সংস্কারগুলো করা হতো, তাহলে গত কয়েকমাসের যে বিয়োগান্তক ইতিহাস এটি হয়তো সৃষ্টি হতো না, এটি হয়তো এড়ানো যেতো। তাই আমাদের সংস্কার করা দরকার। যে বিষয়টি আমাদের সুস্পষ্টভাবে মনে রাখা দরকার, এই যে গণআন্দোলন হলো, দেড়-দুই হাজার মানুষ প্রাণ দিলো এবং অন্তত ৩০ হাজার মানুষ আহত হলো, তারা কি দাবি করেছিল। আমার কাছে দুইটি জিনিস স্পষ্ট হয়েছে। একটি হলো, যারা অন্যায় করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, বিভিন্ন রকম অর্থনৈতিক অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এবং তাদেরকে ন্যায়বিচার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল, নেভার এভার এগেইন। আবার যেনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না হয়। আবার যেনো স্বৈরাতন্ত্র এসে আমাদের ওপর জেঁকে বসতে না পারে। এখনো যখনই গ্রামে গঞ্জে যাই আমরা এই ধ্বনি আমরা শুনতে পাই। আবারও এর পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তার জন্য কতগুলো সুদূরপ্রসারী গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার দরকার। তাহলে কিন্তু আমরা এটা এড়াতে পারবো। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কমিশনসহ ৬টি সংস্কার কমিশন আমরা শীঘ্রই প্রস্তাব দেবো। এরপরে বলটা কিন্তু অন্যদের কোর্টে যাবে। একটা হলো সরকারের কোর্টে, আরেকটি রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে, আরেকটা আবার নাগরিকদের কোর্টে। নির্বাচনের বিষয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন আছে, নির্বাচন কমিশন। বলটা থাকবে তাদের কোর্টে। তারা কিভাবে খেলবে তার ওপর নির্ভর করবে কেমন ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। যে প্রস্তাবগুলো আমরা করবো, সরকারের ঠিক করতে হবে কোনগুলো তারা বাস্তবায়ণ করবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সকলের পরিবর্তন দরকার। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণ চাচ্ছি। গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য আমাদের সকলের মন, মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরাকর। আমাদের আচরণে পরিবর্তন দরকার। যেভাবে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাচ্ছি, তার পরিবর্তন দরকার। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। অতীতে যে ভুলভ্রান্তি হয়েছে, তার ঊর্ধ্বে উঠে শহীদদের রক্ত যাতে বৃথা না যায়, তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। জনগণেরও সজাগ ভূমিকা পালন করতে হবে।
এ সময় তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা সকলে যেনো আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করি। তাহলেই কিন্তু এই শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না। আমরা এই রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমরা যে দয়ে দায়বদ্ধ, সেই দায় আমাদের শোধ করতে হবে।
সিজিএস এর চেয়ার মুনিরা খানের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালণায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, বাংলাদেশ রাইফেলস এর সাবেক মহাপরির্দশ মেজর জেনারেল অ ল ম ফজলুর রহমান, সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আওয়াল মজুমদার, সাবেক সচিব সুলতান আফরোজ, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল হাসান চৌধুরী, সাবেক সচিব ইব্রাহিম খান, নৈতিক সমাজ বাংলাদেশের সংগঠক মেজর জেনারেল (অব.) আমরা আমিন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, বিজিএমইএ এর সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়ার সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইফফাহ আসসারয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাস্সির।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ