গির্জায় গির্জায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বড়দিনে সম্প্রীতির বার্তা সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 12:36 am | December 25, 2024
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
বছর ঘুরে আবার এসেছে বড়দিন। দেশের সব গির্জা সেজেছে বর্ণিল সাজে। বিশেষ খাবার, সাজপোশাক, সান্তা ক্লজের সাক্ষাৎ আর ক্রিসমাস ট্রির আলোকসজ্জায় উদযাপিত হয় যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বড়দিনে নেই কোন নিরাপত্তা ঝুঁকি। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গির্জায় গির্জায় গড়ে তুলেছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাতে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত আর্চবিশপের হাউজ পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে তিনি নির্ধিদ্বায় এই উৎসব উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। সেনাপ্রধানের এমন আশা জাগানিয়া উচ্চারণে আশ্বস্ত হয়েছেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। উৎসবমুখরভাবেই তারা বড়দিন আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব এমনটি উল্লেখ করে কাকরাইলে অবস্থিত আর্চবিশপের হাউজ পরিদর্শন করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘সব সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা যেন নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে উদযাপন করতে পারে, সে বিষয়ে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।’
তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘অন্যান্য সব সম্প্রদায়ের জনগণ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের শুভ বড়দিন উদযাপনে আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করবে। সবাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুখী, সমৃদ্ধশালী ও উন্নত দেশ গঠনে এগিয়ে আসবে।’
বিশ্বাস-ভালোবাসা, ক্ষমা চাওয়া–করার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠার আহ্বানে পূর্ণ হয় বড়দিন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির সঙ্গে মিলিত হওয়াই হবে অর্থপূর্ণ সার্থক ও সুন্দর বড়দিন। দেশজ মনন, আধ্যাত্মিকতা ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বড়দিনের আনন্দময় চেতনা জাগরিত হয়েছে। দেশের মাটির সন্তান হিসেবে এই উৎসবময়তায় পেয়েছে মাটির গন্ধ, হৃদয়ের ছোঁয়া, আশীর্বাদের দেওয়া-নেওয়া, সৌন্দর্যমণ্ডিত মানবিক মূল্যবোধ। এমন আনন্দঘন সময়টিতে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে নিজের দৃঢ় বন্ধনের কথা জানিয়ে শৈশব স্মৃতিতে ফিরে যান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনের শুরুতে একটি মিশনারী স্কুলে পড়াশুনা করেছি। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা ছোটকাল থেকেই। তারা আমাকে পড়াশুনা করিয়েছেন। বিভিন্ন দীক্ষায় দীক্ষিত করেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
তিনি বলেন, ‘মুসলমান এবং খ্রিষ্টানদের শেকড় কিন্তু এক জায়গায়। হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর দু’জন স্ত্রী ছিলেন। একজন বিবি সারাহ, আরেকজন বিবি হাজেরা। বিবি সারাহ থেকে মুসা (আ:) এবং ঈসা (আ:) এর আগমন। বিবি হাজেরা থেকে হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর আগমন। আমরা হযরত ঈসা (আ:) কে অত্যন্ত সম্মান করি। আমাদের মুসলমানদের তিনি একজন নবী। এজন্য ধর্মে এবং চিন্তা চেতনায় আমাদের অনেক জায়গায় মিল রয়েছে।’
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে অভিনন্দন জানিয়ে সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘আপনারা নির্ধিদ্বায় আপনাদের উৎসব উদযাপন করবেন। সারাদেশে সেনাবাহিনী রয়েছে। আপনাদের সব রকমের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি।’ ঢাকায় সুন্দরভাবে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য তিনি নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খানকে ধন্যবাদ জানান।
কালের আলো/এমএএএমকে