শীতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ
প্রকাশিতঃ 10:22 am | January 11, 2025
কালের আলো রিপোর্ট:
শীতে প্রতিদিন বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা এই সময়ে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। দূষিত বাতাসের সঙ্গে মিলিত ঠান্ডা আবহাওয়াও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রাজধানীর শিশু হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে।
জানা যায়, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। এই রোগে শিশুদের ফুসফুস সংকুচিত হয়। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইসিডিডিআর) তথ্যমতে, সারাবিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুতে প্রধান পাঁচ কারণের একটি নিউমোনিয়া। এই রোগের ফলে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় সাত লাখ শিশু মারা যায়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশেও নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার বেশি।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ডিসেম্বরে ভর্তি হয়েছে ২১৬ জন, জানুয়ারির ছয় দিনে ১৯ জন। বর্তমানে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন আছে ৩১ জন। এই রোগে চলতি মাসে মারা গেছে দুজন। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১১৩ শিশু। ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৫১১ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১০৩ জন।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবার জানুয়ারিতে একটু কম রোগী আসছে আগের বছরের তুলনায়। প্রতিবছর শীতে ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়ে যায়, এটা স্বাভাবিক। ডায়রিয়া নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা ভর্তি হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ঘটে বায়ুদূষণের কারণে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের তথ্য অনুসারে, গত ১৫ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৮৫ হাজার ৪৬৯ জন। মারা গেছে ১৯ জন।
আইসিডিডিআরবির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচটি সংক্রামক রোগের মধ্যে নিউমোনিয়া একটি। সংক্রামক রোগে শূন্য দশমিক ৭ মিলিয়ন মৃত্যুর ১৪ শতাংশ হয়ে থাকে নিউমোনিয়ায়। দেশে নিউমোনিয়ায় প্রতিবছর মারা যায় কমপক্ষে ২৪ হাজার শিশু।
এদিকে, শীতকালীন ডায়রিয়া নিয়ে গত ডিসেম্বরে ৭৫ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। জানুয়ারিতে এখন পর্যন্ত তিনজন ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে ১৩৪ জন। নিউমোনিয়া ছাড়াও ঠান্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়েও অভিভাবকরা ভিড় করছেন হাসপাতালে। ছোট থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা পাঁচ বছর বয়সি আদনানের। শীত এলেই শ্বাসকষ্ট বাড়ে। আদনানের বাবা মো. ইব্রাহিম বলেন, ঢাকায় ধুলোবালি মারাত্মক। এর মধ্যে ঠান্ডাও হঠাৎ করে এসেছে। বাচ্চাকে প্রথম স্কুলে পাঠাতে শুরু করেছি। আগে বাসায় থাকত। এখন তো বাইরে যেতেই হয়। এই অস্বাস্থ্যকর আবহাওয়ায় তাকে সুস্থ রাখাই কঠিন।
শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক নাবিলা আকন্দ বলেন, নিউমোনিয়ার প্রধান কারণ বায়ুদূষণ। শিশুরা বেশিরভাগই বাতাসে আসা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া মাধ্যমে আক্রান্ত হয়। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এই ধরনের জটিলতায় ভোগা শিশুর সংখ্যা কমবে।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম বলেন, শীতের সময় ধুলোবালি ওড়ে বেশি। শিশুদের এ সময় অনেক যত্ন নিতে হবে, বাবা-মাকে সতর্ক থাকতে হবে। বাইরে ধুলোবালিতে নেওয়া যাবে না। গেলেও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। উষ্ণ পানি ব্যবহার করতে হবে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট মূলত শীতে ধুলোবালি থেকে ছড়ায়। একটা হলো পানিবাহিত দূষণ, আরেকটি বায়ুবাহিত। শীতের ধুলোবালিতে খাবারগুলোতে জীবাণু গিয়ে পরে সেই খাবার থেকে ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবশ করে। এতে করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া দেখা দেয়। প্রথমবার ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয় ব্যাকটেরিয়ার জন্য। প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। পরে ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো সহজেই আক্রান্ত করতে পারে।
কালের আলো/আরআই/এমকে