বিশ্ব মানচিত্রেও অনন্য ‘শিশু বন্ধু’ শেখ হাসিনা

প্রকাশিতঃ 9:18 am | March 14, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

মেধাবী হিসেবে স্থানীয় পরিসরে অতিথিদের কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে ওদের। তবে রাষ্ট্রীয় বিশাল এমন মঞ্চে কোনদিনও ওঠার সুযোগ হয়নি। এবারই প্রথম বড় মঞ্চে চারবারের একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়ার বিরল সৌভাগ্য হলো সোনামণিদের।

আবার তিনি এমনই একজন প্রধানমন্ত্রী যাকে ক্ষমতার দাম্ভিকতা কোনদিনই স্পর্শ করেনি। তিনিই কেবল পারেন পরম মমতায় কোন শিশুর গলায় ম্যাডেল পরিয়ে দিতে। সার্টিফিকেট তুলে দিয়ে হ্যান্ডশেক করে জড়িয়ে ধরে স্নেহ করতে। যেন অবিকল এসব কচিকাঁচাদের মায়ের মতোন। শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আবেগ, আকুলতা, নিবিড় টান প্রকারান্তরে তাঁর মাঝে একজন মায়ের প্রতিচ্ছবিই ফুটিয়ে তোলে।

আরো পড়ুন:
কুমুদিনী কমপ্লেক্সে ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী

পাহাড়সম ব্যস্ততার মধ্যেও এই প্রধানমন্ত্রীই গণভবনের লনে শিশুদের সঙ্গে খেলার জন্য সময় বের করেন। নিজ পরিবার ঘনিষ্ঠ স্বজনদের আদুরে শিশুরা ছাড়াও যেখানে আসতে পারেন দূরের বাচ্চাকাচ্চারাও। টাইগার তারকা সাকিবের কন্যা আলাইনা হাসানকে কোলে নিয়ে বসতে পারেন, মেতে উঠতে পারেন খেলাতেও।

এসব টুকরো টুকরো স্মৃতি মানসপটে তাজা থাকতেই বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষায় অবদান রেখে পুরস্কার জেতা শিশুদের সঙ্গেও স্নেহময় ও তাদের প্রতি যত্নশীল এক প্রধানমন্ত্রী’র চেহারাই ফুটে উঠে।

শেখ হাসিনার দূর থেকে কাছের মানুষ মাত্রই জানেন পিতা মুজিবের কাছ থেকেই এসব গুণাবলী পেয়েছেন তিনি। ফলশ্রুতিতে শৈশব থেকে আজ অবধি নির্লোভ, নিরহংকারী, ভোগ, বিলাসহীন, সাদামাটা নিরাবরণ জীবনের অধিকারী বঙ্গকন্যা। দীর্ঘ সংগ্রামমুখর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর সাহসী কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নন্দিত হয়েছেন। বাঙালিদের এনে দিয়েছেন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা।

বুধবার (১৩ মার্চ) ফটো সাংবাদিক ইয়াসিন কবির জয়ের তোলা এসব ছবিতে স্বজনের মতোই শিশুদের যেন অন্য রকম মমতায় আগলে রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এইতো চার বছর আগে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে এক অটিষ্টিক শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। প্রায় তিন ঘন্টা সেই অনুষ্ঠানে থেকে শিশুদের কথাই সেদিন মেনে চলেছেন! তাদের মনোজগতের বিকাশ ঘটাতে ভূমিকা রেখেছেন।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হয়েও তাদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য অনুধাবন করেই সহানুভূতিশীল হয়েছেন। অবজ্ঞা না করে মহানুভবতার মাধ্যমে কীভাবে ওদের আপন করে নিতে হয় সেই বার্তাই দিয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র ক’দিন আগেও পাঠ্যপুস্তক উৎসব শেষে শিশুদের সঙ্গে গণভবনে খেলতে খেলতে তাদের বায়না মেটাতে ছবিও তুলেছেন।

এই প্রধানমন্ত্রীই ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির সন্তান লীলা ও কাইয়ূসের সঙ্গে একেবারে নির্ভার হয়ে মাতোয়ারা হয়ে উঠতে পারেন আনন্দে। পরম যত্নে নাতনির চুলে বেণীও বেঁধে দিতে পারেন। নিজ হাতে মাছ কেটে পরিস্কার করেন; পরম মমতায় রান্না করে পরিবেশন করেন নাতিপুতিরা খাবেন বলেই। তিনি ছাড়া আর এমন প্রধানমন্ত্রী কী করে পাবে বাংলাদেশ!

মূলত এসব গুণাবলীর কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়ক থেকেও তাকে অনন্য করেছে। নিয়ে গেছে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায়। শিশুদের তিনি আনন্দ দেন। নিজেই এক বিরাট শিশু হয়ে বন্ধুর মতো ওদের সঙ্গে গভীরভাবে মিশতে পারেন। অকৃত্রিম স্নেহ, মমতা আর গভীর ভালোবাসায় মিষ্টি মুহুর্তে মুগ্ধ করেন শিশুদের।

বিশ্বের তাবৎ দেশের কোন কোন রাষ্ট্রনায়কদের মতো বিশেষ দিন বা দিবসের গন্ডিতে শিশুদের সঙ্গে নিজের প্রীতি ও স্নেহময় পরিবেশের অবতারণা না করে সময়ে সময়েই হয়ে ওঠেন একান্ত আপন। মা’কে ভালোবাসতে যেমন কোন বিশেষ দিনের প্রয়োজন হয় না, তেমনি শিশুদের ভালোবাসা দিতেও দিন-তারিখের প্রয়োজন পড়ে না প্রধানমন্ত্রীর।

পটুয়াখালীর চতুর্থ শ্রেণির স্কুল শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের চিঠির জবাব দিয়ে দেখিয়ে দেন তিনি বিত্ত-বৈভব নয়, ক্ষমতার গর্বে অভিষিক্তও নন। গণতন্ত্রের মূল্যবোধের ওপর সবার অধিকার প্রতিষ্ঠাই তাঁর কাছে মুখ্য। শত-সহস্র বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে, ১৯ বারের সশস্ত্র হামলা ও হত্যার হুমকিসহ কতশত প্রতিকূলতা ঠেলে ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রামী হয়ে উঠতে পারেন।

ভীষণ কর্মব্যস্ততার মধ্যেও বঙ্গকন্যা অনুধাবন করেন শিশুরা খেলতে খেলতে হাসতে হাসতে সুন্দরভাবে নিজেদের মতো করে তাদের পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে পাশে রেখে প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তার ঘেরাটোপ ভেঙে টাঙ্গাইল সদরের জোবায়দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী পিয়াসা সরকারের আঁকা প্রধানমন্ত্রীর একটি পোট্রেট নি:স্বার্থ ভালোবাসার উপহার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।

শিশুটির আড়াই মাসের অবিরাম প্রচেষ্টা ও ক্লান্তিহীন পরিশ্রমের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাকে স্বপ্ন পূরণের আনন্দে বিভোর করে তুলতে পারেন। পরিমাপহীন এই মমতার মধ্যে দিয়ে সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন তিনি তুলনাহীন। আমাদের বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা।

কালের আলো/এমআর/এএ