দেশ বদলে দিতে তারুণ্যের উৎসবে নব উদ্দীপনা, নতুন বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা

প্রকাশিতঃ 8:20 pm | January 07, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সেদিন এক হয়ে সাম্যের গান গেয়েছিলেন ছাত্র-জনতা। শিশু-কিশোর-তরুণ আর কতশত মানুষের আত্মত্যাগে বাস্তবিক সেই স্বপ্নের দুয়ার খুলেছে সবার সামনে। বিপিএলের হাত ধরে দেশের ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’কে শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে দিতে যুগান্তকারী এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস’র লেখা লাইন ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগান নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তারুণ্যের উৎসব। ক্রীড়া আর সংস্কৃতির সোপান বেয়ে তারুণ্যে এসেছে জোয়ার।

তারুণ্যের উৎসবে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, কাবাডি কিংবা অন্যান্য স্পোর্টসকে। গোটা জাতি মেতে উঠেছে নতুন উদ্দীপনায়। ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’-এই প্রত্যয় যেন আশা জাগিয়েছে শিশু-কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে সবার মাঝে। শীতের আবহে পুরো দেশের প্রান্তে প্রান্তে জড়িয়ে যাওয়ার সময়টিতে দেশের কিশোর ও তরুণ সমাজকে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকারের যুগান্তকারী এই পদক্ষেপ কার্যত যেন অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তারুণ্যের সোচ্চার আন্দোলন হিসেবেই রূপ নিয়েছে। স্বপ্নবাজ, উদ্যমী ও অপ্রতিরোধ্য তারুণ্যকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

মাসব্যাপী এই উৎসবে তরুণদের নিয়ে কর্মশালা, স্কেটিং উৎসব, সাইকেল রেইস, গ্রামীণ খেলাধুলা, পিঠা উৎসব, রচনা, চিত্রাঙ্কন, ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট, ভলিবল টুর্নামেন্ট, ফুটবল টুর্নামেন্ট, কারাতে প্রতিযোগিতা, অবস্টেকল রেইসসহ ২৩টি ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। তরুণ-যুবাদের সুকুমারবৃত্তির অনুশীলনসহ সংস্কৃতিবান ও ক্রীড়ামনষ্ক করার পাশাপাশি মাদকের ভয়ঙ্কর থাবামুক্ত করার দৃপ্ত শপথ উচ্চারিত হয়েছে কণ্ঠে কণ্ঠে।

পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে একদিকে দেশপ্রেম, মানবতাবোধ, ন্যায়পরায়ণতা, সৎ আচরণ ও সহমর্মিতাসহ মানবিক গুণাবলি, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বিকাশকে করেছে জাগ্রত। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে এই উৎসবের। এসবের মাধ্যমে চিরঞ্জীব হয়ে ওঠেছে ৩৬ জুলাই এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অবিস্মরণীয় স্মৃতি। এর আগে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এর উদ্বোধনী খামে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আমাদের বিভিন্ন জেলার প্রতিবেদকের পাঠানো রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ও তরুণ এবং যুব সমাজকে মাদকের থাবা থেকে বাঁচাতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পঞ্চগড়ে মাসব্যাপী তারুণ্যের উৎসব উদ্বোধন করা হয়েছে। ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উদ্বোধনের প্রথম দিনেই আয়োজন করা হয় মাদকবিরোধী জনসচেতনতামূলক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ।

ওইদিন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি মাদকবিরোধী বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে জেলা স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে বেলুন উড়িয়ে তারুণ্য উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করে প্রীতি ফুটবল খেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সাবেত আলী।

মাসব্যাপী ব্যতিক্রমী এমন আয়োজনে একাত্মতা ঘোষণা করেন স্থানীয়রা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন সৈয়দপুর সেনানিবাস ২৯ বি’র  ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল ইউসুফ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক আলী আসলাম হোসেন প্রমুখ।

দেশ গড়ার প্রত্যয় তারুণ্যের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে খাগড়াছড়িতে। বুধবার (০১ জানুয়ারি) সকালে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও তারুণ্যের প্রতিজ্ঞা খাগড়াছড়ি পরিচ্ছন্নতা অভিযান অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বর ঘুরে আবার কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। পরে পৌরসভার উদ্যোগে খাগড়াছড়ির পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়। এই পরিছন্নতা অভিযান কার্যক্রম আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক নাজমুন আরা সুলতানাসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক নাজমুন আরা সুলতানা জানান, তারুণ্যের উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘দেশ বদলাই পৃথিবী বদলাই’। তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলবে। পৌরসভার প্রত্যেক এলাকায় বর্জ্য অপসারণ করা হবে। পাশাপাশি এলাকাবাসীদের আমরা অনুরোধ জানাব, তারা যেন ময়লা-আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে। নিজেদেরই আবর্জনা ফেলা থেকে সচেতন হতে হবে।’ তিনি খাগড়াছড়িকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান। পরে মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ি জেলা সদরস্থ পৌর টাউন হল মিলনায়তনে ইয়ুথ সোশ্যাল অর্গানাইজেশন এর উদ্যোগে তারুণ্যের সম্প্রীতি সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি শাহনেওয়াজ সভাপতিত্ব করেন।

মুন্সীগঞ্জ জেলায় ও ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর সদর উপজেলায় মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) উদ্বোধন হয়েছে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এদিন এই উৎসবের উদ্বোধন করেন মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত। এসময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে, শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে মশক নিধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও জলাবদ্ধতা নিরসন কর্মসূচি পালন করা হয়। শেরপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকালে তারুণ্যের উৎসবের এসব কর্মসূচি উদ্বোধন করেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল আলম, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. চাঁন মিয়াসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। শেরপুর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ প্রতিপাদ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গত বুধবার (০১ জানুয়ারি) পৃথক পৃথকভাবে চাঁদপুর, কুমিল্লার তিতাস ও সুনামগঞ্জে তারুণ্যের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে ওইদিন বিভিন্ন স্থানে র‌্যালি, সভা এবং বেলুন ও পায়রা উড়ানো হয়।

খুলনায় তারুণ্যের উৎসব শুরু হচ্ছে আগামী শুক্রবার (১০ জানুয়ারি)। খুলনা বিভাগীয় প্রশাসনের আয়োজনে এদিন অনুষ্ঠিত হবে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা, পিঠা উৎসব, অবসটেকল রেইস, স্কেটিং উৎসব, কারাতে প্রতিযোগিতা ও কারাতে শো ও ভলিবল টুর্নামেন্ট। এসব আয়োজন তারুণ্যের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে জানান দিবে। যেখান থেকে সূচনা হবে নতুন এক দিগন্তের।

কালের আলো/এমএএএমকে