চব্বিশের অভ্যুত্থানকে স্বাধীনতার ওপর স্থান দেওয়ার চেষ্টা করছে একটি মহল: হাফিজ

প্রকাশিতঃ 5:26 pm | January 09, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে একটি মহল একাত্তরের স্বাধীনতার ওপর স্থান দেওয়ার প্রচেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধই জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অহংকার’ শীর্ষক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সমাবেশে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে গণঅভ্যূত্থানকে স্বাধীনতার ওপরে স্থান দেওয়ার প্রচেষ্টা করছে একটি মহল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে, স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে কোনও কিছুরই তুলনা করতে পারি না আমরা। সবার ওপরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, চিরকাল এভাবেই থাকবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধকে কাউকে কলঙ্কিত করতে দিবো না। মুক্তিযুদ্ধ বিভক্ত হবে এটাও আমরা আশা করি না।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, কিছুদিন আগে একটি বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এদেশে দেশপ্রেমিক শুধুমাত্র সামরিক বাহিনী এবং জামায়াতে ইসলামী। এ বক্তব্যে আমরা আহত হয়েছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। এ বাহিনী গড়ে তুলেছেন মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআর এর সৈনিক-অফিসাররা।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কারো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই। একাত্তরে তাদের ভূমিকা ও বর্তমান ভূমিকা, প্রত্যেকটি ভূমিকাই সাক্ষ্য দেয় তারা সবসময় জনগণের পাশে ছিলো এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্যে আমি অবাক হয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম এখন একটা সুযোগ এসেছে, এ সুযোগে তারা একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। সেটি না করে তারা একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে জাস্টিফাই করছে এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে (জামায়াত ইসলামী) এতদিন মিত্র হিসেবেই গণ্য করে এসেছি। তাদের ওপর যখন অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে ফ্যাসিস্ট বাহিনী, আমরা তাদের সহমর্মিতা জানিয়েছি। তাদের দলকে যখন বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে, ধানের শীষ দিয়ে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছি। বেগম খালেদা জিয়া তাদের মন্ত্রীসভায় স্থান দিয়েছে। আমরা অনেকে সেটি পছন্দ করিনি, দলের শৃঙ্খলার স্বার্থে মেনে নিয়েছি। তার বিনিময়ে কী তাদের এ উক্তি করা সঠিক হয়েছে? আমরা এ ধরনের উক্তি তাদের কাছে আশা করি না।

মেজর হাফিজ আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারত দেশে পাঠাবে এ আশায় যখন আমরা বুক বেঁধেছি, তখন দেখা গেলো তার ভিসার মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ, শেখ হাসিনাকে তারা (ভারত) আশ্রয় দেবে এবং বাংলাদেশকে তারা আনস্টেবল করার জন্য, নাশকতা সৃষ্টি করার জন্য তারা (ভারত) তাকে (শেখ হাসিনা) ব্যবহার করবে। এটি করলে তাদের সঙ্গে আমাদের আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার অবকাশ থাকবে না।

কিংস পার্টির ভবিষ্যৎ ভালো হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি এ দেশে একটি কিংস পার্টি গঠন হতে যাচ্ছে। কিংস পার্টির ভবিষ্যৎ আগেও ভালো ছিলো না, ভবিষ্যতেও ভালো হবে না। জুলাই আগস্টে যে ছাত্র নেতারা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের সেই সংগ্রামের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তাদের আবারও অভিনন্দন জানাই। কিন্তু আগামী দিনে আপনারা কোনো কিংস পার্টি করার চেষ্টা করবেন না।

তিনি আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দল যেভাবে দেশপ্রেমিক হওয়ার চেষ্টা করছে…দেশপ্রেমিক হোন, জনগণের কাছে যান। জনগণের কাছে আপনাদের কী স্ট্যান্ডিং সেটি নির্বাচন না হলেতো পরীক্ষা হবে না। আপনারা মনে করেছেন এতদিন সাবালক হয়েছেন একাই নির্বাচন করতে পারবেন; এখন আর বিএনপির প্রয়োজন নেই। মোস্ট ওয়ে্লকাম। আমরা তাকে স্বাগত জানাই। একটি রাজনৈতিক দলের সে অধিকার আছে সে এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আমরা আশা করবো আমরা আগামী দিনেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই। আমাদের নেতা তারেক রহমানের মূল সুর হচ্ছে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি। এখন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের অপকর্মের কথা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। এখন বিএনপি জামায়াতের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয় কিনা এটা দেখার জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মহল রয়েছে। আমি বলতে চাই বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। আমরা কারো ছোটখাটো কথা কিছু মনে করি না। ছাত্ররা অনেক কিছু দাবি করতে পারে, আমরা কিছু মনে করি না। তারা আমাদের সন্তানতূল্য, তারাইতো ভবিষ্যতে দেশকে গড়বে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি উপলব্ধি করুন। নির্বাচন দিতে যত দেরি হবে, শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র করতে তত সুবিধা হবে।

নির্বাচন নিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, আগামী নির্বাচনের কথা বললেই অনেক উপদেষ্টার মুখটা কালো হয়ে যায়। আমরা যখন নির্বাচনের কথা বলি তখন যেন তারা অসন্তুষ্ট হয়ে যায়। আজকে জনগণকে এত কেন ভয় ? জনগণ ভোট দিবে এটা আপনাদের আতঙ্কের কারণ কেন হয়েছে? এসব এলিটজম ছাড়েন। আমরা চাই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এ রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। সংস্কারের নামে আর অধিক সময় নেবেন না। হাসিনা পলায়ন করেছে, এখন যে সংস্কার বাকি আছে সেগুলো জনগণ করবে। এখন শুধু অপরাধীদের শাস্তি বিধান করুন। আহত নিহতদের পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখুন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক ও আব্দুস সালাম।

কালের আলো/এমডিএইচ