বিশ্বে সর্বোচ্চ অপরিণত শিশুর জন্ম বাংলাদেশে
প্রকাশিতঃ 6:04 pm | January 13, 2025
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:
বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অপরিণত শিশুর জন্ম হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. তাবাসুম পারভীন। তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রতিবছর সোয়া ৬ লাখের বেশি অপরিণত বয়সের নবজাতক জন্মগ্রহণ করে থাকে, যা শতকরা বিবেচনায় মোট জনসংখ্যার ১৬.২ শতাংশ।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে সেন্ট্রাল সেমিনারে ‘প্রিম্যাচুরিটি : অ্যাকসেস টু কোয়ালিটি কেয়ার এভরিহোয়ার’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি এ তথ্য উপস্থাপন করেন।
প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রি-টার্ম (অপরিণত) শিশুর জন্ম হয়ে থাকে, যা শতাংশ বিবেচনায় ১৬.২ শতাংশ। এই অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রাক-গর্ভাবস্থার যত্ন, অন্তঃসত্ত্বা মায়ের যত্ন, প্রসবকালীন যত্ন এবং অন্তত চারটি পোস্টনেটাল যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাক-গর্ভাবস্থা এবং শুরুর অন্তঃসত্ত্বা যত্নে ঝুঁকি নির্ধারণ করা উচিত যেমন কিশোর বয়সে গর্ভধারণ, একাধিক গর্ভাবস্থা, সংক্রমণ, দীর্ঘমেয়াদি রোগ, অতিরিক্ত কাজের চাপ, জীবনযাত্রার আচরণ, অপুষ্টি এবং এগুলোর চিকিৎসা করা।
তিনি বলেন, যখন প্রি-টার্ম ডেলিভারির ঝুঁকি থাকে, তখন নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট কমাতে অন্তঃসত্ত্বা মাকে কর্টিকোস্টেরয়েড দেওয়া উচিত, শিশুর নিউরোপ্রটেকশনের জন্য মাকে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট দেওয়া উচিত, অ্যান্টিবায়োটিকস এবং টোকোলাইটিক্স ব্যবহার করা উচিত। ডেলিভারির পর সব প্রি-টার্ম নবজাতককে ‘ক্যাঙারু মাদার কেয়ার’ দরকার। এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা প্রি-টার্ম জন্ম তিন-চতুর্থাংশ কমিয়ে আনতে পারি, সর্বনিন্ম খরচে অথবা কোনো খরচ ছাড়াই।
এসব অপরিণত বাচ্চা জন্মের জন্য সাধারণত কিশোরী বয়সে বিয়ে বা বাল্যবিয়ে, মায়ের অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থায় পানি আগে ভাঙা, গর্ভকালীন রক্তপাত, হঠাৎ পড়ে যাওয়া, ধূমপান বা তামাক গ্রহণ করা, মায়ের রক্তশূন্যতা ইত্যাদি বিশেষভাবে দায়ী বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক ডা. তাবাসুম পারভীন।
আরেক প্রবন্ধে নিওনেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ মান্নান বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর দেড় কোটি অপরিণত নবজাতক জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে ১০ লাখ নবজাতক বিভিন্ন জটিলতায় মারা যায়। এই সংখ্যা মোট নবজাতকের মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ। বিএসএমএমইউর নিওন্যাটাল বিভাগের এনআইসিইউতে ভর্তি নবজাতকদের ৬৪ শতাংশই অপরিণত নবজাতক। তবে বিএসএমএমইউর এনআইসিইউতে ভর্তি হওয়া নবজাতকের সুস্থতার হার ৮০ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, প্রিম্যাচুর নবজাতকদের জন্য সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক যত্নসহ ‘ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার’ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রিম্যাচুর নবজাতকদের জীবন রক্ষা ও সুস্থতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব।
পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা তার উপস্থাপিত ‘লং-টার্ম নিউরোডেভেলপমেন্টাল আউটকামস ইন প্রিম্যাচুর ইনফান্টস : এভিডেন্স-বেইজড স্ট্র্যাটেজিস ফর ফলোআপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়, যেসব শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ এর ভবিষ্যতে স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা যেমনি সেরেব্রাল পালসি, অটিজম, অতিচঞ্চলতা, মৃগীরোগ ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে অপরিণতভাবে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের জন্মের প্রথম এক বছর সমন্বিত চিকিৎসার অধীনে রাখা প্রয়োজন।
সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছার সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। সেমিনারে মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ ও শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। সেমিনার সঞ্চালনা করেন ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ (মামুন)।
কালের আলো/এএএন/কেএ