আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেই রাজনীতি করতে চান মোর্শেদ আলম
প্রকাশিতঃ 6:47 pm | February 15, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও এ নির্বাচনে লড়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। ওই সময় প্রথম প্রথম অনেকেই ভেবেছিলেন সবাইকে অবাক করে দিয়ে হয়তো বা তিনি ভোটে দাঁড়াবেন। খোদ ক্ষমতাসীন দলের কোন কোন নেতা ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হতে পীড়াপীড়িও করেছিলেন।
প্রলোভন সত্ত্বেও নীতি ও আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। সেদিনের সেই কথা বলতে গিয়ে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলম বলছিলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় অনেক নেতাই চেয়েছিলেন আমি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করি।
তাঁরা একত্রিত হয়ে ঢাকায় আমার সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন। কিন্তু এমপিত্বের চেয়ে আমার কাছে আমার আদর্শকেই বড় মনে হয়েছে। আমৃত্যু আদর্শের প্রতি অবিচল থেকেই রাজনীতি করতে চাই।’
‘শিল্পায়নের উপজেলা’ হিসেবে পরিচিত ভালুকা উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-১১ আসন। আসনটিতে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: এম.আমান উল্লাহ। তিনি একাধিকবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
অবশ্য এক সময়কার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এ প্রবীণ রাজনীতিক এখন নানা কারণেই দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচিত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন দলীয় একাধিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডা: এম.আমান উল্লাহ’র হাতেই দলীয় প্রতীক নৌকা তুলে দেয় দলটির হাইকমান্ড। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি। মূলত ওই সময় তাকে ঠেকাতেই ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র অন্যতম শীর্ষ নেতা মোর্শেদ আলমের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
কিন্তু তাদের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শিক চেতনা ধারণকারী জনকল্যাণকামী এ নেতা। সম্প্রতি ভালুকার রাজনৈতিক পরিমন্ডলে নতুন করে এ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।
১৯৮৮ সালে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়ান মোর্শেদ আলম। ছাত্র রাজনীতির সিঁড়ি পেরিয়ে ২০০৯ সালে ভালুকা উপজেলা বিএনপি’র শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর দলীয় বিরুদ্ধবাদীদের চ্যালেঞ্জ করে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।
‘অকৃপণ’ হাতে খরচের মানসিকতার জন্যও দল ও দলের বাইরে বেশ আলোচিত বিশিষ্ট শিল্পপতি মোর্শেদ আলম। রাজনীতির মাঠ ও সামাজিক অঙ্গণেও রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি। এ নেতার দৃপ্ত পদচারণায় দলীয় নেতা-কর্মী উদ্বুদ্ধ হন আবার শক্তি-সাহসও পান।
কীভাবে স্থানীয় জনসাধারণের মন জয় করতে হয়, মানবিকবোধ নিয়ে কীভাবে আপদে-বিপদে তাদের পাশে দাঁড়াতে হয় একাধিকবার সেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের সাবেক এ মহাসচিব।
স্থানীয় বিএনপি’র নেতা-কর্মীরাও বলছেন, ২০১৩ সালে মোর্শেদ আলম নিজস্ব উদ্যোগে প্রায় ৬০ হাজার দুস্থ নারীর মাঝে শাড়ি বিতরণ করেছিলেন। পরের বছর সমান সংখ্যক মানুষের মাঝে ৫ কেজি চাল, নারীকেল তেল, সাবান, চিনি ও সেমাই বিতরণ করেও আলোচনার তুঙ্গে উঠেছিলেন। ভালুকার প্রায় শতাধিক মসজিদে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান রয়েছে তাঁর।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় প্রতিপক্ষের কুটকৌশলে জেতা নির্বাচন হেরেছিলেন মোর্শেদ আলম। বিজয়মাল্য পড়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ত্যাগী ও পরীক্ষিত রাজনীতিক গোলাম মোস্তফা।
তবে স্থানীয় উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহম্মেদ দাবি করেন, উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু’র কুটকৌশলে সেই নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছিল। কমপক্ষে ২০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে মোর্শেদ জয়ী হলেও মাত্র সাড়ে ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে তাঁর পরাজয় দেখানো হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারাদন্ডের ঘটনায় বিএনপি’র নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলছে। সব হিসাব-নিকাশ কষে বিএনপি শেষ পর্যন্ত এ নির্বাচনে অংশ নিলে ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে দলের টিকিট পেতে পারেন মোর্শেদ আলম।
‘জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত এ নেতা ইতোমধ্যেই কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেয়েছেন। এসব নিয়ে কোন ‘মাথাব্যাথা’ না থাকলেও মোর্শেদ আলমের ভাবনায় মূলত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্জন কারাবাস ও দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
এ প্রসঙ্গে মোর্শেদ আলম দৈনিক কালের আলোকে বলেন, ‘সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচন করার দিবাস্বপ্ন দেখছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এ দেশের মাটিতে কোন নির্বাচন হবে না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ভূয়া ও মিথ্যা মামলায় ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) অবৈধভাবে দন্ড দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে খালেদা জিয়ার কোনো সংযোগ নেই। দেশের জনগণ এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। শান্তিপূর্ণ কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমেই ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হবে।’
কালের আলো/এসসি/ওএইচ