আবারও বাড়তে পারে সুদহার

প্রকাশিতঃ 4:25 pm | January 13, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক,  কালের আলো:

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার (রেপো সুদ) আরেক দফা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের মুদ্রানীতিতে আসতে পারে এই ঘোষণা। এতে গ্রাহক পর্যায়ে বাড়বে ঋণের সুদ, যার প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, রেপো (ট্রেজারি বিল জমা রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার) সুদহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে। নীতি সুদহার বাড়লেও সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংকারদের ঋণে সুদহার (৪ শতাংশ) অপরিবর্তিতই থাকবে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও সরকার শতাধিক পণ্য-সেবায় ভ্যাট ও অন্যান্য কর বাড়িয়েছে। অন্যদিকে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেড অনুযায়ী ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মাঝেই নীতি সুদহার বাড়ানো হবে। এতে ঋণের সুদ আরও বাড়বে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকটের পাশাপাশি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ এখন তলানিতে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে গত নভেম্বরে নেমেছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে।

অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫০ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আড়াই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ানো ও মহার্ঘভাতার কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ সুদহারের সীমা আরোপ করা হয় ৯ শতাংশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন সুদহার কমাতে শুরু করে, তখন আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর দেশে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সুদহার নির্ধারণে প্রথমে ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করা হয়। পরে তা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সুদহার বেড়ে এখন ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণার বিষয়ে রোববার (১২ জানুয়ারি) থেকে আলোচনা শুরু করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এটি হবে বর্তমান গভর্নরের প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠকে বসেন গভর্নর।

বৈঠকে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি না কমলে নীতি সুদহার বাড়ানো হবে।

রেপো বা পুনঃক্রয় চুক্তির বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়। আবার ব্যাংক রেটও এক ধরনের নীতি সুদহার। ব্যাংক রেটে ঋণ পেয়ে থাকেন সাধারণত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জুডিসিয়ারি সার্ভিস, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এ কারণে ব্যাংক রেট বাড়লে বা কমলে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীর ঋণের খরচ বাড়ে বা কমে।

২০০৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাংক রেট ছিল ৫ শতাংশ। ২০২০ সালের জুলাইয়ে এক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যাংক রেট কমিয়ে ৪ শতাংশে নামানো হয়। ওই বছরের ৩০ জুলাই রেপোর সুদহার কমিয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ আর রিভার্স রেপো সুদহার নির্ধারণ করা হয় ৪ শতাংশ। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে ব্যাংক রেট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশে নামানো হয়েছিল।

মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় ২০২২ সালের ৩০ মে প্রথমে রেপোর সুদহার বাড়ানো হয়। রোপোর সুদহার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে টানা ১৩ দফা বাড়িয়ে সর্বশেষ গত অক্টোবরে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। স্পেশাল রেপোর সুদহার ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ থেকে এখন সাড়ে ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৪ শতাংশ ব্যাংক রেট অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

কালের আলো/এমডিএইচ