ব্যবসায়িক লাভে নদীতে বর্জ্য ফেলার লাইসেন্স কাউকে দেওয়া হয়নি: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান
প্রকাশিতঃ 8:56 pm | December 28, 2024
গাজীপুর প্রতিনিধি, কালের আলো:
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নদীকে একটি সুন্দর প্রাণ ব্যবস্থা হিসেবে দেখতে হবে। আমরা কী নদীর সৃষ্টি করতে পারি? যদি সৃষ্টি করতে না পারি, তাহলে কেনও ধ্বংস করি। নদীগুলোকে শিল্প কারখানার বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত করার অধিকার শিল্প মালিকদের দেওয়া হয়নি। ব্যবসায়িক লাভের জন্য বর্জ্য নদীতে ফেলার লাইসেন্সও দেওয়া হয়নি কাউকে। অনেক কিছুর বিকল্প তৈরি করা যায় কিন্তু নদীর বিকল্প তৈরি করা সম্ভব নয়।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বন দখলকারীদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে কাজ করতে হয় তা আমরা জানি। আগামী তিন মাসের মধ্যে দখল হওয়া জমি উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকদের বনের সীমানা নির্ধারণের কাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
৫ আগস্টের পর থেকে গাজীপুরে দখল হওয়া ৯০ একর বনভূমির মধ্যে ১৬ একর ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘বৃক্ষনিধন ও শিল্পকারখানার দূষণ বন্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদফতরকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সব দিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নবায়নের সময় জনগণের মতামত নিতে হবে।’
পলিথিনের ব্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলে প্লাস্টিকের ব্যাগতো এখনও বন্ধ হয়নি। আমি বলি, আপনি যখন বাজারে যান, দোকানদার যখন আপনাকে পলিথিন ব্যাগ দেয় আপনি ওটা নেন। আপনি ক্রেতা হিসেবে বলেন, এটা নিব না, এটা নিষিদ্ধ ২২ সাল থেকে। আপনার বাবা দাদারা চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন। আপনি কেন বাসায় থেকে একটি চটের ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন না। ক্রেতাদের বলতে হবে, আমরা এটি নেবো না। ক্রেতাদের প্লাস্টিক ব্যবহারের প্লাস্টিক ব্যবহারে অভ্যাস হয়ে গেছে। সরকার এই পলিথিন সরানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’
নতুন প্রজন্মদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নকে নতুনভাবে দেখতে হবে। আমাদের বাতাস পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাস। আমাদের নদীগুলো দূষণের মধ্যে অন্যতম। যে উন্নয়ন আপনার বাতাসকে দূষিত করে, আপনার নদীকে মেরে ফেলে, যে উন্নয়ন আপনার কৃষি জমি কেড়ে নেয়, আপনার মায়ের দুধের সাথে মাইক্রোগ্রাম মিশে যায়— সে উন্নয়ন আসলে উন্নয়ন নয়। আমাদের সময় এসেছে উন্নয়নকে নতুনভাবে দেখার। এত দিন বড় বড় শপিংমল ফ্লাইওভারের উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। আপনারা তা বলবেন না। আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞা হবে— দূষণমুক্ত প্রবহমান নদী, বন, বন্যপ্রাণী থাকবে।’
অনুষ্ঠানে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার, আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের অধিনায়ক, ৬৩ বিজিবির অধিনায়ক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।
স্থানীয় পরিবেশ সমস্যা, বনভূমি দখল ও দূষণ নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা মতামত দেন। উপদেষ্টা এসব সমস্যার দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। পরিবেশ রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
কালের আলো/ডিএইচ/কেএ