সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অনেক প্রশ্ন
প্রকাশিতঃ 9:42 pm | December 26, 2024
কালের আলো রিপোর্ট:
দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে সংঘটিত আগুনকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের দুই জায়গায় বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনের তীব্রতায় ওই ভবনে থাকা ৫টি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব দপ্তর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকার, রাজনৈতিক দল ও নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট সবার একটাই প্রশ্ন- সচিবালয়ের মতো জায়গায় কীভাবে এত বড় ঘটনা ঘটল? এটা কি পরিকল্পিত কোনো ঘটনা ছিল?
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ দায়িত্বশীল কর্তারা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আগুনের কারণ নিয়ে কোন কিছু বলতে নারাজ। কিন্তু রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা সন্দেহের তির ছুড়ে দিয়ে বলেছেন- এটি পরিকল্পিত ঘটনা। তারা বলছেন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক ঘটনার ধারাবাহিকতা সচিবালয়ের এই অগ্নিকাণ্ড। তারা সরকার ও দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়ে সড়কে ট্রাকের চাপায় মারা গেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোয়ানুর জামান নয়ন। ওই ট্রাকচালককে আটক করা হয়েছে। একই রাতে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার সচিব নিবাসেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সূত্র জানায়, আগুনের ধরন ও অবস্থান এবং দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতি এবং এর আগে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুটি তেলের জাহাজে আগুনের ঘটনা বিবেচনায় সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতা ছাড়া আর কিছু মনে করছেন না তারা। প্রকৃত ঘটনা জানতে দ্রুত তদন্তের দাবি ওঠেছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫টির বেশি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (ডিসেম্বর ২৬) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও উৎস খুঁজে বের করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
একই রকম মন্তব্য করেছেন সেনা সদর দপ্তর। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান জানিয়েছেন, সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় তদন্ত হলে পেছনের কারণটা জানা যাবে।
এদিকে, রাজধানীতে সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জামসজ্জিত জায়গায় আগুন লাগার ঘটনায় বিস্মিত মানুষ। সচিবালয়ে অফিস করতে আসা অনেক কর্মকর্তা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সচিবালয়ে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে একসঙ্গে ভবনের বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগবে এটা তারা বিশ্বাস করেন না।
- পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পুড়ে ছাই
- ছাত্র-আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা সন্দেহের তির ছুড়ে দিয়ে বলেছেন- এটি পরিকল্পিত ঘটনা
- সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় তদন্ত হলে পেছনের কারণটা জানা যাবে : সেনা সদর দপ্তর
- তিন দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেবে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি
তিনটি জায়গা একসঙ্গে আগুন লাগার কথা নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামালও। তিনি বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি তিনটি জায়গায় একসঙ্গে আগুন দেখা গেছে।’
অগ্নিকাণ্ডের পর সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবন ছাড়া সবগুলো ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। এতে প্রায় বন্ধ থাকে সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ে প্রবেশ করলেও ভেতরে কোনো কাজ হয়নি। অনেকে একবার ঢুকে আবার ফিরে এসে বাসায় চলে যান।
সচিবালয়ের ভেতরে সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিয়ে আগুন লাগিয়েছে বলেই মনে করছেন তারা। অর্থাৎ তাদের দৃষ্টিতে এটি একটি ‘স্যাবোটাজ’ বা নাশকতা। জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান বলেছেন, ‘এটা স্যাবোটাজ (নাশকতামূলক) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আগুনটা শর্ট সার্কিট থেকে হলে একসঙ্গে ৩-৪ জায়গায় লাগার কথা নয়। দুর্বৃত্তদের লাগানো আগুনেই এমনটা হয়।’
তিনি বলেন, আমি ভোর রাত থেকে এই আগুন ফলো করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা স্যাবোটাজ। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে এটা লাগানো আগুন, শর্ট সার্কিটের আগুন কখনো এভাবে লাগে না। এর মধ্যে কাল তো সচিবালয় বন্ধ ছিল। সুতরাং সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়ে যাচ্ছে।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সচিবালয়ের পুড়ে যাওয়া সাত নম্বর ভবনের ছয়, সাত, আট ও নয়তলা পুড়েছে। ভবনটির পূর্ব ও পশ্চিম পাশে এবং মাঝবরাবর আগুনে পোড়া কালো ক্ষত হয়ে আছে। পূর্ব পাশে সাত ও আটতলায় কালো ক্ষতের চিহ্ন। এসব দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা একে পরিকল্পিত কি না প্রশ্ন সামনে আনছেন। সচিবালয়ের ১২টি ভবনের মধ্যে এক নম্বর ভবনটি অগ্নিঝুঁকির তালিকায় ছিল। তবে সাত নম্বর ভবনটি ছিল সুরক্ষিত। সেখানে আগুন লাগার ঘটনা সন্দেহের উদ্রেক করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও পরিকল্পিত নাশকতার দিকে ইঙ্গিত করেন। তিনি এসব নাশকতা ঘটতে পারার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতাকে দায়ী করেন। বলেন, ‘ফ্যাসিজমের এনাবলারদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা দেখানোর পরিণাম এই কপালপোড়া জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে। আজকে আমলা, আগামীকাল অন্য কেউ।’
সচিবালয়ের ওই সাত নম্বর ভবনে রয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ হোসেন ও আসিফ মাহমুদের দপ্তরও এই ভবনে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া আগুনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তরুণ এই উপদেষ্টা ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘বিগত সময়ে হওয়া অর্থ লোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।’ তাদের ব্যর্থ করার জন্য এই ষড়যন্ত্র হতে পারে- এমনটা বলে হুঁশিয়ারি করেন তিনি।
বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির সভাপতি সৈয়দ জাভেদ মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় আমলাদের দিকে সন্দেহের আঙুল তোলেন। এ ঘটনাকে সুপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করে তার আশঙ্কা, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এসব নাশকতা চলতেই থাকবে। তিনি বলেন, ‘কদিন ধরে সচিবালয় ক্যাডার কর্মকর্তাদের একটা অংশের মধ্যে অস্থিরতা চলছে সংস্কার কমিশনের কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে। তারা সচিবালয়ের ভেতরে জমায়েত করেন এবং সংস্কার কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেন। অথচ এই কমিশন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকারের সংস্কার পরিকল্পনার অংশ।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠপ্রশাসন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটি করা হয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের ভেতরে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা বা ফুটেজ মেলেনি। তবে ভবনের বাইরে কিছু সিসি ক্যামেরা আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় অগ্নিকাণ্ডের আগে-পরের ফুটেজ পাওয়া যায়নি। যদি ফুটেজ পাওয়া যায় তাহলে আগুনের রহস্য অনেকটা উদঘাটিত হবে। সূত্র বলছে, সচিবালয়ের সবগুলো ভবনের ভেতরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো নেই। তবে প্রবেশ পথগুলোতে ক্যামেরা রয়েছে। কেন প্রতি ফ্লোরে ক্যামেরা নেই সেটা জানা যায়নি।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, ‘যতটুকু জানতে পেরেছি ভবনের ভেতরে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। তবে বাইরে বা গেটে আছে। সেটার ফুটেজ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। বিদুৎ না থাকায় ফুটেজ পাওয়া যায়নি।’
পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পুড়ে ছাই
মধ্যরাতে লাগা আগুনে সচিবালয়ে অবস্থিত পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পুড়ে গেছে বলে। এসব মন্ত্রণালয়ের পুড়ে যাওয়া নথি কতটা পুনরুদ্ধার করা যাবে তা তদন্তের পর বলা যাবে। তবে আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সচিবালয়ের ভেতরে খালি জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ।
অগ্নিকাণ্ডে কয়টা মন্ত্রণালয়ের নথি পুড়েছে এবং পুড়ে যাওয়া নথিপত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপদ বিভাগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথি কার্যক্রম অনলাইনে থাকার কারণে আমরা উদ্ধার করতে পারবো। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পুরোটাই এনালগ পদ্ধতিতে হয়। তাই যে শাখাগুলোর নথি পুড়ে গেছে, সেগুলো কতটা উদ্ধার করা যাবে তা নিরূপণ করার জন্য মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একটা কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি কাজ করে প্রতিবেদন দিলে আমরা বুঝতে পারবো, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কোনটা রিকভারিবল আর কোনটা রিকভারিবল না।
যড়যন্ত্র নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা কিছু অর্থনৈতিক অসঙ্গতি লক্ষ করেছি। বিশেষ করে পিরোজপুর জেলায় বিভিন্ন প্রকল্পে দেওয়া বরাদ্দে অর্থ লোপাটের প্রাথমিক প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এর সাথে সাবেক মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের প্রাথমিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেটার বিস্তারিত তদন্ত এখনো চলছে। আমরা প্রথমে ধারণা করেছিলাম, তদন্তের যে ফাইলগুলো ছিল মন্ত্রণালয়ে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এটি যেহেতু জেলা পর্যায়ে সংগঠিত হয়েছে, সেজন্য আমরা এগুলো উদ্ধার করতে পারবো। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা পিরোজপুরে আছেন।
বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ মন্ত্রণালয়ের নথি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে জানা যাবে তদন্তের পর।
তিনি আরও বলেন, এই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ওনার সঙ্গে থাকবেন গৃহায়ন সচিব, পুলিশের আইজিপি, কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স এর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েট থেকে ৩ জন বিশেষজ্ঞ যথাক্রমে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার।
অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সরকার কী ধারণা করছে এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার এভাবে ধারণা করতে পারে না। সরকার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। কারণ এটা আমাদের সকলের নিরাপত্তার বিষয় এবং এখানে রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল থাকে। ফলে এ বিষয়টিকে সরকার খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। যার জন্য তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী আমলা লীগ ও মিডিয়া লীগের সদস্যদের সরকার ছাড় দিচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে দাবি করে এক প্রশ্নের জবাব সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অপরাধী সাব্যস্ত করার আগে তদন্ত করতে হয়, সেই অনুযায়ী অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, অনেককে চাকরি হতে সরানো হয়েছে, কাউকে কাউকে ওএসডি করা হয়েছে, কেউ কেউ কারাগারেও গেছেন। প্রশাসনের গতিটা রেখে ঢেলে সাজানোর কাজ আমরা করছি। এটা এমন না যে কোন দাগী আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে কিন্তু আমরা তদন্ত করি নাই। সরকার আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগুচ্ছে।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য একজন একজন করে এসপি ও এএসপি, এছাড়া প্রায় ৫৬০ জনের মত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আছে। ভেতরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে।
কালের আলো/ওয়াইএ/এমকে