প্রধান উপদেষ্টার ফের ঘোষণায় স্পষ্ট ক্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আসন্ন

প্রকাশিতঃ 11:42 pm | January 08, 2025

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর:

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কারও কারও মাথাব্যাথার শেষ নেই। ওয়ান ইলেভেন স্টাইলে টু ইলেভেন হতে পারে বলেও কেউ কেউ আগাম ভবিষ্যৎদ্বানী করতেও ছাড়ছেন না কখনও কখনও। গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী অন্তর্বর্তী সরকারও একাধিকবার এ নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর করতে চাইলেও সেদিকে দৃষ্টি দিতে নারাজ অনেকেই। নিজের বিভিন্ন বক্তব্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সময়সীমার বিষয়টি স্বয়ং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস খোলাসা করেছেন। তিনি কোন অস্পষ্টতা না রাখলেও শঙ্কার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি অনেকেই। গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে তমসাচ্ছন্ন না করে আলোকোজ্জ্বল করতে বরাবরই অগ্রণী সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশের একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া নিজের সর্বশেষ সাক্ষাতকারেও প্রধান উপদেষ্টার বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন।

জটিল ও কঠিন সময় থেকে দেশের উত্তরণে নির্বাচনই একমাত্র পথ হতে পারে তাঁর বক্তব্যে এই বিষয়টি ছিল পরিস্কার। গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত্তিতে রাখতে সংসদীয় রীতিতেই ক্ষমতার পালাবদলকে তিনি উপজীব্য করেছেন। সেনাপ্রধানের ইতিবাচক এই বক্তব্যে দেশের রাজনীতিকদের মধ্যে কাটতে শুরু করে দ্বিধা। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান নির্বাচন, সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতায়ন এবং এ লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশবাসী অবশ্যই একটা ভালো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্যও সেটা। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়সীমা দিয়েছেন। সেটা ঠিক সময়। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনের রূপরেখা বাস্তবায়নে সব সহযোগিতা করব।’

এই চার তারকা জেনারেলের এমন মতের পর থেকেই ধরে নেওয়া হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। কিন্তু ক্ষমতাপ্রিয় কোন কোন মহল সরাসরি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের জন্যই মরিয়া হয়ে যেন পুরনো কাসার ঘণ্টাই বাজাতে শুরু করে। ফলত পুনরায় এই সম্পর্কিত সব রকমের অনিশ্চয়তা দূর করে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সঙ্গে বুধবার (৮ জানুয়ারি) ইইউ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ার এর সৌজন্য সাক্ষাতকালে শান্তিতে এই নোবেল বিজয়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন। সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার না চাইলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে অর্থ আর পেশিশক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাবে জবাবদিহিহীন হয়ে পড়ে রাজনীতি। জনস্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ায় রাজনীতির ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। কর্তৃত্ববাদ ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা খাদের কিনারে নিয়ে যায় গণতন্ত্রকে। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসীন হয় শান্তিতে নোবেলজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগেও দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এমন সরকার এসেছে। কিন্তু এবারের সরকার আগের যেকোনো অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে আলাদা।

কারণ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারটি একটি গণবিপ্লবের ফসল। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর ড.ইউনূস বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বলেন। দেশের ভবিষ্যৎ নিষ্কণ্টক করতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারকাজ শেষ করেই কাক্সিক্ষত নির্বাচন আয়োজনের কথা জানান। তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু করে দেন। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংস্কার নিয়ে তোড়জোড় না করে নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতেই নিজেদের বক্তব্য-বিবৃতি উপস্থাপন করে। এরপরও প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে নিজের প্রতিশ্রুতি, পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তের কথা তাঁর বিভিন্ন ভাষণে তুলে ধরেছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটানোর চেষ্টা করেছেন।

তিনি নিজেও মনে করেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনেরও পূর্বশর্ত হচ্ছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। নির্বাচন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত করতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে, নির্বাচনকে ঘিরে তাঁরা এখন অবধি একমত হতে পেরেছে কীনা এ নিয়েও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মাঝে নানা প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমত্যে পৌঁছলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাদের আলোর মুখ দেখাতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও দেশের একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিককে সম্প্রতি দেওয়া সাক্ষাতকারে সুস্পষ্ট একটি ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘২০২৫ সালে আমরা একটা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে যেতে চাই। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি। তাহলেই গণতন্ত্র স্থায়ী হবে।’

কালের আলো/এমএএএমকে