পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণের আহ্বান ডা. জাহিদের

প্রকাশিতঃ 5:40 pm | December 25, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

প্রশাসন নিরপেক্ষ করতে ‘ঘাপটি মেরে থাকা পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের’ অপসারণে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।

বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই আহ্বান জানান তিনি। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন(জেটেব) এর উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা : প্রেক্ষিত টেক্সটাইল সেক্টার’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

ডা. জাহিদ বলেন, ‘আজকের পত্রিকা খুললেই দেখবেন, একটা মামলায় (হত্যা মামলা) তাদের (আওয়ামী লীগের) দুইজন নেতাকে আসামি করা হয়েছিল। ইনকোয়ারি চলছে, ইনকোয়ারি কর্মকর্তা তাদেরকে বাদ দিয়ে অর্থাৎ ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার জন্য যখন যাচ্ছে, তখন আবার ওই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটাকে প্রতিরোধ করেছে। অর্থাৎ ওরা ঘাপটি মেরে আছে আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বারবার বলছি যে, আপনারা আপনাদের প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিগত স্বৈরাচারের দোসরদেরকে যদি চিহ্নিত করে সরিয়ে দিতে না পারেন, তাহলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আপনারা প্রতিরোধ করতে পারবেন না।’

বুধবার প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে খবরে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যার দুটি মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন পুলিশের একজন তদন্ত কর্মকর্তা। অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকেও। তবে আদালতে ওঠার আগেই বিষয়টি ধরা পড়ে যায়।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অতএব সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাদের বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, বিড়াল নাকি প্রথম রাত্রেই মারতে হবে। বাংলাদেশে একটা উদাহরণ আছে বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন উনিও কিন্তু বিড়াল প্রথম রাত্রে মেরেছিলেন দেখেই জাতীয় নির্বাচন পরবর্তীতে নিরপেক্ষ হয়েছিল।’

আমরা ইউনুস স্যার(অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস) প্রতি আস্থাশীল, ‘পৃথিবীর মানুষের আস্থা আছে সরকারকে সহযোগিতা করছে দেশের মানুষ একদম নিঃস্বার্থভাবে। কাজেই তাদের(সরকার) সিদ্ধান্ত নিতে হবে একেবারে বলিষ্ঠ, আরো যুগোপযুগি, আরো দ্রুততার সঙ্গে। তা না হলে কোন অবস্থাতে ওই সমস্ত স্বৈরাচারের দোসররা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আজকে ঘাপটি মেরে আছে তারা কিন্ত ফনা তোলার জন্য, আপনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য চেষ্টা করছে, করবে, করতেই থাকবে। কাজেই তাদের বিষদাঁত যদি ভেঙে দিতে হয় স্বৈরাচারের দোসরদের চিহ্নিত করুন, তাদেরকে প্রশাসন থেকে এবং আপনাদের আশ-পাশ থেকে সরিয়ে দেন। আপনাদেরকে জনগণ সাদু্বাদ জানাবে।’

অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে জাহিদ বলেন, ‘দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বোঝার চেষ্টা করুন, দেশের মানুষের অধিকার দ্রুততার সঙ্গে ফেরত দেয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে মানুষ আপনাদেরকে সাদুবাদ জানাবে, ইতিহাস তখন আপনাদেরকে ধারণ করবে। আর যদি তা না হয়, লক্ষণ সেনকেও যেমন ইতিহাস ধারণ করে নাই পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে যতই হুমকি ধামকি করুক হিটলারও ফেরত আসে নাই, তার বংশধররাও আসে নাই, লক্ষনের শাসন ব্যবস্থাও ফেরত আসে নাই আর পলাতক স্বৈরাচারের শাসন ব্যবস্থাও বাংলাদেশে ফেরত আসার সম্ভাবনা নাই।

জাহিদ বলেন, ‘মনে রাখতে হবে আজকে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের রক্তের শপথ নিয়ে মনে রাখতে হবে বন্ধুদেরকে ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করবেন না। জাতি ৫ আগস্ট ঐক্যবদ্ধ ছিলো বলেই স্বৈরাচার পালিয়েছে। জাতি যদি ঐক্যদ্ধ শক্তি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হতো তাহলে সবাই আমরা ব্যর্থ হতাম। কাজেই সবাইকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে ঐক্য ধরে রাখার জন্য যেটি প্রয়োজন সেটি হলো কমন এনিমি যেটি সেটাকে চিহ্নিত করুন এবং দ্রুততার সঙ্গে জনগনকে তার অধিকার আদায়ের সুযোগ দিন। জনগন সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কোন পথে যাবে, দেশ কাদেরকে ধারণ করবে, আগামীদিনের বাংলাদেশ কেমন হবে।’

জেটেবের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদসহ জেটেবের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/ডিএইচ/কেএ