বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারী দেশ বাংলাদেশ
প্রকাশিতঃ 3:41 pm | January 13, 2025
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারী দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। তামাক ব্যবহারের উচ্চ হারের কারণে এ দেশে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক নাগরিক অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন এবং রোগাক্রান্ত হচ্ছেন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারী) জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটের ওপর কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
২০২১ সালে বিশ্বের ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি নাগরিক তামাকজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন (যা ওই বছরে মোট মৃত্যুর প্রায় ১২ শতাংশ)। আর এর মধ্যে ২১ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে (২৭ হাজারের বেশি)।
তামাক ব্যবহারের কারণে উৎপাদনশীলতার ক্ষতির পাশাপাশি তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ প্রতি বছর বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের কারণে অথনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা, যা ওই বছর তামাক পণ্য বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের তুলনায় প্রায় ৩৪ শতাংশ বেশি। উন্নয়ন সমন্বয় বাংলাদেশে তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ মহন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসিতে বিনিয়োজিত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল ফর এনসিডি’স অনুসারে, বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০২৫ সময়কালের মধ্যে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে (২০১০ সালে তামাক ব্যবহারের হার ছিলো ৪০.৩ শতাংশ, যা বর্তমানে ৩৫.৩ শতাংশ)।
তামাক ব্যবহারের হার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমিয়ে আনতে এদেশে সিগারেট ব্যবহারের হার কমিয়ে আনতেই হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে সিগারেট ব্যবহারের হার ১৫.১ শতাংশ। সিগারেটের খুচরামূল্য ক্রমেই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার কৌশলটিই এই ক্ষতিকারক পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে আনার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়কালে সিগারেটের দাম ৬ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অথচ এই সময়ের মূল্যস্ফীতির হার ৩২ শতাংশ। ফলে সিগারেট আরও সহজলভ্য হয়েছে।
সর্বশেষ পাঁচ অর্থবছরে বার্ষিক সিগারেট বিক্রির পরিমাণ ৩৫,১৬৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪৭,৩০৭ কোটি টাকা হয়েছে। যেখানে সিগারেট প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারিদের প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ প্রতি বছর ২.৬৫ শতাংশ হারে বেড়েছে।
এ সময়কালে সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করার ফলে প্রতি বছর গড়ে ৬,৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। কার্যকর করারোপের মাধ্যমে ১১ থেকে ২৮ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায় করা যেতো।
প্রতি বছর সিগারেট বিক্রি থেকে সরকার যতোটা রাজস্ব পেয়ে থাকে সিগারেট ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় তার চেয়ে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়কালে বিড়ীর স্তরের সিগারেটের দাম ৬ থেকে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অথচ এই সময়ের মূল্যস্ফীতির হার ৩২ শতাংশ। ফলে বলা যায়, মূল্যাস্ফীতির বিবেচনায় সিগারেট বরং আরও সহজলভ্য হয়েছে।
যদি কার্যকরভাবে সিগারেটের ওপর করারোপ করা যেতো তাহলে সিগারেট উৎপাদনকারি ও বাজারজাতকারিদের আয় বাড়তো না। বরং তাদের পাওয়া বাড়তি অর্থও সরকার রাজস্ব হিসেবে আহরণ করতে সক্ষম হতো।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বছরের মাঝামাঝিতে হলেও সব স্তরের সিগারেটের দাম বৃদ্ধি ও এগুলোর ওপর সমান হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে অর্থবছরের শুরুতেই নাগরিক সমাজের দাবির মতো খুচরা মূল্য বাড়িয়ে বর্ধিত হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করলে আরও বেশি সুফল পাওয়া যেত। যেমন অর্থবছরের শুরুতে বাজেটের প্রস্তাবনাটি পুরো বছর বহাল রাখলে ৪৪ হাজার কোটি টাকার কম রাজস্ব পাওয়া যেতো সিগারেট বিক্রি থেকে। বছরের মাঝামাঝি এসে রদবদলের সুবাদে এই রাজস্বের পরিমাণ এখন প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে বছরের শুরুতেই কার্যকর করারোপ করলে বছর শেষে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব পাওয়া সম্ভব হতো। ধূমপানের হার কমানোসহ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রেও একই রকম সুফল পাওয়া সম্ভব হতো।
এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গবেষক আব্দুল্লাহ নাদভী, অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল,জাতীয় ফুটবলার কায়সার হামিদ, শেখ মোহাম্মদ আসলাম প্রমুখ।
কালের আলো/এএএন/কেএ