সড়ক-মহাসড়কে কুয়াশার লাগামহীন দাপট

প্রকাশিতঃ 10:29 am | December 26, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

মাঠে-ঘাট, বিল-ঝিল পেরিয়ে শীতে কুশায়া জেঁকে বসেছে সড়ক ও মহাসড়কে। এখানে এখন এখন ঘন কুয়াশার লাগামহীন দাপট। মাত্র দশ হাত দূরের কোন কিছু ঠাহর করারও যেন জো নেই। আর এতেই বাঁধার শিকার হতে হচ্ছে যানবাহনের চালকদের। বেড়ে গেছে সড়ক দুর্ঘটনাও। চলতি বছরের পৌষ মাসের শুরু থেকেই কনকন শীতের পাশাপাশি বেড়েছে কুয়াশার ঘনত্ব। সব ধরনের চালকদের কুয়াশায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সতর্ক করেছে হাইওয়ে পুলিশ।

সরেজমিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, এই মহাসড়কে ঘন কুয়াশায় যানবাহন চলছে ধীর গতিতে। রাত থেকেই কুয়াশার আবরণে ঢাকা পড়ছে মহাসড়ক। এতে করে দুরপাল্লার যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। কুয়াশা ভেদ করে সূর্যি মামার উঁকি দিতেও বিলম্ব হচ্ছে। আর তাই কী না বাতি জ্বালিয়েই এ মহাসড়কে ছুটতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। এতে করে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রী ও পরিবহন চালকদের ভোগান্তির কমতি নেই। কোথাও কোথাও অনেকটাই মিহি বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। গত কয়েকদিন মহাসড়কটির বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এবং বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেলো এমন চিত্রের।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, গত নভেম্বর মাসে সড়কে ৪১৫ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯৭ জন নিহত হয়। আর এ দুর্ঘটনার ৪০ দশমিক ২৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘটছে। ঘন কুয়াশার কারণে একটি যানবাহনের সঙ্গে আরেকটি ধাক্কা লেগে বা সংঘর্ষে দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্ব ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার আসার পথে শ্রীমঙ্গল পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে হানিফ পরিবহনের একটি গাড়ি। গত ১৪ ডিসেম্বর ঘন কুয়াশায় পাবনার ঈশ্বরদী ও এর আশপাশের এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা বাড়তে দেখা যায়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকায় গত ১৬ ডিসেম্বর কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় একটি অটোরিকশা দুমড়েমুচড়ে প্রাণ হারায় পাঁচজন। একই দিনে এই রুটে নরসিংদীর রায়পুরায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস-ট্রাক সংঘর্ষে হাবিবুর রহমান টিটু (৪০) নামে এক ট্রাক চালক নিহত হন। এ সময় আহত হয়েছেন বাসের চালকসহ তিনজন। আর গত শুক্রবারও ঘন কুয়াশায় ১২টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।

ঢাকা-সিলেট রুটে চলা শ্যামলী পরিবহনের চালক রহমত মিয়া বলেন, ‘গত সপ্তাহে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটছে এই রুটে। মূলত ঘন কুয়াশায় সামনের গাড়ি দেখা যায় না। ফলে গতি বেশি থাকায় হঠাৎ কুয়াশার জন্য পেছন থেকে গাড়ি ধাক্কা দেওয়ায় দুর্ঘটনাগুলো হচ্ছে।’ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলা হানিফ পরিবহনের এক চালক মো. বাদশাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম রুটের যাত্রীরা বেশিরভাগ রাতে চলাচল করেন। কিন্তু কুয়াশা পড়ার পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহ এ রুটে দুর্ঘটনা বাড়ছে। আর সড়কে অনেক জায়গায় বাতি দেখা যায় না। ফলে কুয়াশার জন্য রাস্তা ভালোভাবে দেখা যায় না। অনেক জায়গায় সড়কেই সাইন নেই। ফলে কুয়াশার সময় এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘কুয়াশার কারণে ঘটা দুর্ঘটনা রোধের জন্য চালকদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। আর সড়কের সাইনগুলো ভালো করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে মোটরসাইকেল চালকদের গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই নিরাপত্তার জন্য সব সরঞ্জাম পরিধান করতে হবে। আর মহাসড়কে চালকদের কুয়াশার সময় গতি তাদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। যেন কোনো ধরনের কিছু ঘটার আগে গতি কমাতে পারেন চালকরা। সেই সঙ্গে হাইওয়েতে কুয়াশার সময় আরও মনিটরিং বাড়ানো দরকার।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘কুয়াশার সময় যানবাহনগুলোকে ফগ লাইট ব্যবহার করা উচিত। কারণ, এই ফগ লাইট দিয়ে গাড়ি চালালে সামনের দিকের অবস্থান কিছুটা হলেও ভালো দেখা যাবে। আর গাড়িগুলোকে বাম পাশ ঘেঁষে চালানো উচিত। কুয়াশা যেসব এলাকায় বেশি পড়ে, সেখানে গাড়ির চালকদের উচিত গতি কম রাখা। তাছাড়া, কুয়াশা যেহেতু প্রাকৃতিক একটি সমস্যা, তাই চালকদের সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। সব বিষয়ের জন্যই সরকারের উচিত এসব বিষয় মনিটরিং করা।’

কালের আলো/আরআই/এমকে