নতুন বারতা, নতুন আনন্দধারায় স্বাগত ২০২৫
প্রকাশিতঃ 12:06 am | January 01, 2025
কালের আলো রিপোর্ট:
কালের আবর্তে হারিয়ে গেলো আরও একটি বছর। সময়ের চক্রে আর কখনই ফিরবে না বছরটি। বিদায় ২০২৪। নতুন দিনের আভায় পুবের আকাশে উদিত হলো নতুন সূর্য। স্বর্ণরাঙা উজ্জ্বল ভোর চারদিকে স্বপ্নের সুষমা ছড়িয়ে স্বাগত জানাচ্ছে ২০২৫ সালকে। হ্যাপি নিউ ইয়ার। অতীতের সব হিংসা, বিদ্বেষ পেছনে ফেলে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির নতুন ভোরের শুভ সূচনা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- ‘ছন্দে ছন্দে পদে পদে অঞ্চলের আবর্ত-আঘাতে/ উড়ে হোক ক্ষয়/ ধূলিসম তৃণসম পুরাতন বৎসরের যত/ নিষ্ফল সঞ্চয়।’ নতুন সূর্যোদয় যেন নিয়ে এসেছে নতুন বারতা এবং নতুন আনন্দধারা।
আজ ২০২৫ সালের প্রথম সূর্যোদয়। যেখানে মিশে আছে অন্ধকার কেটে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। সকালে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের সূর্যোদয় হলেও ঘড়ির কাঁটা মঙ্গলবার রাত ১২টা অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গেই গণনা শুরু হয়েছে নতুন বছরের। নতুন বছর মানেই নতুন প্রত্যাশা। উদ্যম আর সাহস নিয়ে আবারও পথচলার শুরু। খ্রিষ্টীয় নতুন বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস।
নতুন বছরের মাহেন্দ্রক্ষণে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির নতুন শিখরে আরোহণের সোপান রচনা করার অনুপ্রেরণা। নতুন বছরে মানুষে-মানুষে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও জোরদার হোক, সব সংকট দূরীভূত হোক, সব সংকীর্ণতা পরাভূত হোক এবং সবার জীবনে আসুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এই প্রার্থনা সবার।
বাংলাদেশের জন্য ঘটনাবহুল একটি বছর ২০২৪ হারিয়ে গেছে কালের কপোলতলে। বছরের শুরুতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ‘ডামি’ জাতীয় নির্বাচন হয়। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনের। বছরের শেষ উল্লেখযোগ্য বড় ঘটনা প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে আগুন। বিভিন্ন ঘটনা যেমন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে তেমন সংগ্রামের মাধ্যমে এসেছে সাফল্যও। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা শুরু করে।
বিদায়ী বছরের আলোচিত ঘটনার মধ্যে ছিল রাজধানীর বেইলি রোডের কেএফসি ভবনের পাশের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। প্রাণ যায় ৪৬ জনের। ভবন ঘিরে বহুবিধ অনিয়ম সামনে আসে। শুরু হয় ‘লোক দেখানো’ অভিযান। ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার আগের মতোই চলছে গোটা শহরের রেস্টুরেন্ট বা ভবন সংক্রান্ত কার্যক্রম।
১০ মার্চ সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপালের কাঠমান্ডুতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবার নতুন এ ফরম্যাটে চ্যাম্পিয়ন হয় ইয়ারজানরা। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৫ ফরম্যাটেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির আছে মেয়েদের। গত বছরের ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ দখলে নেয় সোমালিয়ান জলদস্যুরা। জিম্মি হন ২৩ বাংলাদেশি। দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় পর ১৪ এপ্রিল ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্ত হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও আবু সাঈদকে হত্যা জুন মাসে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন জুলাইয়ে ভিন্ন রূপ পায়। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য উত্তাল হয়ে দেশের শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীদের রুখতে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নামে ছাত্রলীগও। ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। তার বুক চিতিয়ে দেওয়া আত্মাহুতি বিশ্ব মিডিয়ায়ও নাড়া দেয়। পরে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। পুরো সময়ে শহীদ হন প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা।
গত ৬ আগস্ট এক নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ৮ আগস্ট শপথ নেয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৭ জন উপদেষ্টা নিয়ে গঠিত সরকার পরে ২২ জনে দাঁড়ায়। ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে তিনজন উপদেষ্টা হিসেবে জায়গা পাওয়া ছিল চমক।
১ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় বাতিল করেন আদালত। ২০০৪ সালের এ হামলায় ২৪ জন নিহত হন। বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা থেকে মুক্তি পান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্যরা।
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ২০২৫ সালে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতিক-সব ক্ষেত্রে দেশ আরও এগিয়ে যাবে, এমন প্রত্যাশা সবার। নতুন উদ্যম নিয়ে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই। আজকের দিনে দেশবাসীর এই প্রত্যয়। নিজস্ব বর্ষপঞ্জি থাকার কারণে বাঙালি বছরে দুবার বর্ষবরণ করে- একটি পহেলা বৈশাখ, আরেকটি ১ জানুয়ারি। বাঙালি একবার বলে শুভ নববর্ষ, আরেকবার বলে হ্যাপি নিউ ইয়ার।
কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে