পার্লারে কাজের প্রলোভনে টিকটকার তরুণীকে ভারতে পাচার, চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

প্রকাশিতঃ 2:59 pm | December 27, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

মুম্বাইয়ের পার্লারে কাজের কথা বলে কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা টিকটকার বেবি আক্তারকে তাকে অবৈধভাবে ভারতে পাচারের অভিযোগে মানবপাচারকারী চক্রের ছয় সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মামুন (৩৫), ফয়সাল (৩০), বৃষ্টি (২২), দিলারা বেগম (৫০), সোহাগ হোসেন (৩৪) ও মো. রিপন ওরফে আপন (৩২)।

শুক্রবার ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান।

তালেবুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচরে এলাকার বাসিন্দা বেবি আক্তারের (২৬) সঙ্গে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জড়িত সোহাগের পরিচয় হয়। সোহাগের মাধ্যমে বেবির পরিচয় হয় বিভিন্ন ইভেন্ট প্রোগ্রাম এ ড্যান্সার হিসেবে কাজ করা দম্পতি মামুন ও বৃষ্টির সঙ্গে এবং পরবর্তীতে তাদের মাধ্যমে পরিচয় হয় আরেক ড্যান্সার আপনের সঙ্গে।

তালেবুর রহমান বলেন, “টিকটকার বেবি আক্তারকে মুম্বাইয়ের পার্লারে উচ্চ বেতনে কাজের কথা বলে প্রলোভিত করে তাকে স্বামীর অগোচরে বাসা থেকে পালিয়ে যেতে পরামর্শ দেন মামুনের স্ত্রী বৃষ্টি ও তার শাশুড়ি দিলারা বেগম। তাদের প্রলোভনে পরে সরল বিশ্বাসে বেবি আক্তার কাউকে না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন মামুন, তার স্ত্রী বৃষ্টি, শাশুড়ি দিলারা বেগম এবং পাশের ভাড়াটিয়া সোহাগ ও আপন।

পরবর্তীতে মামুন মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা ফয়সালের যোগসাজশে বেবি আক্তারকে ভারতে পাচারের জন্য গত ২০ ডিসেম্বর সকালে এসপি গোল্ডেন পরিবহনে করে সাতক্ষীরা পাঠান। বেবি আক্তার বিকাল বিকালে সাতক্ষীরায় পৌঁছালে পাচারকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বেবি আক্তারকে নৌকাযোগে ভারতে পাচার করে দেন। কিন্তু সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ থানা পুলিশ বেবি আক্তারসহ কয়েকজনকে মুম্বাই যাওয়ার সময় আটক করে এবং হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে।

পরবর্তীতে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বেবি আক্তার তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তার ভারতে পাচার হওয়ার বিষয়টি জানায়। এ ঘটনায় গত ২৪ ডিসেম্বর ভিকটিমের বোন চম্পা বেগম বাদী হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় মানবপাচার (প্রতিরোধ ও দমন) আইনে একটি মামলা রুজু করেন। এ মামলায় কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে মামুনের শাশুড়ি দিলারা বেগম, সোহাগ ও আপনকে। কেরানীগঞ্জ থেকে মানবপাচারের মূলহোতা ফয়সালকে এবং চাঁদপুর থেকে মামুন ও তার স্ত্রী বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানায়, মামুন এর আগেও কবিতা নামের একটি মেয়েকে পাচার করার কথা স্বীকার করেছে। মামুনের সঙ্গে চিহ্নিত মানবপাচারকারী ফয়সালের পূর্ব থেকেই পরিচয় ছিল। ফয়সালের আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে। মামুন এই চক্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে তার স্ত্রী বৃষ্টি, শাশুড়ি দিলারা বেগম এবং পাশের ভাড়াটিয়া সোহাগ ও আপনের সহায়তায় মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল। সে প্রতি মেয়েকে পাচার করার জন্য ২০ হাজার টাকা করে পেতো।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত চক্রের অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

কালের আলো/এএমকে