সহসাই দেশে ফিরছেন না তারেক রহমান
প্রকাশিতঃ 10:50 am | January 16, 2025
কালের আলো রিপোর্ট:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর প্রথমবার তারেক রহমানের চাঁদাবাজির চার মামলা বাতিল করে দেন হাইকোর্ট। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর চলতি বছরের রোববার (৫ জানুয়ারি) শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে, কিন্তু এই টাকা কোথায় গেছে তার কোনো উৎস মেলেনি। আইনজীবী সর্বোচ্চ আদালতকে জানান, এটি সেই মামলা, যে মামলায় গ্রেফতার করে কোমরে হাড় ভেঙে ফেলা হয়েছিল তারেক রহমানের। পরে চার মামলা বাতিলের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, আরও ১৮ থেকে ১৯টি মামলা খারিজ হলে সব মামলা মুক্ত হবেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় সবাই, তবে মামলার ওপর তা নির্ভর করছে না। দলটির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, শিগগির তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন। ২০২৫ সালের শুরুতে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, কিছু জটিল মামলা নিষ্পত্তি হলেই দেশে ফিরবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে। তবে ইতোমধ্যে মামলার বাধা অনেকটা কেটে গেলেও খুব শিগগির তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না। তবে তাঁর সব নজর এখন যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন মা, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতাকে ঘিরেই। এই চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
তাছাড়া এখান থেকে চিকিৎসার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও যেতে পারেন। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। ফলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষ হওয়া পর্যন্ত বড় ছেলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম। বিএনপি নেতারা বলেছেন, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে স্বনামধন্য একটি হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন চিকিৎসাধীন। মায়ের সব কিছু দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হচ্ছে তাকে। এজন্য তার দেশে ফিরতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।
জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা সারা দেশে এখনও প্রায় ১৮ থেকে ১৯টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সবশেষ তত্ত্বাবধায়ক ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাদী বা সাক্ষীদের অনুপস্থিতি, এমনকি কোনও ধরনের তথ্য-প্রমাণ না থাকায় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাগুলোর নিষ্পত্তিতে জোর দিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। মামলাগুলোর অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রায় ১৮ থেকে ১৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সাজার মামলা রয়েছে। এই তিনটির মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও মানি লন্ডারিংয়ের দুটি মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আরেকটি সম্পদের হিসাব বিবরণী মামলা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও সারা দেশে ১৪ থেকে ১৫টি মামলা আছে, যেগুলো মানহানির মামলা। অন্যান্য মামলার মতো এই মানহানি মামলাও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। এর বাইরে যেসব মামলা ছিল—সেগুলোতে তিনি খালাস পেয়েছেন। মামলার উল্লেখযোগ্য দিক হলো-মামলাগুলো ২০১৪-১৫ সালে দায়ের করা হয়েছে। এরপর থেকে যারা বাদী তারা এসব মামলার কোনও খোঁজখবর নেননি। আইনে নিয়ম রয়েছে-মামলা হওয়ার পরে সাক্ষী আনতে হয়, তথ্য-প্রমাণ দাখিল করতে হয়। এগুলো কোনও কিছু করা হয়নি। যে কারণে আদালত যখন দেখছেন, মামলার বাদী নেই বা মামলার বাদী মারা গেছেন, কোনও তথ্য-প্রমাণ নেই, তখন আদালত মামলাগুলো খারিজ করে দিচ্ছেন। মূলত ২০১৪-১৫ সালে মানহানি মামলাগুলো হয়েছে। সেগুলো আদালত নিষ্পত্তি করবে। আর যে তিনটি মামলা সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আছে সেগুলোও আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।’
মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে কোনও ধরনের নির্দেশনা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, তারেক রহমানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে প্রচলিত আইন-আদালত মেনে আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার।
মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে কতদিন সময় দরকার হতে পারে, এ প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমানের অন্যতম এই আইনজীবী বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। সুতরাং, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে যত সময় প্রয়োজন, সে সময়টুকুই প্রয়োজন হবে। আনুমানিক সময়টা বলা সম্ভব না। কারণ, আইনি প্রক্রিয়াটি অনুমাননির্ভর নয়। আমরা চাচ্ছি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে। এই নিষ্পত্তি মূলত আদালতের ওপর নির্ভর করছে যে কতটুকু সময় লাগবে বা লাগবে না। আমার বিশ্বাস করি, এসব মামলার কোনও আইনগত ভিত্তি নেই।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘মা ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে আসবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না তার জনপ্রিয়তাকে।’
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছেন আপাতত তাকে নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। এছাড়া তিনি নিজেও পুরোপুরি সুস্থ নন। পরিবেশ পরিস্থিতি চিন্তা করেই সবকিছু ব্যবস্থা করা হবে। তার বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সমস্যা নয়। অধিকাংশ মিথ্যে মামলা ইতোমধ্যে খালাস হয়ে গিয়েছে। যে পরিমাণে মামলা ছিল, সেই তুলনায় এখন যা রয়েছে তা কিছুই নয়। এখন ম্যাডামের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন, উপযুক্ত সময় যখন আসার সিদ্ধান্ত হবে তখনই দেশে চলে আসবেন। তিনি দ্রুতই দেশে আসবেন ইনশাআল্লাহ।’
কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে