সমঝোতায় ‘এক’ হচ্ছে ইসলামি দলগুলো
প্রকাশিতঃ 12:37 pm | January 14, 2025
কালের আলো রিপোর্ট:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেন চালু হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। বসে নেই রাজনৈতিক দলগুলো। ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন তাঁরা। তবে আলোচনায় ঠাঁই করে নিয়েছে জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলোর ঐক্য প্রক্রিয়া। জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামি অন্য দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘এক মঞ্চ’ বা ‘প্ল্যাটফর্মে’ উঠতে চায়। জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যেই তাঁরা নিজেদের মধ্যকার সমঝোতা করার চেষ্টা করছেন।
ইসলামী দলগুলো দলের ভেতরে ও বাইরে অন্য দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এরই মধ্যে নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা আলোচনাও করেছেন। ভোটের মাঠে ঐক্য গড়তে এসব দলের নেতারা মানসিকভাবে কাছাকাছি অবস্থানেও পৌঁছে গেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা ও ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা আগামী নির্বাচনে তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামবেন এমন ইঙ্গিতও মিলেছে।
জানা যায়, গত বছর সরকারের পতনের পর ১৮ আগস্ট রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখের সঙ্গে আমিরে জামায়াতের মতবিনিময় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান। সেদিন তিনি বলেন, ‘এখন থেকে আমরা সবাই একে অপরের জন্য। সবাই সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকবো ইনশাআল্লাহ। অতীতের কোনও আচরণের জন্য আপনারা যদি সামান্য কষ্ট পেয়ে থাকেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই। আশা করি আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।’
ডা. শফিকুর রহমানের এই আহ্বানের আগে ও পরে বেশ কিছু দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াত। এসব বৈঠকে ইসলামি রাজনীতির অনুসারী দলের মধ্যে ছিল খেলাফত মজলিস ও ফরায়েজি আন্দোলন, মাজারভিত্তিক সংগঠন জাকের পার্টি, ১২ দলীয় জোটের শরিক দল হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল করিম।
এসব বৈঠকে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মে আনার আলোচনার সূত্রপাত করে জামায়াত। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কওমি মাদ্রাসার আলেম ও রাজনীতিকদেরও আমন্ত্রণ করা হয়। এরপর দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা যেকোনও ছাড়ের বিনিময়ে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ঐক্য গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া অব্যাহত রাখেন।
জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোর একটি ঐক্য প্রচেষ্টার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জামায়াত জানিয়েছে, বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। ইসলামী দলগুলোর প্রভাবশালী নেতারা বলছেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর মাঠ পর্যায়ে সাধারণ মানুষের চাহিদা ইসলামপন্থি দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হোক। স্বাধীনতার ৫৩ বছর তিনটি দল দেশ পরিচালনা করেছে। মানুষ তিনটি দলকে দেখেছে। এখন ইসলামপন্থিদের ক্ষমতায় দেখতে চায়। বড় দলগুলোর পারফরম্যান্স দেখে তারা আশাহত হয়েছে।’
একটি দলের অন্যতম একজন নেতার ভাষ্য, ‘বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইসলামী ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘এক মঞ্চ’ বা ‘ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মে’ আনা যায় কিনা, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসায় ইসলামপন্থি দলগুলোর একটি বৈঠকও হয়েছে। সেখানে দলের আমির, নায়েবে আমিরসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থেকে জোট গড়ার জোরালো প্রস্তাব দেন।’
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার একবার বলেছিলেন, ‘ইসলামি দলগুলোর ঐক্য বা এক প্ল্যাটফর্মে আসার প্রাথমিক আলোচনা চলছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। মানসিকভাবে সবাই একমত। ইসলামি দলগুলোর ঐক্য প্রায় কাছাকাছি এসে গেছে।’
নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন পরিচয় দিলেও ইসলামি দলগুলোর রাজনৈতিক আলোচনায় বরাবরই সামনে চলে আসে হেফাজতে ইসলাম। নির্বাচন বা জোট ইস্যুতে এখনো তাদের সাংগঠনিক কোনো তৎপরতা নেই। অরাজনৈতিক সংগঠন হওয়ায় এর ব্যানারে কোনো নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও সুযোগ নেই। তবে অন্য কোনো ইসলামি দল থেকে হেফাজতের কোনো নেতার প্রার্থী হতেও বাধা নেই। তবে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ বা ইসলামী ঐক্যজোট ছাড়া অন্য কোনো দল থেকে কেউ প্রার্থী হলে সংগঠনটির সমর্থন মিলবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
তবে সদ্যই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী। মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এই নায়েবে আমির বলেছেন, ‘মনে হয় নির্বাচনি একটি সমঝোতা বা জোট হবে। বিক্ষিপ্তভাবে যা শুনছি, বুঝতে পারছি।’ এই ঐক্যে জামায়াত থাকছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াত সহকারেই হবে। আমাদের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐক্য দ্বারপ্রান্তে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা এখনও বলার সময় আসেনি। সরকার নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশ করার পর এসব প্রসঙ্গ আসবে।’
কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে