শিক্ষাক্রম ওলটপালটে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিতঃ 11:27 am | December 25, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। মাত্র একমাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে নতুন শিক্ষাক্রমটি বাতিল করে সরকার। বছরের আটমাস নতুন শিক্ষাক্রম পড়ে আসা শিক্ষার্থীদের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত বার্ষিক পরীক্ষায় বসতে হয় আগের নিয়মে (সৃজনশীল)। এভাবে চোখের পলকে শিক্ষাক্রম পাল্টে যাওয়ায় তা মানিয়ে নিতে চরম বিপাকে পড়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা।

বিশেষ করে সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অবস্থা বেগতিক। আগামী বছর তারা সৃজনশীল পদ্ধতি পড়ে শিক্ষাজীবন এগিয়ে নেওয়া নিয়ে শঙ্কায় ভুগছে। অভিভাবকরা বলছেন, বছর বছর নতুন শিক্ষাপদ্ধতি চালু করায় তাদের সন্তানরা পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। কীভাবে পড়তে হবে, কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর লিখতে হবে তা বুঝে উঠতে হিমশিম অবস্থা তাদের। অনেকে বিষণ্নতায় ভুগছে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের সমস্যা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও পড়ালেখায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। হঠাৎ বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। তাদের সাবলীলভাবে ধীরে ধীরে আবারও অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। আর শিক্ষাক্রম ওলটপালটে শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত জটিল’ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে যাতে এমন সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য লক্ষ্যনির্ভর শিক্ষাক্রম এবং স্থায়ী শিক্ষা কমিশন করার তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

জানা যায়, ২০১২ সালে প্রণীত সৃজনশীল পদ্ধতিকে ‘আধুনিক ও যুগোপযোগী’ তকমা দিয়েছিলেন খোদ শিক্ষাবিদরা। কয়েক বছর পর তারাই আবার এ পদ্ধতি মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন। তখন সরকার ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’ প্রণয়ন করে। একপর্যায়ে তা বাতিলের দাবিতে তুমুল আন্দোলনও করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার এসে কিছুদিনের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করে জানিয়ে দেয়, ‘নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়’। এর মধ্যদিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১’র অবসান ঘটে। ডিসেম্বরে পুরোনো সেই সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, সামনে এগোনো নয়, পেছনের শিক্ষাক্রমে ফেরার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।।

২০১২ সালের সৃজনশীল শিক্ষাক্রমপ্রণেতাদের অন্যতম একজন অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বারবার শিক্ষাক্রমে এমন পরিবর্তন, অস্থিরতা ঠেকাতে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন জরুরি। আমরা যখন সৃজনশীল পদ্ধতি প্রণয়ন করি, তখন সেখানে স্থায়ী একটি শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছিলাম। তারা সময়ের আবর্তে শিক্ষায় যে পরিবর্তন আনা দরকার হবে, সেটা করবেন। শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করবেন।’

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘এটা সত্য যে, একটা কারিকুলামে পড়তে পড়তে আরেকটাতে ফিরলে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়বে। এক্ষেত্রে আমরা চাপ কমিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতে পরামর্শ দেবো। সিলেবাস কমানো যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হবে।’

কালের আলো/এমএএইচ/ইউএইচ