পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে আবু সাঈদের গল্প, বাদ শেখ হাসিনা
প্রকাশিতঃ 10:57 am | December 27, 2024
কালের আলো ডেস্ক:
সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিদ্যমান কারিকুলাম স্থগিত করে আগের কারিকুলাম পরিমার্জন করে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের।
পরিবর্তিত পাঠ্যবইয়ের একটি গল্পে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের বিষয় রাখা হয়েছে। যুক্ত করা হচ্ছে, আন্দোলনের দেয়ালচিত্র। পরিমার্জিত পাঠ্যবই থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবি বাদ যাচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি গল্প-কবিতা বাদ দিয়ে নতুন করে গল্প-কবিতা সংযোজন করা হচ্ছে। আর ইতিহাসনির্ভর বিষয়বস্তুতেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন।
জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের ছবি সম্বলিত নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যে প্রচ্ছদ ছড়িয়ে পড়েছে তা পাঠ্যবইয়ে থাকছে না। এই প্রচ্ছদটি মিথ্যা প্রচারণা বলে উল্লেখ করেছে এনসিটিবি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রচ্ছদটি কোনও পাঠ্যবইয়ে নেই। এটি মিথ্যা প্রচারণা। আবু সাঈদের ওপর একটি গল্পের ভেতরে আবু সাঈদের ছবিসহ কাহিনী আছে।
বাদ যাচ্ছে যেসব লেখা
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সহপাঠ বইয়ের মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা উপন্যাস সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’ বাদ যাচ্ছে।
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ের গদ্য সাহিত্য—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প ‘দেনাপাওনা’, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’, কবীর চৌধুরীর ‘পয়লা বৈশাখ’, সেলিনা হোসেনের ‘রক্তে ভেজা একুশ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘নিয়তি’ এবং ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘তথ্যপ্রযুক্তি’ বাদ যাচ্ছে। তবে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’ ও ‘লাইব্রেরি’ মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ গল্পটি থেকে যাচ্ছে।
আর হুমায়ূন আহমেদের ‘নিয়তি’ গদ্য বাদ দেওয়া হলেও নতুন করে তার উপন্যাস ‘১৯৭১’ যুক্ত করা হচ্ছে পাঠ্যবইয়ে। বাদ দেওয়া হচ্ছে সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের অংশও।
যেসব কবিতা বাদ দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে, কাজী নজরুল ইসলামের ‘আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’, নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ এবং কামাল চৌধুরীর ‘সাহসী জননী বাংলা’।
নবম-দশম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ নামের ইংরেজি বইয়ে একটি অধ্যায় বাদ দেওয়া হচ্ছে, ‘ফাদার অব দ্য নেশন’।
বাদ যাচ্ছে শেখ হাসিনা
পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা এবং বইয়ের প্রথম দিকে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে।
যুক্ত করা হচ্ছে যেসব লেখা
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য নামের পাঠ্যবইয়ে জহির রায়হানের ‘একুশের গল্প’ এবং জুলাই আন্দোলনের ওপর লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ নামে একটি সংকলিত গদ্য যুক্ত করা হচ্ছে।
নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সহপাঠ বইয়ের মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা উপন্যাস সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘১৯৭১’।
‘ফাদার অব দ্য নেশন’ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হচ্ছে ‘সেন্স অব সেলফ’, ‘লোনলিনেস’। এছাড়া ‘গ্রাফিতি’ নামে নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে।
এছাড়া পঞ্চম থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে কিছু পাঠ্য বাদ যাচ্ছে এবং নতুন করে যুক্ত হচ্ছে।
যেসব বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে পাঠ্যবইয়ে
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী চরিত্র মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি এম. এ. জি. ওসমানী এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পাঠ্যবইয়ে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে আবু সাঈদকে।
পুরনো কারিকুলামে ২০২৫ সালের পাঠ্যবই
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানায়, বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রম চলছে- প্রথম দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন শিক্ষাক্রমটি স্থগিত করে পুরনো শিক্ষাক্রমে ফিরেছে। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের সর্বশেষ সংস্করণ পরিমার্জন করে শিক্ষার্থীদের হাতে ২০২৫ সালের পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণীত পাঠ্যবইয়ে কিছু পরিমার্জন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। অন্যদিকে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই নতুন পুরনো শিক্ষাক্রমের আলোকে সর্বশেষ সংস্করণ পরিমার্জন করে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গ, ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০১৩ সালে পাঠ্যবই প্রণয়ন করে শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছিল। ওই শিক্ষাক্রমের সর্বশেষ সংস্করণ ২০২২ এবং ২০২৩ সালের বই পরিমার্জন করা হচ্ছে।
বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। আর আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল, তা স্থগিত করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
নবম ও দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন বাদ দেওয়া হয়েছিল। পুরো কারিকুলামে ফেরায় বিভাগ বিভাজন (বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগ) থাকছে।
ইতিহাসনির্ভর বিষয়বস্তুতে পরিমার্জন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান এর আগে জানিয়েছিলে, ‘অতিরঞ্জিত কিছু থাকলে তা বাদ দেওয়ার সুপারিশ থাকতে পারে। নতুন কিছু যুক্তও হতে পারে। এখন এখন কিছু চূড়ান্ত হয়নি। নির্ভর করছে বিশেষজ্ঞ ও সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।’
জাতীয় সংগীত বিতর্ক
প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে মূলপাঠ শুরুর আগে জাতীয় সংগীত সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ লেখা ছিল। এছাড়া জাতীয় পতাকার মাপ নিয়ে বর্ণনা ছিল। এ দুটি বিষয় পাঠ্যবইয়ের পেছনের পাতায় নেওয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিতর্ক দেখা দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। এর জবাব দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ