এখনও ‘বিজয় দিবসের ভাতা’ পাননি টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধারা
প্রকাশিতঃ 10:37 pm | December 28, 2024
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, কালের আলো:
ডিসেম্বর মাস শেষ হতে চললেও এখনও মহান বিজয় দিবসের ভাতা পাননি টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ইতোমধ্যে দেশের অন্যান্য জেলার মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় ভাতা পেলেও রহস্যজনক কারণে টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাননি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। কেউ কেউ প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলায় ১০ হাজারের বেশি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। বর্তমানে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পান। দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, পাঁচ হাজার টাকা বিজয় দিবসের ভাতা এবং দুই হাজার টাকা বাংলা নববর্ষ ভাতা পান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বছরে একজন সব মিলিয়ে ভাতা পান ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা জানিয়েছেন, বিজয় দিবসের ভাতা চালুর পর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ১৬ ডিসেম্বরের আগে আবার কখনও দুই-চার দিন পর পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু এ বছর ডিসেম্বর মাস শেষ হতে চললেও এখনও ভাতা পাননি। কী কারণে পাননি সেটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও জানানো হয়নি। ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে প্রতিনিয়ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়েও সঠিক তথ্য পাননি। এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এসব মুক্তিযোদ্ধা।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাসাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রথম বিজয় দিবসের ভাতা তুলতে এত সময় লাগছে। গত দুই দিন আগেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কোনও তথ্য পাইনি। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে এসেও ভাতা না পাওয়া আমাদের জন্য হতাশার। কেন পাচ্ছি না, সে বিষয়ে কেউ কোনও তথ্য দিচ্ছে না। ভাতাটি দ্রুত দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম বলেন, ‘বিজয় দিবসের ভাতা এখনও পাইনি আমরা। ভাতা না পাওয়ার কারণ আমার জানা নেই। এর আগের বছরগুলোতে ১৬ ডিসেম্বরের আগেও পেয়েছি, আবার দুই-চার দিন পরেও পেয়েছি। কিন্তু এবার মাস শেষ হওয়ার পথে। এখনও পাইনি।’
আগে কখনও এত দেরি হয়নি উল্লেখ করে টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার খন্দকার জহুরুল হক ডিপটি বলেন, ‘জেলায় ১০ হাজারের বেশি বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। কেউ এবার বিজয় দিবসের ভাতা পাননি। কী কারণে দেরি হচ্ছে, সেটিও জানানো হয়নি আমাদের। আগে কখনও এত সময় লাগেনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহরুখ খান বলেন, ‘জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভাতাটি পেয়ে থাকেন। এখনও জেলা কার্যালয় থেকে ভাতার চেক উপজেলায় আসেনি। চেক পেলে দ্রুত তাদের দেওয়া হবে।’
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাধারণ শাখা, আরএম শাখা ও ট্রেজারি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আমরা চিঠি পেয়েছি। বিজয় ভাতার ফাইলগুলো সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’
ভাতা দিতে এত সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এত সময় লাগার কোনও কারণ নেই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় সব জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় দিবসের ভাতা পেয়েছেন। সিরাজগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গাজী শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ‘এ বছর ১৬ ডিসেম্বরের কয়েকদিন আগেই আমরা বিজয় দিবসের ভাতা পেয়েছি। ভাতা চালুর পর থেকে সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা ১৬ ডিসেম্বরের আগে আবার কখনও কয়েকদিন পর পেয়ে আসছেন। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি।’
কালের আলো/এএমকে