রিজার্ভ বাড়ায় অর্থনীতিতে আত্মবিশ্বাসের সংকেত

প্রকাশিতঃ 4:38 pm | January 07, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

গেল পাঁচ মাসে ৩৩০ কোটি ডলার পরিশোধের পর দেশে বৈদেশিক রিজার্ভ পরিস্থিতি বেশ শক্তিশালী হয়েছে। গত ৫ আগস্ট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময়, দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৭০ কোটি ডলার, যার মধ্যে ৩৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। পরিশোধের পরও দেশের রিজার্ভ বেড়ে ২১.৩৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি এবং আত্মবিশ্বাসের সংকেত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এছাড়া, গত ডিসেম্বর মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। দেশজুড়ে প্রবাসী পাঠানো রেমিট্যান্স গত মাসে ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার পৌঁছেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। রেমিট্যান্স প্রবাহের এই বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্বস্তি ফিরেছে এবং রিজার্ভের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

দেশের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রফতানি আয় অনেক বেড়েছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। গত অর্থবছরে যেখানে রপ্তানি আয় ৫.৮৯ শতাংশ কমেছিল, সেখানে এবার তা বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন—রফতানি প্রবৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট অনেকটা দূর হয়েছে।

  • আমরা রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি এবং পাচার রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ ২১.৩৮ বিলিয়ন ডলার এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার। এর আগে, গত নভেম্বরের শেষে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৮ কোটি ডলার, এবং গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ডলার। ফলে, ডিসেম্বর মাসে রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে ২৬২ কোটি ডলার এবং গ্রস রিজার্ভ বেড়েছে ১৭৪ কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবি থেকে ঋণের অর্থ ছাড়ের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। এদিকে, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো বেড়েছে এবং অর্থ পাচারও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, ফলে দেশে মুদ্রার মজুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, আমরা রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি এবং পাচার রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদেশি ঋণ পরিশোধের পর রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে একটি প্রশংসনীয় এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ। বিশেষ করে, দেশে কিছু সময় আগে যারা বিদেশে ঋণ নিয়ে পাচার করছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে এখন দেশের অর্থনীতির চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৪ সালের মধ্যে আরও কিছু বিদেশি ঋণ থেকে অর্থ ছাড় হতে পারে, যার ফলে রিজার্ভ আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি থেকে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে, রিজার্ভের পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী হবে, এমনটাই আশা করছেন অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা।

এতসব উন্নতির কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরেছে এবং রিজার্ভের পরিমাণ বাড়তে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে এবং তাদের শিগগিরই এই ধারাবাহিক উন্নতি অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

কালের আলো/এমডিএইচ