বছরের প্রথম দিন পাঠ্যবই বিতরণে চ্যালেঞ্জ
প্রকাশিতঃ 10:50 pm | December 31, 2024
কালের আলো ডেস্ক:
২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই সব শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথম দিন পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। ফলে সব শিক্ষার্থী ক্লাসের সব বই পাচ্ছে না। অন্যদিকে রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতি বছরের প্রথম দিন পাঠ্যবই উৎসব করা হলেও এবার তা হচ্ছে না। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য উৎসব করা হবে না বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে ৪০ কোটির বেশি বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের ৯ কোটি ৩৮ লাখ আর আর মাদ্রাসার এবতেদায়ি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য প্রায় ৩১ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপা হচ্ছে। বছরের শেষ দিন পর্যন্ত সব বই ছাপা হয়নি। ফলে বছরের প্রথম দিন সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ড. রিয়াজুল হাসান জানান, বছরের প্রথম দিন (১ জানুয়ারি) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব বই এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিরও বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই আংশিক দেওয়া হবে। এসব বই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পৌঁছে দেওয়ার কথাও রয়েছে। আগামীকাল বুধবার (১ জানুয়ারি) নতুন বছরের প্রথম দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়া বইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হবে। কোনোরকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই পাঠ্যবই সরবরাহ করা হবে এ দিন।
পাঠ্যবই সরবরাহ ও শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এ রিয়াজুল হাসান জানান, বছরের প্রথম দিনই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব বই এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিরও বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই আংশিক দেওয়া হবে। এগুলো এমনভাবে বিতরণ করা হবে, যাতে করে প্রত্যেক উপজেলায় কিছু না কিছু নতুন বই যায়।
দশম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয় মিলিয়ে ১ কোটি ১০ হাজার নতুন বই প্রস্তুত হয়ে গেছে বলে জানান এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘এগুলোও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে। আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাকি বই এবং দশম শ্রেণির বাকি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। আর ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের আরও পাঁচটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি সব বই বিতরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক টেন্ডার বাদ দিয়ে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করার কারণে সময় নষ্ট হয়েছে। সে কারণে যথাযথ সময়ে বই ছাপার কাজ শুরু করা যায়নি। অন্যদিকে, পাঠ্যবই পরিমার্জনের কারণে আরও এক দফা দেরি হয়। ফলে পাঠ্যবই ছাপার সময় কমে যায়। এছাড়া কাগজ পাওয়াসহ বিভিন্ন সংকট রয়েছে বলেও জানান মুদ্রণ মালিকরা।
এনসিটিবি জানায়, এবার মোট বইয়ের সংখ্যা ৪০ কোটির মতো। এর মধ্যে মাদ্রাসার এবতেদায়ি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য দুই কোটি ৩১ লাখের মতো এবং প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটির বেশি। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে (২০১৩ সাল থেকে পাঠ্যবই) ফেরত যাওয়ায় মাধ্যমিকের বইয়ের সংখ্যা এবার বেশি। কারণ স্থগিত হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীকে ১৪টি করে বই পড়তে হতো। আর ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ২২টি করে এবং নবম-দশম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৩৩টি করে বই ছাপতে হতো। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের পড়তে হতো ১৪টি করে পাঠ্যবই। এসব কারণেও পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিন বই দেওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্মি প্রিন্টিং প্রেস থেকে মাধ্যমিকের এক কোটি বই ছেপে নেওয়া হয়েছে ডিপিএম পদ্ধতিতে। তবে নবম ও দশম শ্রেণির বই ছাপার কাজ শুরু করতে হয় ডিসেম্বরের শেষ সময়। ফলে শিক্ষার্থীদের হাতে কিছু বই জানুয়ারি শুরুর দিকে দিতে পারলেও সব বই জানয়ারিতে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন মুদ্রণ মালিকারা।
অনলাইনে থাকবে ৪৪১টি বই
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের বিনামূল্যের মূল পাঠ্যবইগুলোর মধ্যে ৬৯১টি বই নতুন করে পরিমার্জন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪১টি বইয়ের পরিমার্জন সম্পন্ন করে পিডিএফ ভার্সনে রূপান্তর সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই এই পিডিএফ ফাইলগুলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এ রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘শিগগিরই এগুলো এনসিটিবি’র ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। সোমবারের মধ্যেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। এরপর এটি প্রকাশের জন্য প্রস্তুত হবে। দ্রুতই অনলাইনে পাওয়া যাবে এসব বই।’
বুধবার (১ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৫ সালের পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
কালের আলো/এএমকে