প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেড হওয়া উচিত : সারজিস আলম

প্রকাশিতঃ 7:20 pm | December 28, 2024

পঞ্চগড় প্রতিনিধি, কালের আলো:

প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেড করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মাথাফাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন ও এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শীত আনন্দ উৎসবে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সারজিস আলম বলেন, শিশু ফাউন্ডেশনের সামাজিক কার্যক্রমের মতো জেলা পর্যায়ে না হোক, উপজেলাভিত্তিক পাঁচটা টিম বা পাঁচটা প্ল্যাটফর্ম পঞ্চগড়ের পাঁচটা উপজেলার যদি দায়িত্ব নেয় তাহলে এই পঞ্চগড় ১০ বছরে যেখানে যাওয়ার কথা ছিল পাঁচ বছরেই সেখানে যাবে। আমাদের এই চর্চাটা গোড়া থেকেই শুরু হওয়া উচিত। এই প্রাইমারি লেভেল থেকে।

তিনি বলেন, আমরা দেখি আমাদের গোড়াটা দুর্বল হয়ে যায়। আমরা দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টরা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে এখন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হয়েছে। একটা সরকারি চাকরি তাকে এই দিকে আগ্রহটা তৈরি করেছে। কিন্তু তাদের গ্রেড দেওয়া হচ্ছে ১৩ গ্রেড। ১৩ গ্রেডের ১৭-১৮ হাজার টাকা বেতনে এ ধরনের একজন শিক্ষককে প্রাইমারি স্কুলে রাখা যায় কিনা সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমরা যদি বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও মজবুত (স্ট্রং) করতে চাই। গোড়াটাকে শক্ত করতে চাই। বর্তমানে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির অবস্থা, একজন সন্তানকে লেখাপড়া করনোর যে খরচ সেই জায়গায় আমরা মনে করি আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে এবং এই সরকারি প্রাথমিক স্কুল ও সরকারি যেসব হাইস্কুলগুলো রয়েছে এগুলোকে ঠিক করতে অন্তত ১০ম গ্রেডে বেতন নিয়ে আসা দরকার।

সারজিস আলম বলেন, আমরা যদি আমাদের শিক্ষকদের সেই সাপোর্টটা না দেই, সম্মানিত না করি তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবে স্টুডেন্টকে পড়ালেখা করানোর প্রতি তাদের যে আগ্রহের দায়বদ্ধতা সেটা খুঁজে পাবে না। তাদেরকে জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্যদিকে মনোযোগ দিতে হবে। তো দুই দিকে মনোযোগ দিলে খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের স্টুডেন্টদের সামনের যে কাঙিক্ষত অগ্রগতি সেটা আমরা দেখতে পাব না। তো আমরা শুধুমাত্র স্টুডেন্টদের নিয়ে কাজ করব, আমাদের অবকাঠামোর গুলো দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে আমাদের যারা সম্মানিত শিক্ষক রয়েছেন তাদের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

তিনি বলেন, এই তেঁতুলিয়া উপজেলার শিশুদের নিয়ে শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন কাজ শুরু করেছে, আরও বড় পরিসরে কাজ করুক। আমাদের স্কুলের এসএসসি, এইচএসসিতে যারা জিপিএ-৫ পায় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় তাদেরকে কীভাবে সহযোগিতা ও উৎসাহিত করা যায় সেই কাজগুলো এই ফাউন্ডেশন করুক। আমরা সরকারিভাবে হোক কিংবা রাজনৈতিক বা যে কোনো জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব সহযোগিতা করার।

তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, তেঁতুলিয়া বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। উত্তরের শুরু। বাংলাদেশের এমন কোনো মানুষ নেই যারা টেকনাফ-তেঁতুলিয়া উপজেলার নাম জানে না। এই জায়গায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন পরিদর্শনের জন্য, ভ্রমণের জন্য আসবে। আমরা তেঁতুলিয়াকেই রিপ্রেজেন্ট করব। কিছু শব্দগত বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে বা পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। সেটা পজিটিভভাবে দেখতে হবে। আবার মাঝে মাঝে বিনোদনের দরকার আছে। যেমন আমাদের পঞ্চগড়ের ধাক্কামারা, তেঁতুলিয়ার বুড়াবুড়ি বাজার ও মাথাফাটা এই নামগুলো পরিবর্তনেরও প্রয়োজন। যদিও এ নামগুলো আঞ্চলিকভাবে একটি গুরুত্ব বহন করে।

শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনের শীত উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের বিভাগীয় পরিচালক (যুগ্ম সচিব) আবু জাফর। তিনি শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন ও এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের যৌথ উদ্যোগে জেলার সাত হাজার শিশুর মাঝে শীত আনন্দ উৎসব আয়োজন করে শীতের নতুন জামা (হুডি), স্কুল ব্যাগ ও দুপুরের খাওয়ার আয়োজনে ভূয়সী প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে ব্রাইট স্টার পাঠাগারের সভাপতি তাজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কবীর আহমেদ আকন্দ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) এস এম শফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকির হোসেন, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ডিরেক্টর মোহাম্মদ মণ্জু মোল্লা, এফসিএ ডিরেক্টর অঞ্জন মল্লিক প্রমুখ ।

উপস্থিত ছিলেন তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি এনায়েত কবীর, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাৎ হোসেন রণ্জু, সদস্য সচিব রেজাউল করিম শাহিন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবু সাঈদ মিঞা, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া, প্রধান শিক্ষক শিরিন সুলতানা, প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন জাকারিয়া প্রমুখ।

শীত আনন্দ উৎসবে উপজেলার ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১২০০-১৭০০ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থীর মাঝে এসব উপকরণ প্রদান করা হয়। সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন। জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত শিশুস্বর্গ ২০১০ সাল থেকেই উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার অবহেলিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। প্রতি বছর শিশুদের শিক্ষাবৃত্তি, শীতবস্ত্র, ঈদবস্ত্র প্রদানসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে শিশুস্বর্গ ফাউন্ডেশন।

কালের আলো/এএমকে