ময়মনসিংহের ২৬৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘হুম গুটি’ খেলা

প্রকাশিতঃ 11:34 pm | January 13, 2025

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি,  কালের আলো:

বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিন। গ্রামের চারিদিকে সাজসাজ রব। উচ্চ স্বরে বাজানো হচ্ছে সাউন্ড বক্স। জবাই হয়েছে শতাধিক গরু। দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয়রা আসছে দলবেঁধে। শিশুরা পড়েছে নতুন জামাকাপড়। উপলক্ষ্য একটাই আগামীকাল মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) পৌষের শেষ বিকালে জমিদার আমলের তালুক-পরগনা সীমানায় অনুষ্ঠিত হবে দুই শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী ২৬৬ তম গুটি খেলা। ২৬৬ বছরের গুটির ওজন কমেছে ১৬ কেজি। এবার খেলা হবে ২৪ কেজি ওজনের পিতলের গুটি দিয়ে।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের জমিদার আমলের তালুক-পরগনা সীমানার লক্ষীপুর গ্রামের নতুন সড়কে গুটি সংরক্ষনকারী মন্ডল পরিবারের আবুবকর সিদ্দিক দলবেঁধে গুটি নিয়ে  মাঠে উপস্থিত হওয়ার পর শুরু হবে গুটি খেলা। প্রথমে উত্তর দক্ষিন পূর্ব পশ্চিমে খেলা শুরু হলেও পরে খেলা শুরুর হয় খন্ড খন্ড অংশে। গুটি না লুকানো পর্যন্ত চলছে গুটি খেলাটি। গায়েরর জোরে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয় বলে অনেকেই এ খেলাকে হুমজিক্যালি বা হুমগুটি খেলা বলে থাকেন।

এলাকাবাসী জানান, মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশীকান্তের সাথে ত্রিশালের বৈলরের হেম চন্দ্র রায় জমিদারের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিদার আমলের শুরু থেকেই তালুকের প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ৯ শতাংশে, পরগনার প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ৬ শতাংশে।

একই জমিদারের ভূখন্ডে দুই নীতির প্রতিবাদে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। জমির পরিমাপ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসার জন্য লক্ষ্মীপুর গ্রামের বড়ই আটা নামক স্থানে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় এই গুটি খেলার। শর্ত ছিল, গুটি যে দিকে যাবে তা হবে তালুক, পরাজিত অংশের নাম হবে পরগনা। জমিদার আমলের গুটি খেলায় মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা বিজয়ী হন। তালুক পরগনার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ব্রিটিশ আমলে জমিদাররা খেলার গোড়াপত্তন। এখনো জমির পরিমাপ একইভাবে চলছে।

১৯৯৫ সাল থেকে গুটি খেলা পরিচালনা করে আসছে আবুবকর সিদ্দিক। তিনি জানান,  তার চাচা ইয়াকুব আলী মন্ডল নিজে গুটি খেলা পরিচালনা করতেন। তার চাচার বয়স বেড়ে যাওয়ায় তিনি গুটিটি তার হাতে তুলে দেন। এ পর্যন্ত কোন ঝামেলা ছাড়াই গুটি খেলা চলছে। হাজার মানুষের সমাগম হলেও কোন ঝগড়া বিবাধ হয়নি। মঙ্গলবার পৌষের শেষ বিকাল ঠিক দুইটার সময় গুটি খেলা শুরু হবে তালুক-পরগনা সীমানায়।

এক সময় গুটি খেলা হত ৪০ কেজি ওজনের গুটি দিয়ে। অতি প্রাচীনকাল থেকে পিতলের গুটি দিয়ে খেলার কারনে বছরে একবার গুটি সংস্কার করার কারনে এখন গুটির ওজন দাড়িয়েছে ২৪ কেজিতে। সাবেক বিজিবি সদস্য মামুন জানান, তার পিতার নাম আঃ কাদের। গুটি খেলার পূর্বাঞ্চলের আয়োজক ছিলেন পরে তার নামের সাথে যুক্ত গুটি কাদের।

আঃ কাদের জিলানী (৭০) জানান, গুটি খেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। নাইওরি  এসে বাড়ী ভরে যায়। আমরা তাবু করে বাইরে রাত কাটাই।

শামছ উদ্দিন (৭১) জানান, আমন ধান কাটা শেষে, বোরো ধান আবাদের আগে প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য জমিদারদের এই পাতানো খেলার আয়োজন করেন। গুটি খেলা ফুলবাড়ীয়া উপজেলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খেলা। খেলাকে ঘিরে গ্রামে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।

কালের আলো/এমডিএইচ