গণঅভ্যুত্থানে আহত আশরাফুলকে থাইল্যান্ডে পাঠাচ্ছে সরকার

প্রকাশিতঃ 3:31 pm | January 09, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত আরও একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাচ্ছে সরকার। তার নাম আশরাফুল ইসলাম। আন্দোলনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই ব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) থাইল্যান্ড নেওয়া হবে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারের নির্মমতা তাকে ব্যথিত করে আশরাফুলকে। প্রতিবাদী আশরাফুল নিজেকে ঘরে রাখতে পারেননি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। জড়িয়ে পড়েন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। ৫ আগস্ট তিনি মিরপুর ১০ নম্বারে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। বাসা থেকে সিএনজি অটোরিকশা চালানোর কথা বলে বের হলেও যোগদান করেন আন্দোলনে। সকাল দশটার দিকে তার মাথায় এসে গুলি লাগে। পড়ে যান রাস্তায়। পরে কয়েকজন তাকে নিয়ে আসেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে।

ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, গত ৫ আগস্ট ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদারের অধীনে নিনসে ভর্তি হন আশরাফুল। তাকে বাঁচাতে চিকিৎসকরা সবটুকু করেন। দ্রুত নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। অপারেশন করে মাথার খুলি খুলে রাখা হয়। তারপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শিফট করা হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। দীর্ঘ দুই মাস লাইফ সাপোর্টে থাকেন আশরাফুল।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের এত চেষ্টার পরও আশরাফুল সুস্থ হয়ে ওঠেনি। চার হাত-পা অবশ হয়ে যায় তার। জ্ঞান ফেরেনি পুরোপুরি। মাঝে মাঝে চোখ মেলে তাকায় সে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলে ভেজিটেটিভ স্টেট। মাঝে লাইফ সাপোর্ট ছাড়াই চলতে পারত সে। কিন্তু পুরোপুরি জ্ঞান ফিরেনি। ডিসেম্বরের ২৪ তারিখে তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। দুটো ফুসফুসই আক্রান্ত হয়। সঙ্গে রক্তচাপ কমে যেতে থাকে। আবার লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয় আশরাফুলকে। নিনসে ৩ বার তাকে নিয়ে বোর্ড মিটিং হয়।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর রাখছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। কিন্তু মেডিকেল বোর্ড তাকে বিদেশে নেওয়ার সুপারিশ করেনি। গত ৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আবার মেডিকেল বোর্ড করার নির্দেশ দেন। নতুন বোর্ড বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়ে ডা. হিমু বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে আশরাফুলকে বিদেশে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু আশরাফুল ও তার স্ত্রীর পাসপোর্ট ছিল না। দ্রুত তাদের পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান। মন্ত্রণালয়ের টাকায় হয় পাসপোর্ট। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও দ্রুত করা হয়। ফলে মাত্র তিন দিনের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

আশরাফুল ইসলামকে আজ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডের ভেজথানি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। আজকে রাত ৮.২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশরাফুলকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটি থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।

কালের আলো/এমডিএইচ