জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার সম্ভাবনা রয়েছে
প্রকাশিতঃ 3:42 pm | December 25, 2024
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, তবে ম্যাডামের যাওয়ার কোনো তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার প্রসঙ্গে এ কথা জানান তিনি।
ডা. জাহিদ বলেন, ম্যাডামের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার প্রসঙ্গে কে, কি বলছেন আমি জানি না। তারা কোন প্রেক্ষাপটে ৭ জানুয়ারির কথা বলছেন সেটিও আমি জানি না। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তার যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আমি ম্যাডামের বিদেশে নিতে যাওয়ার প্রসঙ্গে কিছু জানি না।
বিএনপির পক্ষ থেকে এর আগে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে দলের নেতা, চিকিৎসক, নার্সসহ ১৫ জনের একটি তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। তাদের সবার যুক্তরাজ্যের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার প্রসঙ্গে বুধবার পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট উইংয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো বার্তা দেয়নি। তার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেও জানান এক কূটনীতিক।
সর্বশেষ গত ২৭ নভেম্বর খালেদা জিয়া আমেরিকার ভিসার জন্য দেশটির ঢাকার দূতাবাসে যান। সেখানে ভিসার জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে আসেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি। সেই সময় খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের ডা. হ্যাডলি ব্যারির চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত মামলায় কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এরপর ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেয়। তবে তিনি রাজনীতি ও দেশের বাইরে যেতে পারবেন না— এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। যার ফলে, কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন তিনি। এই সময়ে বেশ কয়েকবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে পরদিনই (৬ আগস্ট) বেগম জিয়ার মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন জানান, বেগম জিয়ার শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে অতিদ্রুত তাকে বিদেশে মাল্টি ডিসি প্ল্যানারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
অধ্যাপক জাহিদ উল্লেখ করেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে প্রথমে লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সেখান থেকে তাকে তৃতীয় একটি দেশে মাল্টি ডিসি প্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হবে।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, হৃদ্রোগ, লিভার সিরোসিসসহ নানা রোগে ভুগছেন।
২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেয় তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। তারপর থেকে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে অনুমতি চেয়ে একাধিকবার আবেদন করে তার পরিবার। কিন্তু প্রতিবারই আইনের দোহাই দিয়ে অনুমতি দেয়নি সরকার।
ওমরাহ করতে সৌদি যেতে পারেন খালেদা জিয়া
চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার পথে খালেদা জিয়াকে ওমরাহ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে সৌদি আরব সরকার। গতকাল খালেদা জিয়ারসঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলান তার দেশের যুবরাজের পক্ষে এই আমন্ত্রণ জানান।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, চিকিৎসা শেষে ফেরার পথে ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে খালেদা জিয়ার।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে ভালো। তিনি মানসিকভাবে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ